72 বছরে প্রথম! রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ধনকড়ের অপসারণ চেয়ে অনাস্থা প্রস্তাব 'ইন্ডিয়া'র - NO CONFIDENCE AGAINST VP DHANKHAR
সংসদের উচ্চকক্ষে জোটবদ্ধ হয়েছে 'ইন্ডিয়া' ৷ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড় পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন । এই অভিযোগে অনাস্থা প্রস্তাব আনল বিরোধীরা ৷ রইল বিস্তারিত ৷
নয়াদিল্লি, 10 ডিসেম্বর: রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের অপসারণের দাবিতে সংসদের উচ্চকক্ষে আস্থা ভোটের নোটিশ দিল বিরোধী দলগুলি ৷ চেয়ারমান রাজ্যসভার কাজকর্ম পরিচালনায় পক্ষপাত করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা সাংসদরা ৷
মঙ্গলবার কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ এবং নাসির হুসেন উচ্চকক্ষের মহাসচিব পিসি মোদির কাছে এই নোটিশ জমা দেন ৷ সূত্রের খবর, 'ইন্ডিয়া' ব্লকের কংগ্রেস, আরজেডি, তৃণমূল, সিপিআই, সিপিআই-এম, জেএমএম, আপ, ডিএমকের সাংসদরা এই নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন ৷
যদিও কংগ্রেসের কয়েকজন শীর্ষ নেতা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে আনা আস্থা ভোটের নোটিশটিতে স্বাক্ষর করেননি ৷ সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সংসদীয় কমিটির চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধি এবং বিভিন্ন বিরোধী দলের কয়েকজন সংসদীয় দলনেতা এই তালিকায় রয়েছেন বলে সূত্রে জানা গিয়েছে ৷
রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এই প্রথম, জানান কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ ৷ তিনি বলেন, "বিগত 72 বছরে এই প্রথম যে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিরোধীরা অনাস্থা আনল ৷ তাহলে বোঝাই যাচ্ছে পরিস্থিতি কতটা খারাপ হয়েছে ৷ তিনি যেভাবে রাজ্যসভা চালাচ্ছেন, তাতে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনতে বাধ্য হয়েছে ৷"
বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তিনি আরও বলেন, "সংসদের দুই কক্ষে সচল থাকুক, এটা সরকার একেবারেই চায় না ৷ এটা পরিষ্কার ৷ গতকাল সংসদীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু নিজে চেয়ারম্যান ধনকড়কে বলেছেন, লোকসভায় আদানি ইস্যুতে গোলমাল হচ্ছে ৷ এরকম হলে আমরাও রাজ্যসভা চলতে দেব না ৷ সেখানে জেপি নাড্ডাও ছিলেন ৷ এমনটা এই প্রথম শুনলাম ৷ চেয়ারম্যানও এই বিষয়টিকে সমর্থন জানাচ্ছেন ৷ তাঁর নিরপেক্ষ থাকা উচিত ৷"
সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয় 25 নভেম্বর ৷ প্রথম থেকেই আদানি-সহ একাধিক ইস্যুতে আলোচনার দাবিতে উত্তাল হয় সংসদের দুই কক্ষ ৷ কংগ্রেসের নেতৃত্বে আনা এই নোটিশটি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন কংগ্রেসের মিডিয়া ইনচার্জ জয়রাম রমেশ ৷ তিনি জানান, "রাজ্যসভার সম্মানীয় চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা ছাড়া ইন্ডিয়া শিবিরের সদস্য দলগুলির কাছে আর কোনও উপায় নেই ৷ তিনি অত্যন্ত একপেশে ভাবে রাজ্যসভা পরিচালনা করছেন ৷ 'ইন্ডিয়া'র দলগুলির কাছে এটা খুবই বেদনাদায়ক ৷ সংসদীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা এই পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছি ৷"
কী বলছে সংবিধান ?
সংবিধানের অনুচ্ছে 67(বি) অনুযায়ী, রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদরা প্রস্তাবের মাধ্যমে উপ-রাষ্ট্রপতিকে তাঁর কার্যালয় থেকে অপসারণ করতে পারেন ৷ সংসদের উচ্চকক্ষ তো বটেই, নিম্নকক্ষের সাংসদদেরও এই প্রস্তাবে সম্মতি জানাতে হবে ৷ দুই কক্ষের সর্বসম্মতিক্রমে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা সম্ভব ৷ এর জন্য ন্যূনতম 14 দিন আগে এই নোটিশ দিতে হবে ৷
সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শেষ হবে আগামী 20 ডিসেম্বর ৷ হাতে রয়েছে মাত্র 10 দিন ৷ অন্যদিকে উচ্চকক্ষের 245টি আসনের মধ্যে এনডিএ জোটের কাছে রয়েছে 124টি ৷ সুতরাং হাতে সময় 14 দিনের কম থাকায় অনাস্থা প্রস্তাবের উপর আলোচনা নাও হতে পারে ৷ অন্যদিকে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে বিরোধীরা ৷ তাই পরাজয় নিশ্চিত জেনেও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে বিরোধী শিবির ৷
অনাস্থা প্রসঙ্গে বিরোধীদের বক্তব্য
এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ এবং রাজ্যসভায় দলের উপনেতা সাগরিকা ঘোষ বলেন, "সবাই এই নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন ৷ উপ-রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব আনা হয়েছে ৷ আমাদের কাছে জেতার যথেষ্ট সংখ্যা নেই ৷ কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য এটা একটা শক্তিশালী বার্তা ৷ এই লড়াই কোনও ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নয়, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৷"
এর আগে সংসদের বাদল অধিবেশনেও বিরোধীরা চেয়ারম্যান ধনকড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার তোড়জোড় করেছিল ৷ সেবার অধিবেশন হওয়ার কথা ছিল 12 জুলাই থেকে অগস্টের 12 তারিখ পর্যন্ত ৷ কিন্তু একদিন আগেই অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করেন উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড় ৷
বিরোধীদের দাবি, সেবার উপ-রাষ্ট্রপতিকে অপসারিত করতে 80 জন বিরোধী সাংসদ নোটিশে স্বাক্ষর করে ফেলেছিলেন ৷ এদিকে একদিন আগেই সংসদ মুলতুবি হয়ে যাওয়ায় বিরোধীরা প্রস্তাব আনতে পারেননি ৷ ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে এর আগে রাজ্যসভার কোনও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এমন নোটিশ আনার ঘটনা ঘটেনি ৷ তবে ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল 2020 সালে ৷
রাজ্যসভায় বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়ের মনোমালিন্য নতুন কিছু নয় ৷ সম্প্রতি সেই আগুনে ঘি ঢালে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে জর্জ সোরসের যোগাযোগের বিষয়টি ৷ চেয়ারম্যান ধনকড় সরকার পক্ষের সাংসদদের এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেন ৷ এদিকে তিনি বিরোধী দলগুলির আলোচনার দাবি মেনে নেননি ৷ এতে চটে যান কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির সাংসদরা ৷