বারাসত, 22 সেপ্টেম্বর: সোনার কারিগর থেকে কোটিপতি ! ত্রিপুরার ব্যবসায়ীর অপহরণ-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ধৃত তৃণমূল কাউন্সিলর মিলন সর্দারের 'কীর্তি'র যেন শেষ নেই ৷ পুরসভার চেয়ারম্যান ঘনিষ্ঠ শাসকদলের এই কাউন্সিলরের গ্রেফতারির পর থেকে তাঁর বিভিন্ন 'কীর্তি'র কথা প্রকাশ্যে আসছে ! আবাস যোজনার টাকা নয়ছয় থেকে শুরু করে ক্ষমতার বলে নামে-বেনামে বিপুল সম্পত্তির মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল আগেই ৷ এবার জানা গেল এলাকার প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলরকে মদের দোকান খুলতে টাকাও দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
অভিযোগ, 2017 সালে জনবহুল এলাকায় মদের দোকান খুলতে প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর রত্না ভট্টাচার্যকে চাপ দেন মিলন ৷ এমনকী এক ব্যবসায়ীর হয়ে তাঁকে মোটা টাকা দেওয়ার প্রলোভনও তিনি দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ৷ মিলন সর্দারের বিরুদ্ধে ওঠা এই নতুন অভিযোগে এখন শোরগোল উত্তর 24 পরগনার সদর শহর বারাসতে ৷ পালটা সিপিএমের প্রাক্তন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে 'ঘোলা জলে মাছ ধরার' অভিযোগ তুলেছেন বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় ৷
স্থানীয় সূত্রে খবর, তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর রত্না ভট্টাচার্য, সেই ঘটনাটি ঘটেছিল 2017 সালে ৷ সেই সময় 10 নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর ছিলেন তিনি ৷ সাত বছর আগে তাঁর ওয়ার্ডেই মদের দোকান খোলার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন মিলন সর্দারের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী ৷ জনবহুল বারাসত স্টেশনের ঠিক পাশেই ন'পাড়া এলাকায় সেই মদের দোকান খুলতে চেয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু, এর বিরুদ্ধে প্রবল জনরোষ তৈরি হলে পিছু হঠতে বাধ্য হন ব্যবসায়ী ৷ অভিযোগ, পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ওই ব্যবসায়ীর হয়ে স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলরের উপর চাপ তৈরি করেছিলেন এই মিলন সর্দার ৷
তখন মিলন পাশের 33 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ছিলেন ৷ রত্না ভট্টাচার্যের উপর শুধু চাপ দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি মিলন ৷ অভিযোগ, ফোন করে তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে মোট টাকার প্রলোভনও দিয়েছিলেন ৷ আর সেই অভিযোগ, এখন সামনে আসতেই জোর শোরগোল পড়ে গিয়েছে বারাসতের রাজনীতির অন্দরে ৷
কিন্তু, প্রশ্ন হল বিরোধী সিপিএম কাউন্সিলরের ওয়ার্ড হওয়া সত্ত্বেও, তিনি কীভাবে সেখানে বেআইনি একটি মদের দোকান খুলতে 'মাতব্বরি' করার সাহস দেখাতে পারলেন ? তাহলে কী তাঁর পিছনে শাসকদলের প্রভাবশালী কোনও নেতার হাত ছিল ? যে কারণে তিনি এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন ? নাকি মিলনের অপকর্মের বিষয়ে সবকিছু জেনেও চুপচাপ ছিল তৃণমূল নেতৃত্ব ? এমনই সব প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে ৷ যদিও, ব্যবসায়ীর অপহরণ-কাণ্ডে দলীয় কাউন্সিলর মিলন সর্দার গ্রেফতার হতেই তাঁর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করেছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব ৷
সিপিএমের প্রাক্তন কাউন্সিলর রত্না ভট্টাচার্য বলেন, " মিলন সর্দার সেসময় আমাকে ফোন করে ডেকে এনে বলে, মদের দোকানটা চালু করতে হবে ৷ তার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে প্রস্তুত মদের দোকানের মালিক ৷ তখনই আমি ওকে পরিষ্কার জানিয়ে দিই, জনবহুল এলাকায় মদের দোকান খুলতে দেব না ৷ একপ্রকার আমাদের চাপেই সেই সময় স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় মদের দোকান খোলা আর সম্ভব হয়নি ৷ ওর এত বাড়বাড়ন্ত তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতাদের প্রশয়েই ৷ তাই অপহরণের ঘটনায় সেই সমস্ত নেতাদেরও কোনও যোগ আছে কিনা, তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন ৷ সিআইডি সেটা খতিয়ে দেখুক, সেটাই আমরা চাই ৷"
অন্যদিকে, মিলন সর্দারের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগের দায় এখন ঝেড়ে ফেলতে তৎপর স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ এ-প্রসঙ্গে বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, "মিলন সর্দার কোনও রাজনৈতিক চরিত্র নন ৷ রাজনীতি থেকে উঠে আসা ব্যক্তিও নন ৷ 2015 সালে ওকে কেউ সেভাবে চিনত না ৷ রত্না ভট্টাচার্য কীভাবে চিনলেন, সেটা উনিই ভালো বলতে পারবেন ৷ ওঁর সঙ্গে কী ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, যে সিপিএমের একজন ডাকসাইটে নেত্রীর কাছে টাকার অফার নিয়ে পৌঁছে গেলেন মিলন ! আমরা সেটাও দেখতে চাই ৷ উনি এখন ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছেন ৷ এটাই সিপিএমের অভ্যাস ৷"