নয়াদিল্লি, 18 ফেব্রুয়ারি: সুপ্রিম কোর্টে শুনানির একদিন আগেই দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করা হয়েছে ৷ এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কড়া আক্রমণ করলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি ৷ এই ঘটনাকে 'অসম্মানজনক' ও 'সৌজন্যহীন' বলে উল্লেখ করলেন তিনি ৷ ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতা তাঁর সোশাল মিডিয়ায় একটি 'ডিসেন্ট নোট'ও পোস্ট করেছেন, যা তিনি কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দিয়েছেন ৷
মঙ্গলবার, 18 ফেব্রুয়ারি দেশের বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৷ 2022 সালের 15 ফেব্রুয়ারি তিনি দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ৷ এই পরিস্থিতিতে সোমবার মধ্যরাত্রে দেশের নয়া মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে জ্ঞানেশ কুমারকে নির্বাচিত করে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতা নিয়ে গঠিত সিলেকশন কমিটি ৷ 2023 সালের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী তাঁকে নির্বাচিত করা হয়েছে ৷
Dr. Vivek Joshi, IAS of the 1989 batch, is appointed as Election Commissioner, with effect from the date he assumes charge of his office. pic.twitter.com/PcHYdgj1iU
— ANI (@ANI) February 17, 2025
মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ প্রক্রিয়া
নয়া এই আইন অনুযায়ী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা, প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী মনোনীত এক ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে নিয়ে গঠিত সিলেকশন কমিটি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বাছাই করবে ৷ গতকাল সন্ধ্যায় এই কমিটির বৈঠকে জ্ঞানেশ কুমারের নাম দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে চূড়ান্ত করা হয় এবং মধ্যরাতে তা গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় ৷ 19 ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে জানানো হয় গেজেট নোটিফিকেশনে ৷
During the meeting of the committee to select the next Election Commissioner, I presented a dissent note to the PM and HM, that stated: The most fundamental aspect of an independent Election Commission free from executive interference is the process of choosing the Election… pic.twitter.com/JeL9WSfq3X
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) February 18, 2025
গতকাল বিকেলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের কমিটির বৈঠকে লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি এই বাছাইয়ের তীব্র বিরোধিতা করেন ৷ রাহুল জানান, 2023 সালের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে ৷ সেই শুনানি আগামী 19 ফেব্রুয়ারি ৷
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কমিটির এই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা নিয়ে একটি 'ডিসেন্ট নোট'-এ কমিটির কাছে পেশ করেন রায়বরেলির সাংসদ রাহুল গান্ধি ৷ কিন্তু, তাতে কর্ণপাত না করেই সোমবার মধ্যরাতে জ্ঞানেশ কুমারের নাম ঘোষণা হয় ৷
রাহুল গান্ধির ডিসেন্ট নোট
এরপর মঙ্গলবার দুপুরে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রতিবাদে এক্স হ্যান্ডেল রাহুল গান্ধি লেখেন, "পরবর্তী নির্বাচন কমিশনার বাছাই করার বৈঠকে আমি প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমার 'ডিসেন্ট নোট' দিয়ে আমার বক্তব্য জানিয়েছিলাম ৷ সেখানে বলা হয়েছে, একজন স্বাধীন নির্বাচন কমিশনারের প্রাথমিক যোগ্যতা, তিনি কোনও প্রশাসনিক কাজকর্মে জড়িত থাকবেন না ৷ সেই পদ্ধতিতেই নির্বাচন কমিশনার এবং মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বাছাই করা হয় ৷"
এরপর তিনি সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলা নিয়ে লেখেন, "সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে এবং দেশের প্রধান বিচারপতিকে কমিটি থেকে বাদ দিয়ে মোদি সরকার লক্ষ লক্ষ ভোটারের আমাদের ভোট প্রক্রিয়ার অখণ্ডতা নিয়ে চিন্তা বাড়িয়েছেন ৷" এই অবস্থায় বিরোধী দলনেতা হিসাবে তাঁর দায়িত্ব বাবাসাহেব আম্বেদকরের আদর্শগুলি তুলে ধরা ৷ পাশাপাশি সরকারকে দায়ী করাটাও তাঁর কর্তব্য, সোশাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি ৷
তিনি আরও লেখেন, "মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করার পদ্ধতি নিয়ে মামলা সুপ্রিম কোর্টে চলছে ৷ সেই শুনানির 48 ঘণ্টাও বাকি নেই ৷ এরই মধ্যে মধ্যরাতে নতুন সিইসি'র নাম চূড়ান্ত করাটা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য একদিকে যেমন অসম্মানের, তেমনই সৌজন্যহিনতার পরিচয় ৷" মঙ্গলবারই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, 19 ফেব্রুয়ারি 2023 সালের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার আইনের বিরোধিতা মামলাটিকেই শুনানির জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হবে ৷