গুয়াহাটি, 30 অগস্ট: বিজেপি সংখ্যাগড়িষ্ঠ অসম বিধানসভার চলতি অধিবেশনে শুক্রবারের জুম্মার নমাজ পাঠের প্রচলিত দু'ঘণ্টার বিরতি তুলে দেওয়া হল শুক্রবারই ৷ এই বিষয়ে বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে বলে দাবি করেন বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ ফুকন। পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সোশ্য়াল মিডিয়ায় এই বিষয় নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টও করেন ৷
বিধানসভা সূত্রে খবর, গত এপ্রিল মাসে প্রচলিত এই রীতিকে ফিরে দেখার জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয় ৷ কমিটিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা ছিলেন ৷ বেশ কয়েকদফা বৈঠকের পর সরকারি তরফে জানানো হয়, কমিটির সব সদস্যই চেয়েছেন ব্রিটিশ আমলের এই প্রথাকে তুলে দেওয়া হোক ৷ সেই মতো শুক্রবারে নমাজ পড়ার জন্য দুই ঘণ্টার বিরতি ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার উদ্দেশে একটি প্রস্তাব এদিন সভা চলাকালীন পেশ হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীতও হয়েছে ৷
এই বিষয়ে বলতে গিয়ে বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ ফুকন বলেন, "সৈয়দ সাদুলাহ (ব্রিটিশ ভারতের শাসনামলে অসমের প্রথম প্রধানমন্ত্রী)-এর সময় থেকে একটি নিয়ম চালু ছিল ৷ যা এদিন বিধানসভায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই নয়া নিয়ম কার্যকর হবে। বিধানসভার আসন্ন অধিবেশনে বিধায়ক আমিনুল ইসলাম বিষয়টি উত্থাপন করেন।" একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, “দেশের কোনও রাজ্যেই এমন ব্যবস্থা নেই। অবশেষে, অসম বিধানসভা এই ব্যবস্থাও বাতিল করে যা সৈয়দ সাদুলহের সময় থেকে চলে আসছিল। বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমি বিধানসভার স্পিকারকে ধন্যবাদ জানাই। নমাজের বিরতি বন্ধ করতে বিধানসভা বিধিমালার বিধি-11 সংশোধন করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে কেউ আপত্তি করেনি।"
এই বিষয়ে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা লিখেছেন, "2 ঘণ্টা জুম্মার নমাজের বিরতি বাদ দিয়েছে বিধানসভা ৷ ঔপনিবেশিকতার আরও একটি চিহ্ন ফেলে দেওয়া হল ৷ 1937 সালে মুসলিম লিগের সৈয়দ সাদুলাহ এই প্রথা চালু করেন। মাননীয় স্পিকার বিশ্বজিৎ দাইমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ ৷ আমাদের বিধায়করা এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার জন্যও কৃতজ্ঞ।" সুতরং ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা একটি প্রথা শুক্রবার সর্বসম্মতিক্রমে অসম বিধানসভায় কার্যত বিলুপ্ত হল। এখন থেকে রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন জুম্মার নমাজের জন্য দুই ঘণ্টার কোনও বিরতি আর থাকছে না।
এই বিষয়ে কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "সারা বিশ্বে জুম্মার নমাজের জন্য দুই ঘণ্টার ছুটি দেওয়া হয়, এতে কারও কোনও আপত্তি নেই, কিন্তু অসমে বিজেপি সরকার তা নিষিদ্ধ করেছে। অসমে মুসলমানদেরকে টার্গেট করার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ অসমে বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্ত ধর্মের নামে রাজনীতি করছে। সরকার তা নিষিদ্ধ করেছে।" অন্যদিকে, এআইইউডিএফ বিধায়ক মজিবুর রহমান বলেন, "বিগত 90 বছরে অনেক মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন ৷ কিন্তু, এই ইস্যুতে কারও কোনও সমস্যা হয়নি ৷ আমি জানি না হিমন্ত বিশ্বশর্মার কী সমস্যা হয়েছে ! কেন তিনি বিধানসভার ঐতিহ্য ভাঙার চেষ্টা করছেন ? আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলা উচিত ৷"