হাথরস, 2 জুলাই: পদদলিত হয়ে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনায় ফের খবরের শিরোনামে উত্তরপ্রদেশের হাথরস ৷ একটি সৎসঙ্গের অনুষ্ঠানে ভিড়ের মধ্যে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে ৷ ভোলে বাবা হিসেবে পরিচিত স্থানীয় এক সাধু হাথরসে এই সৎসঙ্গের অনুষ্ঠানে উপদেশ দিচ্ছিলেন ৷ সেখানেই পদপিষ্ট হয়ে 100 জনেরও বেশি লোক মারা যায় ।
ঘটনা বড় আকার ধারণ করতেই সাধুর পরিচয় নিয়ে তোলপাড় দেশ ৷ প্রশ্ন উঠছে, কে এই ভোলেবাবা ? যার উপদেশ শুনতে এহেন ভিড় হয়েছিল হাথরসে ?
জানা গিয়েছে, সাধুর নাম সাকার বিশ্ব হরি ৷ বাবা মূলত কাসগঞ্জ জেলার পাটিয়ালির বাহাদুরনগরের বাসিন্দা ৷ সাধু হওয়ার আগে তিনি উত্তরপ্রদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করতেন । পরে তিনি চাকরি ছেড়ে গল্পকার হয়ে ভক্তদের সেবা করতে থাকেন । স্ত্রীর সঙ্গে সৎসঙ্গ পরিচালনা করেন এবং পাতিয়ালি এলাকায় সাকার বিশ্ব হরি বাবা নামে পরিচিত । তাঁর সৎসঙ্গে হাজার হাজার মানুষ আসেন ।
মঙ্গলবার ভোলে বাবার সৎসঙ্গে এই দুর্ঘটনা ঘটে যখন তাঁর ধর্মোপদেশ অনুষ্ঠান শেষ হচ্ছিল । জানা গিয়েছে, আয়োজকরা প্রশাসনকে যা জানিয়েছিলেন তার চেয়ে বেশি লোক এখানে পৌঁছেছিল । সমাপনী অনুষ্ঠানে ভিড়ের কারণে অনেকের দমবন্ধ হয়ে যায়, যার পরে পদদলিত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন শত শত মানুষ । শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় ৷
এটা প্রথমবার নয়, করোনার সময়ও ভোলে বাবার সৎসঙ্গ অনুষ্ঠান বিতর্কে এসেছিল । তখন তিনি তাঁর সৎসঙ্গে উপস্থিত হওয়ার জন্য মাত্র ৫০ জনের অনুমতি চেয়েছিলেন । কিন্তু, পরে তাঁর সৎসঙ্গে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ আসেন । প্রচণ্ড ভিড়ের জেরে ভেঙে পড়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা । এবারও বলা হচ্ছে, প্রশাসনকে যত লোক জানানো হয়েছে তার চেয়ে বেশি লোকের সমাগম হয়েছিল মঙ্গলবারের কর্মসূচিতে ।
ভোলে বাবা যে কেবল ইটা, আগ্রা, ময়নপুরী, শাহজাহানপুর, হাথরস-সহ অনেক জেলাতেই নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন তা নয়; পশ্চিম ইউপি, রাজস্থান ও হরিয়ানা সংলগ্ন মধ্যপ্রদেশের অনেক জেলাতেই তাঁর ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হয় । ভোলে বাবার ভক্তদের অধিকাংশই দরিদ্র শ্রেণির ৷ যারা লাখে লাখে সৎসঙ্গ শুনতে আসেন । যদিও সাকার বিশ্ব হরি নিজেকে ভগবানের সেবক বলেন এবং তাঁর ভক্তরা বাবাকে ভগবানের অবতার বলে মনে করেন । এই ভক্তরাই সৎসঙ্গের আয়োজন করে থাকেন ৷
ভোলে বাবার সৎসঙ্গে যাওয়া প্রতিটি ভক্তকে জল বিতরণ করা হয় । বাবার অনুগামীরা বিশ্বাস করেন যে, এই জল পান করলে তাদের সমস্যার সমাধান হয় । পাতিয়ালি তহসিলের বাহাদুর নগর গ্রামে অবস্থিত তাঁর আশ্রমেও বাবার দরবার হয় । আশ্রমের বাইরে একটি হাতপাম্পও রয়েছে । দরবারের সময় এই হাতপাম্পের জল খাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন থাকে ।
উত্তরপ্রদেশের তীর্থস্থানগুলিতে ক্রমবর্ধমান ভিড় এখন পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে । হাথরসে আজকের দুর্ঘটনার আগেও বহুবার উত্তরপ্রদেশে ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভিড় সামলানো যায়নি । 2010 সালে, প্রতাপগড়ের কুন্ডায় একটি ধর্মীয় স্থানে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল । যেখানে কৃপালু মহারাজের আশ্রম মানগড়ে পদদলিত হয়ে ৬৩ জন ভক্তের মৃত্যু হয় ।
পরিবহণের দক্ষ মাধ্যম বৃদ্ধি এবং ধর্মীয় স্থানের প্রচার বৃদ্ধির কারণে এই ধরনের বিশেষ অনুষ্ঠানে ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় । যে কারণে উত্তরপ্রদেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা বাড়ছে। বর্তমানে পুলিশ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এমন কোনও উন্নতি করা হয়নি, যার মাধ্যমে ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং ভক্তদের সুষ্ঠুভাবে দর্শন করানো যায় ।
মথুরায় 2022 এবং তারপর 2024 সালে দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল । বারসানার রাধারানি মন্দিরে পদদলিত হয়ে প্রায় ১২ তীর্থযাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন । 2022 সালে, লাড্ডু মার হোলি উপলক্ষে, বাঁকে বিহারী মন্দিরে শ্বাসরোধে দুজনের মৃত্যু হয়েছিল । বৃন্দাবনের ঠাকুর বাঁকে বিহারী মন্দিরে রঙ্গভারী একাদশীর রঙিন হোলি শুরুর একদিন আগে ভিড় এতটাই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে যে এক ভক্তের মৃত্যু হয় । অন্যদিকে একজনের স্বাস্থ্যের অবনতি হয় । বিপুল জনতার চাপে আটকে পড়া নারী ও শিশুদের চিৎকার বেরিয়ে আসতে থাকে ৷ এদিকে দেখা যায় ভিআইপিদের সেবায় যাতে কোনও বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সেজন্য পুলিশ বেশি সজাগ ছিল ।