বাগেশ্বর(উত্তরাখণ্ড), 7 সেপ্টেম্বর: জোশীমঠের আতঙ্ক ফিরে এল উত্তরাখণ্ডে ৷ দেবনগরীর বাগেশ্বর জেলাতেও চামোলির জোশীমঠের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে । বাগেশ্বরে একাধিক গ্রামে বাড়িতে দেখা দিয়েছে ফাটল ৷ যার কারণে স্থানীয় লোকজন খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ৷
বাড়িতে ফাটল (ইটিভি ভারত) স্থানীয়দের অভিযোগ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমির তলদেশের সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে বাগেশ্বরে । এর প্রধান কারণ, এই এলাকায় বড় আকারের সোপস্টোন খনন এবং ঠিকাদারদের দ্বারা খনন করা পরিখাগুলিকে মেরামত না-করে ফেলে রাখা ৷ স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, সোপস্টোন খনির জন্য প্রায়ই বিস্ফোরণ করা হয় এবং খননের জন্য ভারী মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সরাসরি খনির নিয়মের পরিপন্থী ।
এই অভিযোগ নিয়ে জেলা খনি অধিকর্তা জিজ্ঞাসা বিষ্ট বলেন,"গত দুই বছর ধরে ওই এলাকায় খনি উত্তোলন বন্ধ রয়েছে । তবে কান্দা গ্রামের অন্তত সাত থেকে আটটি বাড়ির দেওয়ালে ও ছাদে ফাটল লক্ষ্য করা গিয়েছে । 3 সেপ্টেম্বর আমি একজন ভূতাত্ত্বিক ও রাজস্ব আধিকারিকদের সঙ্গে গ্রাম পরিদর্শন করেছি ।"
আতঙ্কিত বাসিন্দারা (ইটিভি ভারত) কী হয়েছিল জোশীমঠে ?
উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় অবস্থিত জোশীমঠ ৷ পরে যার নাম পরিবর্তন করে জ্যোতির্মঠ রাখা হয়েছে ৷ 2023 সালের গোড়ার দিকে সেখানে প্রায় 1000 লোককে বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল ৷ কারণ ভূমিধসের কারণে দেওয়াল এবং মেঝেতে বিশাল ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল ।
বাগেশ্বরের বর্তমান পরিস্থিতি
এ দিকে বাগেশ্বরে জনতা দরবারের সময় স্থানীয় লোকেরা বাড়িগুলিতে ফাটলের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন ৷ তারপরেই বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । জেলা খনির আধিকারিক জিজ্ঞাসা বিষ্ট বলেছেন,"কান্দেকন্যাল গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িই খালি । সেখানে বসবাস করছে মাত্র পাঁচটি পরিবার । জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল এখনও বিষয়টির নোটিশ নেয়নি এবং আমাকেকে কোনও নির্দেশ জারি করেনি ।" বিষ্টের মতে, জেলার যেসব এলাকায় এখনও খনন চলছে তার আশেপাশের 25টিরও বেশি গ্রামের বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে । এগুলি বেশিরভাগ সেই গ্রামের বাসিন্দা যারা খনির কাজ চালানোর জন্য অনুমতি দিয়েছিল ৷
জোশীমঠের আতঙ্ক ফিরল বাগেশ্বরে (ইটিভি ভারত) শতাধিক গ্রামে ভূমিধসের আশঙ্কা
স্থানীয় বাসিন্দা ঘনশ্যাম জোশী জানান, জেলার মোট 402টি গ্রামের মধ্যে 100টির বেশি গ্রামে ভূমিধসের আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে । জেলা দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর আধিকারিক শিখা সুয়ালের দাবি, 11টি গ্রামের 131টিরও বেশি পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ কারণ ভূমিধসে তাদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ৷ এ ধরনের আরও গ্রামেও জরিপ করা হবে ।
তাঁর দাবি, এ ছাড়াও অভিযোগ পেয়ে কাপকোট ব্লকের কালিকা মন্দিরেও যান সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকরা । কিন্তু খনির কাজের ক্ষেত্রে কোনও রকম নিয়ম লঙ্ঘনের কিছু সেখানে পাওয়া যায়নি । খনির অধিকর্তা বিষ্ট বলেন,"কাপকোটের কালিকা মন্দির এলাকার খনিগুলো দুই বছর আগে বন্ধ হয়ে গেলেও বাড়িতে এখনও ফাটল দেখা যাচ্ছে ।"
সোপস্টোন খনির প্রভাব
বাগেশ্বরের গ্রামে সোপস্টোন খনির প্রভাব নিয়ে অধ্যয়নরত চন্দ্রশেখর দ্বিবেদী বলেন, "কাপকোট ও কান্দা ব্লকের এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক খনি রয়েছে এবং কাছাকাছি খনির কার্যকলাপের কারণে প্রায় প্রতি বর্ষায় গ্রামে ভূমিধস হয় ৷ ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা দেয় । ঠিকাদাররা ব্লাস্টিং করে এবং জেসিবি মেশিন (খনন যন্ত্র) ব্যবহার করে খনন করে, তাতে খনির নিয়ম লঙ্ঘন হয় ৷ পরে গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ করলে তাদের শান্ত করার জন্য বিভিন্ন উপায়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় । বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এটিও একটি কারণ ।"