ভাটপাড়া, 22 সেপ্টেম্বর: এলাকার কর্তৃত্ব কিংবা দলেরই বিরোধী গোষ্ঠীকে দাঁত ফোটাতে না দেওয়া নিয়ে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয় ৷ কিন্তু, তৃণমূলেরই কাউন্সিলর আরও এক কাউন্সিলরকে খুন করার সুপারি দিচ্ছেন, তা সচরাচর শোনা যায় না ৷ বাস্তবে এবার সেই ঘটনারই সাক্ষী থাকল ভাটপাড়া।
সম্প্রতি, একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে (যার সত্যতা যাচাই করেনি ইটিভি ভারত)। যে ভিডিয়োয় মহম্মদ মুমতাজ নামে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, সাহেব নামে কোনও ব্যক্তিকে খুন করার পরিকল্পনার কথা। সেই খুনের জন্য ভিন রাজ্য থেকে সুপারি কিলার ভাড়া করে নিয়ে আসা হবে বলেও ওই ভাইরাল ভিডিয়োয় বলতে শোনা যাচ্ছে ৷ ভাইরাল ভিডিয়োর অপর একটি অংশে খুনের বরাত দেওয়ার জন্য গোপাল নামে এক ব্যক্তির কথাও শোনা যাচ্ছে ৷ আর এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে ভাটপাড়া পুরসভা এলাকায়।
ভাইরাল ভিডিয়োয় যে 'সাহেবদা' এবং 'গোপালদা'-র কথা বলছেন ওই ব্যক্তি, তাঁরা দু'জনেই শাসকদলের কাউন্সিলর। বর্তমানে সাহেব অর্থাৎ নুরে জামাল ভাটপাড়া পুরসভার 8 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। তিনি আবার পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের পুরপারিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও রয়েছেন। অন্যদিকে, গোপাল রাউত ভাটপাড়া পুরসভার 2 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। যাঁর বিরুদ্ধেই দলীয় কাউন্সিলর নুরে জামালকে খুনের ছক কষার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু, কীভাবে সামনে আসল গোটা ঘটনাটি ? জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে মহম্মদ মুমতাজ নামে ওই ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ মাদক-সহ গ্রেফতার করেছিল ভাটপাড়া থানার পুলিশ। তখনই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কাউন্সিলরের খুনের পরিকল্পনার বিষয়টি স্পষ্ট হয় পুলিশের কাছে।
তবে যে ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়েছে সেটি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন নাকি তার আগের, তা নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা রয়েছে। ভাইরাল ভিডিয়োয় ওই ব্যক্তিকে আরও যে বিষয়গুলো বলতে শোনা যাচ্ছে তার মধ্যে উল্লেকযোগ্য, নুরে জামালকে আর পিকে-কে খুন করার জন্য তাকে চাপ দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে অগ্রিম হিসেবে দেড় লক্ষ টাকা এবং কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আরও সাড়ে আট লক্ষ টাকা দেওয়ার কথাও তাকে বলা হয়েছিল ৷ খুনের সুপারির জন্য নিজাম বলে এক দুষ্কৃতীকে ডাকা হয়েছিল লুধিয়ানা থেকে। গোপাল পরে অবশ্য খুনের পরিকল্পনার বিষয়টি আপাতত স্থগিত রেখে শুধু হুমকি দিতে বলেন বলে দাবি।
এদিকে, এই বিষয়ে সরাসরি ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংয়ের চক্রান্ত রয়েছে বলে দাবি করেছেন জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। তিনি বলেন, "ভাইরাল ভিডিয়োয় যে নামগুলো শোনা যাচ্ছে তাঁরা সকলেই রাজু হিটারের ঘনিষ্ঠ। এই রাজু হিটারের সঙ্গে আবার সখ্যতা রয়েছে বিজেপি নেতা অর্জুন সিংয়ের। তাঁর বাড়ি এবং গাড়িতে সবসময় ঘোরাফেরা করে রাজু হিটার। তাই, এর পিছনে যে সরাসরি অর্জুনের হাত রয়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। পুলিশ প্রশাসনকে সবটাই জানিয়েছি। তাঁরা গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে।" তবে এর পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের রয়েছে কি না, সেনিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি সোমনাথ। অন্যদিকে, বিষয়টি সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন অর্জুন সিং ৷ পাল্টা তৃণমূলের ঘাড়েই গোটা ঘটনার দায়ভার চাপিয়েছেন তিনি ৷