সোদপুর, 10 জানুয়ারি: আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় পাঁচ মাস কেটে গিয়েছে । কিন্তু সুবিচার এখনও মেলেনি । বিচারের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন অব্যাহত । এসবের মধ্যেই আরজি কর-কাণ্ডে আগামী 18 জানুয়ারি রায় ঘোষণা করতে চলেছে শিয়ালদা আদালত । তার আগে সিবিআই-কে নিশানা করে সরব হলেন আরজি করে নির্যাতিতার বাবা-মা । সিবিআইয়ের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের আঁতাতের অভিযোগও তুললেন তাঁরা ।
গত বছরের 9 আগস্ট আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় চিকিৎসক পড়ুয়ার নিথর দেহ । তাঁকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে । যা ঘিরে তোলপাড় হয় রাজ্য-রাজনীতি । প্রথমে কলকাতা পুলিশ তদন্ত করলেও পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ঘটনার তদন্তভার যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই’য়ের হাতে । এই পাঁচ মাসে আরজি কর-কাণ্ডে বহু আন্দোলন দেখেছে রাজ্যবাসী । সেই আন্দোলন ঘিরে তপ্ত হয়েছে বাংলা । বৃহস্পতিবার আরজি কর মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছে শিয়ালদা আদালত । এই খবর পাওয়ার পরও খুব একটা খুশি হলেন না আরজি করে নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা ।
নির্যাতিতার বাবা সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘‘বিচারের প্রথম সিঁড়ি পার করতে পারছি । 18 তারিখ যে রায় আসুক না কেন, আমরা চাই এর পিছনে যারা যারা যুক্ত, সবাইকে যেন সামনে এনে শাস্তি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় আরও তদন্তের জন্য আমরা হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি । বাকি অপরাধীদের সিবিআই সামনে আনবে, না অন্য কেউ আনবে সেটা আদালত দেখবে ৷ আমরা আর সিবিআইয়ের কাছে দরবার করব না। যা করার আদালতের কাছে করব ।”
|
আরজি কর-কাণ্ডে তাঁরা সিবিআই তদন্তের দাবি করেননি বলেও এদিন জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা । তাঁর কথায়, “সিবিআই এখন আমাদের প্রতিপক্ষ মনে করতে পারেন । এরকমই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে । আমাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিচ্ছে না । আমরা কখনও সিবিআই চাইনি । আমরা তদন্তের জন্য আদালতের কাছে ভালো তদন্তকারী সংস্থা চেয়েছিলাম । আদালতের উপর নির্ভর করেছিলাম । আদালত ভালো মনে করেছে, তাই সিবিআই দিয়েছে । আদালতকে জানিয়েছি, সিবিআই ভালো কাজ করছে না ।”
সিবিআইয়ের চার্জশিট নিয়েও এদিন ক্ষোভপ্রকাশ করেছে নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবার । নিহত চিকিৎসকের বাবা বলেন, ‘‘আদালতের সামনে যেসব স্ট্যাটাস রিপোর্ট দিয়েছিল সিবিআই, তাতে অবাক হয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরাও । কেউ বলেছিলেন 30 বছরের কর্মজীবনে এমন দেখিনি ।কিন্তু চার্জশিট দেওয়ার সময় তার প্রতিফলন দেখা যায়নি । কলকাতা পুলিশ যা করেছিল, তাতে সিলমোহর লাগিয়ে একটা ঢিলেঢালা চার্জশিট নিম্ন আদালতে দিয়েছে ।” একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘সিবিআই এই পাঁচ মাসে কিছু করেছে বলে মনে হয় না । সিবিআইয়ের তো কোনও ব্যাপার রয়েছে ।” তবে তিনি আশাবাদী, এরপর আদালত যেমন নির্দেশ দেবে, তেমনই কাজ করতে হবে সিবিআইকে ।
অন্যদিকে, রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সিবিআইয়ের ‘সেটিং’ নিয়ে এদিন বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতার মা । তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশ যা করেছিল, পাঁচ মাসে সেটাতেই তকমা লাগিয়েছে সিবিআই । ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার একা দোষী, সেটাই প্রমাণ করেছে । কিন্তু আমরা মনে করি, ওই সিভিক ভলান্টিয়ার একা কিছুতেই একাজ করতে পারে না । হাসপাতালের কেউ যুক্ত না-থাকলে, বাইরে থেকে একজন এসে ধর্ষণ-খুন করে চলে যাবে, এটা কেউ বিশ্বাস করবে না । আমাদের মনে হচ্ছে, সেটিং হয়ে সিবিআইকে চার্জশিট দিতে দিল না ।”