আগরতলা, 28 ডিসেম্বর: জীবনের 'বন্ধুর পথ' অতিক্রম করে সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট পাশ করেছেন মধুরিমা দত্ত ৷ সর্বভারতীয় পরীক্ষায় তাঁর ব়্য়াঙ্ক 2 লক্ষ 79 হাজার 66 এবং রাজ্যে তাঁর ব়্যাঙ্ক 295 ৷
মধুরিমার এই বন্ধুর যাত্রাপথের সূচনা 2016 সালে ৷ তখন তার বয়স মাত্র 12 ৷ বেসরকারি একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির মেধাবি ছাত্রী ছিল মধুরিমা ৷ সেই সময় তাঁর নন-হজকিন'স লিম্ফোমা ধরা পড়ে ৷ সেই শুরু জীবনযুদ্ধ ৷ তার মধ্যেও নিজের স্বপ্নের কথা ভোলেনি মধুরিমা ৷ এই সাফল্যের দিনে ইটিভি ভারতের কাছে সেই চ্যালেঞ্জিং দিনগুলির স্মৃতিচারণ করলেন তাঁর মা রত্না দত্ত ৷
তিনি বলেন, "সেটা একটা ভীষণ ওঠাপড়ার সময় ছিল ৷ চিকিৎসার জন্য আমাদের মুম্বইয়ে চলে যেতে হয়েছিল ৷ সেখানে আমরা 5 বছর ছিলাম ৷ প্রথম দিকে আমরা ওকে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে গিয়েছিলাম ৷ আমার বড় মেয়ে হৃতুরিমা ত্রিপুরাতে ওর বাবার সঙ্গে থেকে গিয়েছিল ৷ সেখানে ও পড়াশোনা করছিল ৷ আর আমাকে মধুরিমাকে নিয়ে মুম্বইয়ে থাকতে হল ৷ প্রথম দিকে আমার ভাইও আমাদের সঙ্গে থাকত ৷ পরে সবকিছুই আমায় একা সামলাতে হয়েছে ৷"
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মধুরিমা দত্ত (ইটিভি ভারত) মধুরিমার এই যাত্রাপথ প্রসঙ্গে মধুরিমার মা জানান, ওই অল্প বয়সেই মধুরিমাকে কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন এবং বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের মতো কঠিন চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে ৷ তাঁর বড় মেয়ে অর্থাৎ মধুরিমার দিদি হৃতুরিমা বোনকে বোম ম্যারো দান করে ৷ এত কিছু সত্ত্বেও মধুরিমার ক্যানসার আরও ছড়িয়ে পড়ছিল ৷ টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং জ্যাসলোক হাসপাতালের চিকিৎসকরা এরপর মধুরিমাকে আমেরিকার ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা করেন ৷ ভারতে প্রথম কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক রোগীর উপর ওই ওষুধ প্রয়োগ করা হল ৷ মা রত্না বলেন, "এই সময় আমরা প্রবল আর্থিক টানাটানির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম ৷ কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকরা আমাদের প্রতিটি পদে সাহায্য করেছিল ৷"
এই লড়াইয়ের মধ্যেও ছোট্ট মধুরিমা তার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছিল ৷ সে চিকিৎসক হতে চেয়েছিল ৷ আর এই ক্ষেত্রে তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বড় ভূমিকা পালন করেছিল তার স্কুল ৷ এছাড়া মধুরিমা একটি অনলাইন সংস্থার অবদানের কথাও উল্লেখ করেছেন ৷ তিনি বলেন, "এমনিতেই নিট যে কোনও পড়ুয়ার কাছে চ্যালেঞ্জ ৷ কিন্তু আমার জন্য আরও বেশি কঠিন ছিল ৷ বছরের পর বছর ধরে চিকিৎসার ফলে আমার শরীর একেবারে ভেঙে পড়েছিল ৷ প্রতিদিন আমায় নিত্যনতুন সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে ৷ কখনও ঠান্ডা লাগা, কখনও কাশি, অন্যসব শারীরিক সমস্যা লেগেই থাকত ৷ এর মধ্যে দিয়েই আমায় পড়াশোনার প্রস্তুতি নিতে হত ৷"
অন্য নিট পরীক্ষার্থীদের জন্য তাঁর বার্তা, "মানসিক চাপ যেন কোনও ভাবেই আপনাকে গ্রাস করতে না পারে ৷ স্থির ও শান্তভাবে আপনি আপনার সবচেয়ে ভালোটা দেওয়ার চেষ্টা করবেন ৷ নিট যতটা জ্ঞানের পরীক্ষা, ততটাই ধৈর্য ও পরিশ্রমের পরীক্ষাও ৷"