রানাঘাট, 21 অক্টোবর: মধ্যরাতে রাজ্য সড়কে স্বামীর সামনেই স্ত্রীকে হেনস্তা ৷ তার প্রতিবাদ করায় চোখের সামনে স্ত্রীকে পিষে দিল ম্যাটাডোর ৷ পরিকল্পিত খুনের অভিযোগ দায়ের থানায়, তদন্তে নেমে ঘাতক গাড়ি চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার মাঝরাতে নদিয়ার রানাঘাট-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়কে।
কী ঘটে গতকাল রাতে- জানা গিয়েছে মৃতের নাম তন্দ্রা বিশ্বাস, বয়স 32 ৷ স্বামী সুজন বিশ্বাস নদিয়ার তাহেরপুর থানার শ্যামনগর কামগাছি এলাকার বাসিন্দা ৷ সুজন বিশ্বাসের একটি ওষুধের দোকান রয়েছে কোতোয়ালি থানার জালালখালিতে। প্রতিদিন রাতের মতোই গতকাল দোকান বন্ধ করে বাইকে করে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি ৷ তখনই খামার শিমুলিয়া এলাকা পার হওয়ার সময় কুয়াশার কারণে তন্দ্রাদেবীর চশমা অস্পষ্ট হয়ে যায়, আর বাইকে বসেই তন্দ্রাদেবী চশমা মুচ্ছিলেন। সেই সময় হঠাৎ চশমাটি মাটিতে পড়ে যায় ৷ তুলতে গেলেই শুরু বিপত্তি ৷
মহিলাকে হেনস্তা ও মারধর- চশমা তুলতে গিয়ে রাস্তায় আচমকা একটি ইঞ্জিনভ্যান চালক এসে তাঁদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু করেন। অভিযোগ, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন ভ্যানচালক ৷ তখনই দু'পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়, এরপরে ইঞ্জিন ভ্যানচালক ফোন করলে ঘটনাস্থলে আসে একটি ম্যাটাডোর ৷ চারচাকার চালক গাড়ি থেকে নেমে মারতে শুরু করেন সুজন বিশ্বাসকে। এমনকী স্ত্রী তন্দ্রাদেবীকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। প্রাণ বাঁচাতে সুজনবাবু ফোন করেন তাঁর নিকট কয়েকজনকে ৷
হাড়হিম করা ঘটনা- যদিও তাঁরাও সেখানে চলে আসেন কিছুক্ষণের মধ্যেই। তৎক্ষণাত্মক ম্যাটাডোরের চালক গাড়িটি নিয়ে চম্পট দেয় ৷ এরপরেই ঘটে যায় লোমহর্ষক ঘটনা ৷ কিছুক্ষণ বাদেই ওই ম্যাটাডোরটি আলো নিভিয়ে দ্রুত গতিতে এসে বেশ কয়েকজনের উপর দিয়ে চালিয়ে দেয় ৷ একইসঙ্গে চাকার তলায় পিষ্ট হন তন্দ্রা বিশ্বাস। সঙ্গে সঙ্গে বছর বত্রিশের তন্দ্রাদেবীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

কী বলছেন মৃতের স্বামী-স্বামী সুজন বিশ্বাসের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে তাঁর স্ত্রীকে খুন করা হয়েছে, আমরা এর সঠিক বিচার চাই। তবে এই ঘটনায় সোমবার সকালে তাহেরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের স্বামী ৷ সেখানে তিনি খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে ঘাতক গাড়িটিকে আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে ঘাতক গাড়ি চালক বিপুল মুস্তাফিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে ইতিমধ্যে অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশি তদন্ত- তবে গতকাল মধ্যরাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাই পুলিশের প্রাথমিক অনুমান হয়েছিল এটি নিছক দুর্ঘটনা ৷ কিন্তু পরবর্তীকালে এই ঘটনার উদঘাটনের জন্য তদন্ত করে পুলিশ ৷ পাশাপাশি এটা কি পরিকল্পিত খুন নাকি রয়েছে আরও কোনও রহস্য সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তাহেরপুর থানা। ইতিমধ্যে মহিলার দেহ কৃষ্ণনগরে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে ৷ 9 বছরের ছেলে মায়ে হারিয়েছে ৷ স্ত্রীর মৃত্যুর বিচার চাইছেন সুজন।