গঙ্গাসাগর, 14 ফেব্রুয়ারি: বজবজ থেকে ফ্লাইঅ্যাশ নিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ল বাংলাদেশের জাহাজ। বাংলাদেশ যাওয়ার সময় বঙ্গোপসাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপের কাছে চড়ে ধাক্কা মারল জাহাজটি ৷ ঘটনার জেরে ওপার বাংলার জাহাজটি ডুবে যেতে থাকে ৷ খবর পেয়েই সাগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ডুবন্ত জাহাজ থেকে 12 জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেন সুন্দরবন পুলিশ জেলার সাগর থানার পুলিশকর্মীরা।
সাগর গ্রামীণ হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার পর তাঁদের সাগর থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে সকলের সুস্থ আছেন বলে জানা গিয়েছে। জাহাজটি মুহূর্তের মধ্যে হুগলি নদীর মোহনায় ডুবে যায়। ফলে টনটন ফ্লাইঅ্যাশ জলে মিশে গিয়েছে। সূত্রের খবর, এমভিসি ওয়ার্ল্ড নামের ওই জাহাজটি ছাই নিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছিল। ফ্লাইঅ্যাশ বোঝাই জাহাজটি বজবজ থেকে রওনা দেয় ৷ বৃহস্পতিবার বিকেলে মুড়িগঙ্গা হয়ে যাওয়ার পথে ঘোড়ামারা দ্বীপের কাছে থাকা একটি চড়ে ধাক্কা মারে ৷
পুলিশি তৎপরতা
জাহাজ ডুবে যাওয়ার খবর প্রথম পৌঁছয় সুন্দরবন পুলিশ জেলার সাগর থানায় ৷ থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অর্পণ নায়েকের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ৷ ডুবন্ত জাহাজ থেকে 12 জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়। নদীতে ভাটার টানে জল কমে গিয়েছিল অনেকটাই। সেসময় জাহাজটি সাগরের পারে আসতে গিয়ে চড়ে ধাক্কা খায়। তাতেই ডুবে যেতে থাকে জাহাজটি ৷ পুলিশের তৎপরতায় তাদের উদ্ধার করা যায়।
উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের পরিচয় জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। তাঁদের বাংলাদেশের কোথায় বাড়ি, কী কাজ করেন ? তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে । ডুবন্ত জাহাজটিকেও কীভাবে সরানো যায় তা নিয়েও শুরু হয়েছে চর্চা ৷ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে উপায় খুঁজছে পুলিশ। পাশাপাশি কেন ঘটনাটি ঘটল, তারও তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। কোন সংস্থার থেকে তাঁরা ফ্লাইঅ্যাশ কিনেছিলেন সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জলে দূষণ
এই ঘটনার ফলে দূষিত হয়েছে হুগলি নদীর জল। ফ্লাইঅ্যাশের পাশাপাশি জাহাজে থাকা জ্বালানি তেল মিশে গিয়েছে জলে। এর ফলে দূষিত হয়েছে নদীর জল। এ বিষয় কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী ইউনিয়নের সম্পাদক ও পরিবেশ প্রেমিক সতীনাথ পাত্র জানান, গতকালকের বাংলাদেশি জাহাজ হুগলি নদীর মোহনায় ডুবে যাওয়ার ফলে টনটন ফ্লাই অ্যাশ হুগলি নদীর জলে মিশে গিয়ে মাছের ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও ফ্লাই অ্যাশের থেকে জাহাজে থাকা জ্বালানি তেল জলে মিশে যাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি দূষিত হয়েছে জল।
মৎস্যজীবীদের সমস্যা
মোহনায় বাংলাদেশ জাহাজ ডুবে যাওয়ার কারণে মৎস্যজীবীদেরও যাতায়াতের ক্ষেত্রে অনেকটাই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। জাহাজে মজুদ থাকা ডিজেল নদীর জলে মিশে যাওয়ার কারণে মাছেদের যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তেমনি সামুদ্রিক যে সকল পাখি রয়েছে সে তাদেরও প্রবল ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। মোহনায় ঘটনা ঘটার ফলে জাহাজে থাকা যে জ্বালানি তেল সেই তেল সমুদ্রেতেও মিশে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে মাছেদেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে। মোহনার ওই এলাকায় মাছেরা অন্যত্র সরে যাবে এর ফলে মৎস্যজীবীদেরও সমস্যা হবে। ভাটা থাকার কারণে শুক্রবার দুপুর থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই জাহাজটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত জানুয়ারি মাসে ব্যান্ডেল থার্মল পাওয়ার স্টেশনের ছাইগাদা থেকে ছাই নিয়ে দেশে ফিরছিল বাংলাদেশি কার্গো জাহাজ এমভি বছিরউদ্দিন কাজি। সেই সময় হুগলির বাঁশবেড়িয়ার গঙ্গায় ডুবতে শুরু করে সেটি। এরপরই স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জাহাজের ক্রু ৷ সেবারও ডুবন্ত জাহাজ উদ্ধারে হাত লাগিয়েছিল এপার বাংলা। এই ঘটনাতেও জাহাজের কর্মীরা নিরাপদেই ছিলেন বলে জানা যায়। আবারও ঘটল একই ঘটনা।