নিউ ব্যারাকপুর, 30 ডিসেম্বর: সিকিমে ঘুরতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়লেন বাঙালি পর্যটক । খাদে গাড়ি পড়ে মৃত্যু হল এক মহিলা ও তাঁর শিশু সন্তানের । গুরুতর আহত হয়েছেন ওই মহিলার স্বামী । বর্তমানে তিনি-সহ গাড়ির চালক চিকিৎসাধীন গ্যাংটকের একটি সরকারি হাসপাতালে । ঘটনার জেরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে উত্তর 24 পরগনার নিউ ব্যারাকপুরে ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাটি ঘটে উত্তর সিকিমের জুলুকে । সেখান থেকে হোটেল ফেরার পথে পাহাড়ি রাস্তায় পর্যটকদের ওই গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কয়েকশো ফুট গভীর খাদে পড়ে যায় । সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পিয়ালী শাসমল (25) ও তাঁর আড়াই বছরের শিশুকন্যা শ্রীনিকা । তবে, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলেও বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন মহিলার স্বামী শোভন শাসমল । আপাতত তাঁর চিকিৎসা চলছে গ্যাংটকের একটি সরকারি হাসপাতালে ।
জানা গিয়েছে, নিউ ব্যারাকপুরের সুকান্ত সরণির বাসিন্দা শাসমল দম্পতি । তাঁদের একমাত্র মেয়ে শ্রীনিকা । বাড়িতে শোভনের বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন । গত 23 ডিসেম্বর গ্যাংটকের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন শোভন, তাঁর স্ত্রী পিয়ালী ও তাঁদের আড়াই বছরের শিশুকন্যা শ্রীনিকা ।
রবিবার দুপুরে একটি গাড়ি ভাড়া নিয়ে ওই তিনজন মিলে ঘুরতে গিয়েছিলেন উত্তর সিকিমের জুলুকে । সেখান থেকে সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরছিলেন সকলে । পাহাড়ি রাস্তার বাঁক কাটাতে গিয়ে হঠাৎই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কয়েকশো ফুট গভীর খাদে পড়ে যায় তাঁদের গাড়িটি । ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পিয়ালী এবং শ্রীনিকার । গুরুতর আহত হন শোভন ও গাড়ির চালক । তাঁদের দু'জনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে নিয়ে যায় গ্যাংটকের একটি সরকারি হাসপাতালে ।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, শোভনের বাঁ পায়ে ও কাঁধে মারাত্মক আঘাত লেগেছে । গাড়ির চালকেরও আঘাত লেগেছে শরীরের বিভিন্ন অংশে । এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিডিয়ো কলে শোভন বলেন, "ঘুরতে যাচ্ছি বলে মেয়ের বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে গিয়েছিলাম বাড়ি থেকে । এখন ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে ফিরতে হবে । এর চেয়ে খারাপ কী হতে পারে বলুন । স্ত্রী,কন্যাকে হারিয়ে সবকিছু শেষ আমার । মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি, উনি স্ত্রী ও আমার মেয়ের নিথর দেহ ফেরাতে যদি উদ্যোগ নেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকব ।"
কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল ? সেই প্রশ্নের জবাবে শোভন বলেন, "আমরা যে রাস্তা দিয়ে ফিরছিলাম সেই রাস্তাটি খুব খারাপ ছিল । সম্ভবত রাস্তাটি তৈরি করা হচ্ছিল । ফিরতে দেরি হয়ে যাওয়ায় ভালো রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । সেই কারণে খারাপ রাস্তা দিয়েই ফিরতে হচ্ছিল আমাদের । আমি জানি না গাড়ির চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন কি না । তবে, তাঁর বয়স অল্প হওয়ায় তিনি পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালাতে অনভিজ্ঞ ছিলেন বলে ধারনা আমার । কেন এত অল্প বয়সের ছেলেদের হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং তুলে দেওয়া হচ্ছে, সেটা ভেবে দরকার হোটেল কর্তৃপক্ষের । আমার তো যা শেষ হওয়ার শেষ হয়ে গিয়েছে । আর যাতে এরকম কারও সঙ্গে না ঘটে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত তাঁদের ।"
এদিকে, দেহ ফেরাতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আহত শোভনের প্রতিবেশী কৃষ্ণেন্দু দাস । তাঁর কথায়, "স্থানীয় পৌরসভার চেয়ারম্যান এবং মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন । তাঁরা পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ।"