মালদা, 29 জুলাই: সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের দেওয়া প্রায় 25 হাজার ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে ৷ যার ফলে সরাসরি প্রভাব পড়েছে কয়েক লাখ মানুষের উপর ৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা ৷ এই ইস্যুতে এবার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছে ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া ৷
সোমবার মালদা কলেজ অডিটোরিয়ামের সানাউল্লাহ মঞ্চে দলের রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে একটি কনভেনশনের আয়োজন করা হয় ৷ তাতে অংশ নেন মালদা, মুর্শিদাবাদ ও দুই দিনাজপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা ৷ এই ইস্যুতে প্রত্যেকেই রাজ্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন ৷ এদিনের কনভেশনে যে আওয়াজ উঠেছে তাতে আগামীতে এনিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে রাজ্য সরকারকে ৷
বিষয়টি নিয়ে দলের রাজ্য সভাপতি মহম্মদ আরাফত আলি বলেন, "গত 22 মে কলকাতা হাইকোর্ট একটি রায়ে জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্য সরকারের দেওয়া ওবিসি এ ক্যাটাগরির প্রায় 25 হাজার শংসাপত্র বাতিল করা হল ৷ এই রায় রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণেই হয়েছে বলে আমরা মনে করি ৷ আদালতের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে ৷ তবু আমরা বলছি, এই রায় আমরা মানি না ৷ সমাজে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ এই ওবিসি শংসাপত্রের উপর ভরসা করেই কিছু পেতে চায়, পায়ও ৷ এটা তাদের অধিকার ৷ হাইকোর্টের রায়ে তাদের সেই অধিকার রদ হয়ে গিয়েছে ৷ আমরা এর প্রতিবাদ করছি ৷"
আরাফত আরও বলেন, "এই সরকার রাজ্য নয়, সার্কাস চালাচ্ছে ৷ প্রতিটি জায়গায় এরা অনিয়ম করছে আর সবাইকে আদালতে পাঠাচ্ছে ৷ কোনও নিয়ম না মেনেই রাজ্য সরকার গায়ের জোরে বাছবিচার না করে ওবিসি সার্টিফিকেট ইস্যু করেছে ৷ এই আইনের যেসব ভুল করা হয়েছে, বিধানসভায় সেসবের ক্লিয়ারেন্স না এনে যদি সুপ্রিম কোর্টে যায়, সেখানেও তাদের আবেদন বাতিল হয়ে যাবে ৷ আর এখানে এসে বলবে, আমি সংখ্যালঘুদের 90 শতাংশ কাজ করে দিয়েছি ৷ আমি 10 হাজার মাদ্রাসা দিয়েছি ৷ কিন্তু বাস্তব বলছে, আজ প্রায় 14 বছর ধরে মাদ্রাসায় একটিও নিয়োগ হয়নি ৷ আমাদের সাফ কথা, যাদের ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল হয়েছে, তাদের ফের সেই সার্টিফিকেটের আওতায় আনতে হবে ৷ সরকারের জন্য সার্টিফিকেট বাতিল হয়েছে, তা পুনর্বহাল করার দায়িত্বও সরকারের ৷ সেটা কীভাবে করা হবে তা সরকারের ব্যাপার ৷ নইলে আমরা কিন্তু মানুষকে নিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হব ৷"
হরিশ্চন্দ্রপুরের মহারাজনগর থেকে কনভেশনে যোগ দিতে এসেছিলেন মহম্মদ সাহেব ইসলাম ৷ তাঁর কথায়, "কিছুদিন আগে কলকাতা হাইকোর্ট 2010 সালের পর ইস্যু করা সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছে ৷ এর ফলে আমি-সহ প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষতির শিকার ৷ 1993 সালে ওবিসি সম্পর্কিত আইন রয়েছে ৷ কিন্তু তৃণমূল সরকার ওই আইন না মেনেই সার্টিফিকেট ইস্যু করায় হাইকোর্ট সেসব বাতিল করেছে ৷ যেহেতু সরকারের ভুলে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষতির মুখে, তাই আমাদের ওবিসি সার্টিফিকেট ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে ৷ আইন করে অথবা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সেই ব্যবস্থা করা হোক ৷ সেকারণেই আজ আমরা কনভেনশনে যোগ দিয়েছি ৷ এই দাবিতে আজ থেকে আমাদের আন্দোলন শুরু হল ৷ যতদিন না দাবি পূরণ হবে, ততদিন এই আন্দোলন চলবে ৷"
সংখ্যালঘুরা যে এ'রাজ্যে শাসকদলের মূল ভোট ব্যাংক, তা প্রমাণিত ৷ সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনেও তার প্রমাণ মিলেছে ৷ বিশেষত মালদা, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর ও নদিয়া-সহ কয়েকটি জেলায় সংখ্যালঘুরা দু'হাত তুলে তৃণমূলকে ভোট দেন ৷ বিধানসভা নির্বাচনের আর এক বছরও দেরি নেই ৷ ঠিক এই সময় ওবিসি সার্টিফিকেট নিয়ে ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়ার আন্দোলন যদি অন্য ছোট দলগুলিতেও সংক্রমিত হয়ে পড়ে, তবে কিন্তু সেটা শাসকদলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ৷
যদিও বিষয়টিকে পাত্তা দিতে নারাজ মালদা জেলা তৃণমূলের সভাপতি আবদুর রহিম বকসি ৷ তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "সংখ্যালঘু বলতে কী বোঝায় ? একটা সংখ্যালঘু নাম কোনও একটি সংগঠন খুলে দিলেই কি তারা সংখ্যালঘুদের মালিক হয়ে যায় ? সংখ্যালঘুরা কোনও সংখ্যালঘু সংগঠনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে না ৷ স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের যদি কোনও উন্নয়ন হয়ে থাকে তবে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন ৷ ওবিসি নিয়ে তিনিই বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে কাউকে ওবিসি সার্টিফিকেট থেকে বাদ দেওয়া যাবে না ৷ এনিয়ে তিনি কেন্দ্রের কোনও ফরমান মানবেন না ৷ আজ ওই কনভেনশনে হাতে গোনা ক'টি লোক গিয়েছিল তা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই ৷ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এর কোনও প্রভাবই পড়বে না ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের পাশে আছেন, থাকবেন ৷"