নয়াদিল্লি, 4 অক্টোবর: জাতি বৈষম্যের শিকার জেলবন্দিরা ৷ তা ঘোচাতেই এবার তৎপর সুপ্রিম কোর্ট ৷ বৃহস্পতিবার সংবিধানের অনুচ্ছেদ 17 নির্দেশ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, প্রত্যেকে সমান অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে ৷ কোনও ব্যক্তির অস্তিত্ব, স্পর্শ বা উপস্থিতির সঙ্গে কোনও কলঙ্ক যুক্ত হতে পারে না ৷ জেলবন্দিদের মর্যাদা না-দেওয়া ঔপ্যনিবেশিকতাবাদ ৷ যা স্বাধীনতার পরেও রয়ে গিয়েছে ৷
ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ 14, 15, 17, 21, এবং 23 লঙ্ঘন করার কারণে রাজ্য কারাগারের ম্যানুয়ালগুলির বিভিন্ন নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুকন্যা শান্তার একটি আবেদনের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ আদালত 148-পৃষ্ঠার রায় দিয়েছে । ওই রায়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলিকে জাতিগত বৈষম্য মেটাতে কারাগারের ম্যানুয়ালগুলিতে পরিবর্তন আনার নির্দেশ দিয়েছে ৷ শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে জেলবন্দিদের রেজিস্টারে ‘জাত’ অংশটি এবং বিচারাধীন অথবা শাস্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের জাত সম্পর্কে যে কোনও রেফারেন্স মুছে ফেলতে হবে ।
এক শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যে জাতপাতের চর্চা বা কুসংস্কার যাচাই করে দেখা অস্বীকার করা এই ধরনের অভ্যাসকে প্রশ্রয় দেয় । প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, ‘‘"যদি এই ধরনের অভ্যাসগুলি প্রান্তিক মানুষদের নিপীড়নের উপর ভিত্তি করে হয়, তাহলে এই ধরনের অভ্যাসগুলিকে বজায় রাখা যাবে না । সংবিধানে জাতিগত বৈষম্য এবং অস্পৃশ্যতার অবসানের কথা (অনুচ্ছেদ 17, Abolition of Untouchability) স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে ।’’ একই সঙ্গে বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারকে তিন মাসের মধ্যে মডেল জেল ম্যানুয়াল 2016 এবং মডেল প্রিজনস অ্যান্ড কারেকশনাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট 2023-এ জাত-ভিত্তিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করার নির্দেশ দিয়েছে ।
সর্বোচ্চ আদালত এদিন বলেছে, ‘‘মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে, জেলবন্দি আসামিরও । বন্দিদের সঠিক মর্যাদা না-দেওয়া ঔপ্যনিবেশিকতার প্রতিফলন ৷ যেখানে নিপীড়ক ব্যবস্থাগুলিকে (কারাগার) অমানবিক এবং অবনমিত করার জন্য বানানো হয়েছিল । সাংবিধানিক যুগের কর্তৃত্ববাদী শাসনগুলি কারাগারগুলিকে কেবল বন্দিস্থান হিসাবে নয়, বরং আধিপত্যের হাতিয়ার হিসাবে দেখেছিল ৷ আদালত সংবিধান দ্বারা আনা পরিবর্তিত আইনি কাঠামোর উপর দৃষ্টি রেখে স্বীকৃতি দিয়েছে যে বন্দিরাও সঠিক মর্যাদার অধিকারী ৷’’
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় শুনানি চলাকালীন বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর 75 বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা সমাজ থেকে জাতিগত বৈষম্যের কুফল নির্মূল করতে পারিনি । আমাদের অবিলম্বে প্রাতিষ্ঠানিক অভ্যাসগুলি দূর করতে হবে ৷ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাগরিকদের প্রতি বৈষম্য বা তাঁদের প্রতি অ-সহানুভূতিশীল হওয়া অপরাধ । আমাদের পর্যবেক্ষণ করে সমস্ত জায়গায় পদ্ধতিগত বৈষম্য চিহ্নিত করতে হবে । সর্বোপরি, জাতপাতের সীমানা ইস্পাতের মতো কঠিন ৷ তবে এটি এতটাও শক্তিশালী নয় যে সংবিধানের শক্তি দিয়ে তা ভেঙে ফেলা যাবে না ৷” পাশাপাশি অনুচ্ছেদ 21-এর প্রাসঙ্গিকতাও উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচারপতি ৷ তিনি বলেন, ‘‘জাতিগত কুসংস্কার এবং বৈষম্য একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের বৃদ্ধিকে বাধা দেয় ৷ তা মেটাতে অনুচ্ছেদ 21 প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের জীবনের অধিকারের অংশ হিসাবে বর্ণ, জাত-সহ বিভিন্ন ভেদাভেদের উর্ধে উঠে তাঁকে অধিকার প্রদান করে ৷’’
প্রধান বিচারপতির কথায়, জাতি-ভিত্তিক বৈষম্যের শিকার না-হয়ে সমতা, সম্মান এবং মর্যাদার পরিবেশ একজন মানুষের বিকাশে অনুঘটকের কাজ করে ৷ যদি জেলবন্দিরা অবমাননাকর শ্রম বা অন্যান্য নিপীড়নের শিকার হয়, তবে অনুচ্ছেদ 23 জেলের ভিতরেও প্রয়োগ করা যেতে পারে ৷ বেঞ্চ জানিয়েছে, বিভিন্ন জেল ম্যানুয়ালের বেশ কয়েকটি নির্দেশ কিছু নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের শ্রমের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে । এই সম্প্রদায়গুলিকে শুধুমাত্র এক ধরণের শ্রম করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে । তা মেটাতেই এবার তৎপর সুপ্রিম কোর্ট ৷