বস্তার (ছত্তিশগড়), 13 ফেব্রুয়ারি:দেশের প্রতিটি রাজ্যই রয়েছে নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতি ৷ এলাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য প্রকাশ পায় হস্তশিল্পের নানা কাজকর্মে। সেই রকমই একটি শিল্প ডোকরা ৷ ছত্তিশগড়ের বস্তার এলাকার বিখ্যাত হস্তশিল্প এটি। তবে জানেন কি, হাতে বাদ্যযন্ত্র, পুরুষ-মহিলা পুতুলগুলির মাথা একই ধরনের কেন? কেনই বা এরকম দেখতে? শুক্রবার ভ্যালেনটাইন্স ডে ৷ প্রেমের সম্পর্কের সঙ্গে এই হস্তশিল্প অঙ্গাঙ্গিক ভাবে জড়িয়ে ৷ প্রেম দিবস উপলক্ষে ইটিভি ভারত তুলে ধরল সেই না জানা কাহিনি ৷
এবার আসা যাক ডোকরা শিল্প সম্পর্কে ৷ আসলে ওয়াক্স মেটাল কাস্টিংয়ের তৈরি এই ডোকরা দেশ-বিদেশে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ডোকরার ঘোড়া, হাতি, অলঙ্কার বেশ সুন্দর। তবে ডোকরা শিল্প যেখানে বিখ্যাত সেখানকার এক অজানা কাহিনি নিয়ে এই প্রতিবেদন ৷ এই কাহিনি প্রেমের ৷ তাই ভ্যালেনটাইন্স ডে উপলক্ষে স্মরণ করা হচ্ছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অজানা প্রেম-কথা ৷ আসলে প্রেমের কোনও আলাদা দিন বেছে নেওয়া যায় না ৷ তবে যুগলরা 14 ফেব্রুয়ারি দিনটা একটু বিশেষভাবেই উপভোগ করেন বা করতে চান ৷ বস্তারের এই 'অমর প্রেম কাহিনি' কিন্তু মোটেই সুখকর নয় ৷ বরং, অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও মর্মস্পর্শী ! হয়তো সেই জন্যই এই কাহিনি 'অমর' হয়ে গিয়েছে ৷
বস্তারের প্রেম কাহিনী যা জুড়েছে ডোকরা শিল্পকে
- ছত্তিশগড়ে যখনই কোনও 'সত্যিকারের প্রেম' নিয়ে আলোচনা হয়, তখনই ঝিটকু আর মিটকির নাম উঠে আসে ৷ বস্তারের এই যুগল তাঁদের জীবন উৎসর্গ করে 'অমর' হয়ে গিয়েছেন ৷ আজকের দিনে, অবিবাহিত এবং বিবাহিত দম্পতিরা একসঙ্গে থাকার জন্য ঝিটকুৃ-মিটকির আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন ৷ তাঁরা ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে ঝিটকু-মিটকির ডোকরা শিল্পের মূর্তি নিজেদের কাছে রাখেন।
- বস্তারের ঝিটকু-মিটকির অমর ভালোবাসা স্মৃতিতে ধরে রাখতে বর্তমানে শিল্পীরা ধাতুতে তাঁদের তুলে ধরেন ৷ এলাকার মানুষরা বাড়িতে দেব-দেবীকে যেমন প্রতিষ্ঠা করেন, তেমনই ডোকরা শিল্পে ফুটে ওঠা ঝিটকু আর মিটকির মূর্তিকেও সেই জায়গা দেওয়া হয় ৷ বস্তারের শিল্পীরা এই মূর্তি তৈরি করে দূর-দূরান্তে বিক্রির জন্যও পাঠান। এলাকায় প্রেমিক যুগলের স্মরণে মেলা বসার পাশাপাশি তাঁদের রাজা ও রানির মর্যাদাও দেওয়া হয় ৷ ভালোবাসা যেহেতু তাঁদের মিলিয়েছিল এবং প্রেমই তাঁদের মৃত্যুর কারণ, তাই ভ্যালেনটাইন্স ডে'তে তাঁরা স্মরণীয় এখানকার মানুষের কাছে ৷ সম্প্রতি, ছত্তিশগড়ে ঝিটকু-মিটকির উপর একটি ছবিও তৈরি করা হয়েছে যা গত 7 ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স সপ্তাহ শুরুর দিনই মুক্তি পেয়েছে।
কে ঝিটকু-মিটকি?
বস্তারের বিশিষ্ট এক সাংবাদিক অবিনাশ প্রসাদ ঝিটকু আর মিটকির গল্প শোনালেন ইটিভি ভারতকে। তিনি জানান, কোন্ডাগাঁও জেলা সদর থেকে প্রায় 50-60 কিলোমিটার দূরে ভিষমপুরী রোডে রয়েছে পেন্দ্রাবন গ্রাম ৷ মিটকি সেই গ্রামেরই মেয়ে। তাঁর সাত দাদা ছিলেন ও তিনিই একমাত্র ছোট বোন ৷ অনেকটা ওই 'সাত ভাই চম্পা'র মতো ৷ দাদারা ছিলেন বোন বলতে অজ্ঞান ! একমাত্র বোন মিটকিকে খুব ভালোবাসতেন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর, সাত ভাইই প্রথমে মিটকির মুখের দিকে তাকাতেন। দিন এভাবেই কেটে যাচ্ছিল ৷ একদিন গ্রামে একটি মেলা চলছিল ৷ ওই মেলায় মিটকির সঙ্গে ঝিটকুর দেখা হয়। প্রথম দেখাতই চোখ যেন দু'জনের মন জানতে পেরেছিল ৷ ওই যে কথায় আছে না, 'লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট' ৷ ঠিক সেভাবেই দু'জনের মধ্যে প্রেম শুরু হয় ৷
এদিকে, ঝিটকু ছিলেন পাশের গ্রামের বাসিন্দা ৷ দু'জনের মধ্যে দেখা হওয়া বাড়তে থাকে, দু'জনেই একসঙ্গে পথ চলার অঙ্গীকারবদ্ধ হন ৷ মিটকির দাদাদের কাছে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন ঝিটকু ৷ তাতে রাজি হন মিটকির দাদারা ৷ তবে, একটি শর্ত রাখেন যে, ঝিটকুকে ঘর জামাই থাকতে ৷ যেহেতু ঝিটকু একা ছিল, তাঁর কোনও পরিবার ছিল না, তাছাড়া মিটকিকেও সে খুব ভালোবাসত, তাই ততক্ষণাৎ এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় ৷ এরপর ধুমধাম করে ঝিটকু আর মিটকির বিয়ে হয় ৷