নয়াদিল্লি, 28 জুন: প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার আরও দুই ৷ নিট-ইউজি প্রশ্নপত্র ফাঁস কাণ্ডে শুক্রবার ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ থেকে একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপালকে গ্রেফতার করল সিবিআই ৷ তাঁদের দু'জনকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করার পর গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ তাঁদের সেখান থেকে পটনায় নিয়ে আসা হয়েছে ৷
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, 5 মে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বা এনটিএ পরিচালিত মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষায় শহরের কোঅর্ডিনেটর ছিলেন এহসানুল হক ৷ তিনি ওয়েসিস স্কুলের প্রিন্সিপাল ৷ অন্যদিকে, ভাইস-প্রিন্সিপাল ইমতিয়াজ আলম ছিলেন এনটিএ-র পর্যবেক্ষক এবং সেন্ট্রি কোঅর্ডিনেটর ৷ তাঁদের দু'জনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি হাজারিবাগের আরও পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই ৷
এদিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ হাজারিবাগের একটি গেস্ট হাউস থেকে ওই দু'জনকে সঙ্গে নিয়ে বিহারের পটনার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিকরা ৷ তাঁদের সঙ্গে দু'টি কালো ব্রিফকেস এবং একটি লোহার বাক্স ছিল ৷ সূত্রের খবর, ওই লোহার বাক্সটি থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল বলে সিবিআই মনে করে ৷ ওই বাক্সটিতে ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট-সহ অনেক প্রমাণই আছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা ৷
সিবিআইয়ের আগে নিট-ইউজি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার তদন্ত করছিল বিহার পুলিশ ৷ তাদের ইকোনমিক অফেন্সেস ইউনিট বা ইওইউ তদন্ত করার সময় প্রিন্সিপাল হক এবং ভাইস-প্রিন্সিপাল আলমের বিষয়ে জানতে পারে ৷ ইওইউ-এর তদন্তকারী দলটি বিহারের পটনায় তল্লাশি চালিয়ে নিট-ইউজি-র আংশিক পুড়ে যাওয়া বেশ কিছু প্রশ্নপত্র খুঁজে পেয়েছিল ৷
একটি বিবৃতিতে ইওইউ দাবি করেছে, নিট-ইউজি-র ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রগুলি হাজারিবাগের ওয়েসিস স্কুল থেকে পাওয়া গিয়েছে ৷ এর নেপথ্যে রয়েছে কুখ্যাত সঞ্জীব কুমার ওরফে লুটান মুখিয়া গ্যাং ৷ তদন্তকারীরা আংশিক পুড়ে যাওয়া প্রশ্নপত্রগুলি এনটিএ-র দেওয়া আসল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন ৷ তবে ঠিক কে এই প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে, তা স্পষ্ট করতে পারেনি বিহার পুলিশের ইকোনমিক অফেন্সেস ইউনিট ৷
সরকারি সূত্রে খবর, তদন্তে জানা গিয়েছে, প্রশ্নপত্রের বাক্সটি যেভাবে খোলা উচিত, সেই নির্দেশ মানেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ৷ ইতিমধ্যে প্রিন্সিপাল এহসানুল হক মিডিয়ায় একটি সাক্ষাৎকারে জানান, প্রশ্নপত্রের বাক্সটি ঠিক করে খোলা সম্ভব হয়নি ৷ কারণ, সেখানে ডিজিটাল লক ছিল ৷ সেটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আনলক করার কথা ছিল ৷ সেই পদ্ধতি কাজ করছিল না ৷ এরপরই তিনি এনটিএ-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন ৷ পরীক্ষা পরিচালক কর্তৃপক্ষ তাঁকে কাটার দিয়ে সেই বাক্সটি খোলার নির্দেশ দেয় ৷
প্রশ্নপত্রের বাক্সটির দু'টি লক ছিল- একটি হাতে খোলা যায় ৷ অন্যটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির ৷ তাতে ডিজিটাল লক আছে, যেটি পরীক্ষা শুরুর 45 মিনিট আগে বিপ শব্দে খুলে যায় ৷ সিবিআই এই নিট-ইউজি প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলায় 6টি এফআইআর দায়ের করেছে ৷ একটি শিক্ষা মন্ত্রক থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে এবং পাঁচটি বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাওয়া অভিযোগের উপর ভিত্তি করে ৷ বিহার ও গুজরাতের মতো রাজ্যের প্রতিটিতে একটি করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলা চলছে ৷ অন্য়দিকে, রাজস্থান 3টি মামলা দায়ের হয়েছে ৷ গত বৃহস্পতিবার, 27 জুন সিবিআই নিট-ইউজি প্রশ্নপত্র ফাঁসে প্রথম গ্রেফতার করে ৷ এদিন বিহারের পটনা থেকে দু'জনকে হেফাজতে নেওয়া হয় ৷ এছাড়া গুজরাতে তিনজন পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ তাদের বিরুদ্ধে পরীক্ষায় বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ৷
পরীক্ষা পরিচালন সংস্থা এনটিএ দেশজুড়ে মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-ইউজি পরিচালনা করে ৷ 2024 সালের এই পরীক্ষাটি হয়েছিল 5 মে ৷ দেশের 571টি শহরের 4 হাজার 750টি কেন্দ্রে 23 লক্ষেরও বেশি পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয় ৷ পরে 4 জুন ফল প্রকাশ হওয়ার পর পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ঘিরে অভিযোগ ওঠে ৷ গত রবিবার, 23 জুন এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেয় শিক্ষামন্ত্রক ৷ পরীক্ষায় বেনিয়মের অভিযোগে পড়ুয়ারা দেশের সর্বত্র প্রতিবাদে নেমেছে ৷ তারাই এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছিল ৷