বাঁকুড়া, 21 সেপ্টেম্বর: আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ করায় দুই ছাত্রীকে ক্লাস থেকে বের করে দিলেন 'গুণধর' অধ্যাপক ৷ তিনি আবার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীও বটে ৷ শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়া সারদামনি মহিলা মহাবিদ্যাপীঠে ৷ তৃণমূলী অধ্যাপকের নাম শ্যামল সাঁতরা ৷ তিনি ওই কলেজের ভূগোলের বিভাগীয় প্রধান ৷ তাঁর অবশ্য দাবি, প্রতিবাদের নামে আসলে অরাজকতা চলছিল ৷ তাই 2 ছাত্রীকে তিনি ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছেন ৷
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসাপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল দেশ ৷ গত এক মাস ধরে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলছে ৷ জুনিয়র ডাক্তার থেকে স্কুল ও কলেজের পড়ুয়ারও এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন ৷ সেখানে থেকে বাদ নেই বাঁকুড়া সারদামনি মহিলা মহাবিদ্যাপীঠের ছাত্রীরা ৷ তারই খেসারত দিতে হল দুই ছাত্রীকে ৷ তৃণমূলের অধ্যাপকের রোষের মুখে পড়লেন তাঁরা ৷
প্রতিবাদী ছাত্রীদের কথায়, "আমরা কলেজের গেটের বাইরে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন ও রাস্তায় গ্রাফিতি করি ৷ তার জন্য গতকাল শ্যামল সাঁতরা স্যার আমাদের ক্লাস থেকে বের করে দেন ৷ আমরা এমনকী ওঁকে প্রশ্নও করি যে, আরজি-কাণ্ডের প্রতিবাদ করা ন্যায় না অন্যায় ৷ উনি কিছু উত্তর না দিয়ে আমাদের ক্লাস থেকে বের করে দেন ৷ অধ্যক্ষ মহাশয়ের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলাম ৷ তিনি বললেন, এটা নির্দিষ্ট বিভাগের বিষয় ৷ নিজেরাই মিটিয়ে নাও ৷"
যদিও ছাত্রীদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসতেই কলেজের মূল গেটের সামনে বিক্ষোভ করেন পড়ুয়ারা ৷ এই মর্মে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে একটা একটা ডেপুটেশনও জমা দেন তাঁরা । সারদামনি মহিলা মহাবিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবব্রত মুখোপাধ্যায়কে বলেন, "বিষয়টি খতিয়ে দেখে সমাধান করার চেষ্টা করা হবে ।"
জানা গিয়েছে, এর আগেও শ্যামল সাঁতরার বিরুদ্ধে থ্রেট কালচারের অভিযোগ রয়েছে ৷ ছাত্রীদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে তাঁর অবশ্য সাফাই, "ক্লাসে একমাস ধরে অরাজকতা চলছিল ৷ ওই ছাত্রীরা কলেজে এসে টাকা তুলে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন করছিল ৷ তাই বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের ক্লাসে আসতে বারণ করা হয়েছে । সুস্থ ক্লাসরুমকে অস্থির করার চেষ্টা করা হয়েছে ৷"
তবে বাঁকুড়া সারদামনি মহিলা মহাবিদ্যাপীঠের এই ঘটনার নিন্দার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে ৷ সরব হয়েছেন বিরোধী দলের নেতারা ৷ এই বিষয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল বলেন, "এই ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই কোনও ঘটনার প্রতিবাদ করলে একটা হুমকির বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ৷" সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, "একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে অশিক্ষিতের মত আচরণ করেছেন ৷ একটা মানুষ প্রতিবাদ করলে তাঁকে ক্লাস থেকে বের করে দিতে হয়, এই ঘৃন্ন কালচারের আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ৷"