পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

প্রত্যেকেই সমান ! জেলে জাতপাত মেটাতে যুগান্তকারী রায় সুপ্রিম কোর্টের - Supreme Court

জেলবন্দিরাও মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী ৷ তাদের জাতের ভিত্তিতে খাটো করে দেখা যাবে না ৷ শ্রমের বণ্টনও জাতপাতের উর্ধ্বে উঠে করতে হবে ৷ জানাল সুপ্রিম কোর্ট...

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 4 hours ago

Published : 4 hours ago

Updated : 3 hours ago

Supreme Court
যুগান্তকারী রায় সুপ্রিম কোর্টের (ইটিভি ভারত)

নয়াদিল্লি, 4 অক্টোবর: জাতি বৈষম্যের শিকার জেলবন্দিরা ৷ তা ঘোচাতেই এবার তৎপর সুপ্রিম কোর্ট ৷ বৃহস্পতিবার সংবিধানের অনুচ্ছেদ 17 নির্দেশ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, প্রত্যেকে সমান অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে ৷ কোনও ব্যক্তির অস্তিত্ব, স্পর্শ বা উপস্থিতির সঙ্গে কোনও কলঙ্ক যুক্ত হতে পারে না ৷ জেলবন্দিদের মর্যাদা না-দেওয়া ঔপ্যনিবেশিকতাবাদ ৷ যা স্বাধীনতার পরেও রয়ে গিয়েছে ৷

ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ 14, 15, 17, 21, এবং 23 লঙ্ঘন করার কারণে রাজ্য কারাগারের ম্যানুয়ালগুলির বিভিন্ন নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুকন্যা শান্তার একটি আবেদনের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ আদালত 148-পৃষ্ঠার রায় দিয়েছে । ওই রায়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে জাতিগত বৈষম্য মেটাতে কারাগারের ম্যানুয়ালগুলিতে পরিবর্তন আনার নির্দেশ দিয়েছে ৷ শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে জেলবন্দিদের রেজিস্টারে ‘জাত’ অংশটি এবং বিচারাধীন অথবা শাস্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের জাত সম্পর্কে যে কোনও রেফারেন্স মুছে ফেলতে হবে ।

এক শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে জাতপাতের চর্চা বা কুসংস্কার যাচাই করে দেখা অস্বীকার করা এই ধরনের অভ্যাসকে প্রশ্রয় দেয় । প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, ‘‘"যদি এই ধরনের অভ্যাসগুলি প্রান্তিক মানুষদের নিপীড়নের উপর ভিত্তি করে হয়, তাহলে এই ধরনের অভ্যাসগুলিকে বজায় রাখা যাবে না । সংবিধানে জাতিগত বৈষম্য এবং অস্পৃশ্যতার অবসানের কথা (অনুচ্ছেদ 17, Abolition of Untouchability) স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে ।’’ একই সঙ্গে বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারকে তিন মাসের মধ্যে মডেল জেল ম্যানুয়াল 2016 এবং মডেল প্রিজনস অ্যান্ড কারেকশনাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট 2023-এ জাত-ভিত্তিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করার নির্দেশ দিয়েছে ।

সর্বোচ্চ আদালত এদিন বলেছে, ‘‘মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে, জেলবন্দি আসামিরও । বন্দিদের সঠিক মর্যাদা না-দেওয়া ঔপ্যনিবেশিকতার প্রতিফলন ৷ যেখানে নিপীড়ক ব্যবস্থাগুলিকে (কারাগার) অমানবিক এবং অবনমিত করার জন্য বানানো হয়েছিল । সাংবিধানিক যুগের কর্তৃত্ববাদী শাসনগুলি কারাগারগুলিকে কেবল বন্দিস্থান হিসাবে নয়, বরং আধিপত্যের হাতিয়ার হিসাবে দেখেছিল ৷ আদালত সংবিধান দ্বারা আনা পরিবর্তিত আইনি কাঠামোর উপর দৃষ্টি রেখে স্বীকৃতি দিয়েছে যে বন্দিরাও সঠিক মর্যাদার অধিকারী ৷’’

আরও পড়ুন:

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় শুনানি চলাকালীন বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর 75 বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা সমাজ থেকে জাতিগত বৈষম্যের কুফল নির্মূল করতে পারিনি । আমাদের অবিলম্বে প্রাতিষ্ঠানিক অভ্যাসগুলি দূর করতে হবে ৷ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাগরিকদের প্রতি বৈষম্য বা তাঁদের প্রতি অ-সহানুভূতিশীল হওয়া অপরাধ । আমাদের পর্যবেক্ষণ করে সমস্ত জায়গায় পদ্ধতিগত বৈষম্য চিহ্নিত করতে হবে । সর্বোপরি, জাতপাতের সীমানা ইস্পাতের মতো কঠিন ৷ তবে এটি এতটাও শক্তিশালী নয় যে সংবিধানের শক্তি দিয়ে তা ভেঙে ফেলা যাবে না ৷” পাশাপাশি অনুচ্ছেদ 21-এর প্রাসঙ্গিকতাও উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি ৷ তিনি বলেন, ‘‘জাতিগত কুসংস্কার এবং বৈষম্য একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের বৃদ্ধিকে বাধা দেয় ৷ তা মেটাতে অনুচ্ছেদ 21 প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের জীবনের অধিকারের অংশ হিসাবে বর্ণ, জাত-সহ বিভিন্ন ভেদাভেদের উর্ধে উঠে তাঁকে অধিকার প্রদান করে ৷’’

প্রধান বিচারপতির কথায়, জাতি-ভিত্তিক বৈষম্যের শিকার না-হয়ে সমতা, সম্মান এবং মর্যাদার পরিবেশ একজন মানুষের বিকাশে অনুঘটকের কাজ করে ৷ যদি জেলবন্দিরা অবমাননাকর শ্রম বা অন্যান্য নিপীড়নের শিকার হয়, তবে অনুচ্ছেদ 23 জেলের ভিতরেও প্রয়োগ করা যেতে পারে ৷ বেঞ্চ জানিয়েছে, বিভিন্ন জেল ম্যানুয়ালের বেশ কয়েকটি নির্দেশ কিছু নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের শ্রমের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে । এই সম্প্রদায়গুলিকে শুধুমাত্র এক ধরণের শ্রম করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে । তা মেটাতেই এবার তৎপর সুপ্রিম কোর্ট ৷

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এই ধরনের বিধানগুলি প্রায়ই জেল ব্যবস্থার মধ্যে শ্রমের একটি অন্যায্য বন্টনের দিকে নিয়ে যায় ৷ নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা সম্মানজনক কাজগুলি করে ৷ যখন প্রান্তিক সম্প্রদায়ের লোকেরা অন্যান্য৷ কাজ করতে বাধ্য হয় ৷ এই ধরনের শ্রম নিয়োগ করা হয় তাদের বর্ণ ও জাতের ভিত্তিতে ৷ অনুচ্ছেদের 23-এর অধীনে নিপীড়িত সদস্যদের (প্রান্তিক মানুষদের) বেছে বেছে সামান্য কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না ।’’

আরও পড়ুন:

প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ওই রায়ে বলেছে, ‘‘অনুচ্ছেদ 23 (1) সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে মৌলিক অধিকার প্রদান করে । এর লক্ষ্য মানব পাচার, বেগার খাটানো এবং অন্যান্য জোরপূর্বক শ্রম নিষিদ্ধ করা । অনুচ্ছেদ 15(2) এবং 17-এর মতো, এটিও রাষ্ট্র ও অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠন, উভয়ের বিরুদ্ধে প্রয়োগযোগ্য ।’’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘মডেল প্রিজন ম্যানুয়াল 2016 বেশ কয়েকটি নির্দেশে জেলে জাতিগত বৈষম্যের নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করলেও, 2023 সালের মডেল অ্যাক্ট এই ধরনের কোনও উল্লেখ সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়েছে ৷ মডেল অ্যাক্টে সেই প্রভাবের একটি নির্দেশ সন্নিবেশ করা উচিত । জাতপাতের ভিত্তিতে কাজের বিভাজন নিষিদ্ধ করা উচিত । জেল ম্যানুয়াল/মডেল প্রিজন ম্যানুয়াল সংশ্লিষ্ট রাজ্য আইনসভা দ্বারা প্রণীত অপরাধী আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী হবে ৷’’

কী যুক্তি সাজিয়েছিলেন আইনজীবীরা ?

  • জাতপাতের ভিত্তিতে কায়িক শ্রমের বিভাজন
  • ব্যারাকের পৃথকীকরণ

সুপ্রিম কোর্ট রায়ে স্পষ্ট বলেছে, 10টি রাজ্যের জেল ম্যানুয়ালের নির্দেশগুলি অসাংবিধানিক । সংবিধানের অনুচ্ছেদ 14, 15, 17, 21 এবং 23 লঙ্ঘন করার জন্য নির্দেশগুলিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে ৷ সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে এই রায় অনুযায়ী তাদের জেল ম্যানুয়াল/বিধিগুলিকে তিন মাসের মধ্যে সংশোধন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷

আরও পড়ুন:

Last Updated : 3 hours ago

ABOUT THE AUTHOR

...view details