কেন মহাকুম্ভে বিপর্যয় ? সম্ভাব্য 5 কারণ, ধর্মীয় গুরুত্বের জন্যই কি সঙ্গমে জনসমুদ্র

প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে পদপিষ্টের ঘটনার পর অমৃতস্নান সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয় ৷ তবে বুধবার বেলা 11টায় ফের শুরু হয় পুণ্যস্নান ৷

প্রয়াগরাজ, 29 জানুয়ারি: মৌনী অমাবস্যার পুণ্যতিথিতে প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে মর্মান্তিক ঘটনা ৷ অমৃতস্নান শুরু হতেই পদপিষ্ট হয়ে অন্তত 17 জনেরও বেশি ভক্তের মৃত্য়ুর খবর সামনে এসেছে ৷ আহত 50 জনেরও বেশি ৷ মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ৷ ঘটনাটি ঘটার মুহূর্তের মধ্য়ে পুণ্য়স্নান সাময়িকভাবে স্থগিতের নির্দেশ দেন আখড়ার সাধুরা ৷ তবে পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হতেই বুধবার বেলা 11টায় ফের শুরু হয়েছে 'শাহি স্নান' ৷

কিন্তু, কেন ঘটল এই বিপর্যয় ? প্রথম থেকেই অনুমান করা হয়, বুধবারের এই বিশেষ দিনে প্রায় 10 কোটি পুণ্যার্থীর সমাগম হতে চলেছে ৷ তাহলে কী সেই মতো ব্যবস্থা করা হয়নি ? এই মুহূর্তে সেই সমস্ত প্রশ্ন ঘুরছে মানুষের মনে ৷

দুর্ঘটনার প্রধান 5টি সম্ভাব্য কারণ...

1. মেলায় আগত ভক্তদের জন্য বেশকয়েকটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল প্রশাসনের তরফে ৷ তবে এদিনের অমৃতস্নানের আগে গত 3 দিন বন্ধ রাখা হয় অধিকাংশ সেতু ৷ সেই কারণে ঝুঁসি ও নৈনির অভিমুখে যাওয়া ভক্তদের সঙ্গম স্নান সেরে ফিরতে সমস্যা হয় ৷ ফলে অল্প সময়ের মধ্য়ে নির্দিষ্ট একটি এলাকার মধ্য়ে কয়েক কোটি ভক্তের ভিড় জমে ৷

2. এই বছর মেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নজরে রাখার জন্য এআই ক্যামেরা ব্যবহার করা হয় বলে জানা গিয়েছে ৷ তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে সেই সমস্ত ক্যামেরাও ৷ অভিযোগ উঠেছে, দুর্ঘটনাটি রাতে ঘটায় সেই সময় খেয়াল করতে পারেননি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরাও ৷ দুর্ঘটনার পর পুলিশ আধিকারিকরা অ্যাম্বুল্যান্স ও গাড়ি নিয়ে ছুটে আসেন ৷

3. পদপিষ্টের ঘটনাটি ঘটে সঙ্গম এলাকায় ৷ এই এলাকায় আসা ও যাওয়ার জন্য একটাই রাস্তার ব্যবহার করা হয়েছে ৷ একটি রাস্তা হওয়ায় দুর্ঘটনার পর পুণ্যার্থীরা পালানোর সুযোগ পাননি ৷ ফলে, ক্ষতির পরিমাণ এতটা বেশি ৷

4. পদপিষ্টের ঘটনার পর উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে 'ভিআইপি কালচার'এর অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস ৷ দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সেই প্রসঙ্গও উঠে এসেছে ৷ বলা হচ্ছে, মেলায় ক্রমাগত ভিআইপি অতিথির সমাগম হওয়ায় বিশ্রামের সময় পাননি পুলিশ আধিকারিকরা ৷ ফলে, ভিড়ের ব্যবস্থাপনা সামলাতেও খানিক বেগ পেতে হয় পুলিশ প্রশাসনকে ৷

5. মৌনী অমাবস্যায় ভক্তদের জনজোয়ার সামলাতে আগে থেকেই সঙ্গম এলাকায় ট্রাক চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় প্রশাসনের তরফে ৷ ফলে, রাস্তার ধারেই দোকান খুলে বসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ৷ আর সেই কারণে পদপিষ্টের ঘটনার সময় অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালাতে পারেননি ৷

সঙ্গম এলাকায় কেন ভিড় হল ?

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই সঙ্গম এলাকায় ভিড় জমাতে শুরু করেন ভক্তরা ৷ রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৌনী অমাবস্যার পুণ্যতিথিতে স্নানের জন্য় ভিড় আরও বাড়তে থাকে ৷ মহাকুম্ভের জন্য 41টি ঘাট প্রস্তুত করা হয় ৷ তবে সঙ্গমের লক্ষাধিক ভক্তের জমায়েতের পিছনে বহু ধর্মীয় কারণ রয়েছে ৷

প্রথমত: কথিত আছে, এই সঙ্গম এলাকায় মিলিত হয়েছে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদী ৷ বাকি ঘাটের থেকে এই ঘাটের আয়তন তুলনামূলক বড় ৷ নৌকায় করে এই সঙ্গম এলাকায় গেলে তিন নদীর মিলনের দৃশ্য় দেখা যায় ৷ সেকারণে এই ঘাটে স্নান করা হলে অধিক পুণ্যলাভ হয় বলে মনে করেন ভক্তরা ৷

দ্বিতীয়: কথিত আছে, সমুদ্রমন্থনের সময় অমৃত কলশের অমৃত কুম্ভের এই স্থানেও পড়েছিল ৷ তাই অমৃতস্নানের জন্য এই স্থানটিকে প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নেন ভক্তরা ৷

তৃতীয়: কুম্ভে একাধিক ঘাট থাকা সত্ত্বেও পুণ্যস্নানের জন্য এই ঘাটকেই বেছে নেন সকলে ৷ হিন্দু শাস্ত্রমতে এই সঙ্গম এলাকায় স্নান করলে মোক্ষলাভ হয় ৷ আর সেই মোক্ষলাভের আশায় এই ঘাটে স্নানের জন্য ভিড় জমান সাধু, ঋষি, আখড়ার নাগা সন্ন্যাসী ও সাধারণ ভক্তরা ৷

পড়ুন:ব্যারিকেড ভেঙে যাওয়াতেই পদপিষ্টের ঘটনা, জানালেন যোগী পড়ুন:মহাকুম্ভে পদপিষ্টের ঘটনায় যোগী সরকারকে আক্রমণ রাহুলের