বারাসত, 20 সেপ্টেম্বর: ব্যবসায়ীর অপহরণ-কাণ্ডে তৃণমূল কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করল সিআইডি ৷ ধৃত মিলন সর্দার বারাসত পুরসভার 2 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ৷ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সিআইডির একটি টিম হানা দেয় বারাসতের দ্বিজহরি দাস কলোনিতে ৷ সঙ্গে ছিল স্থানীয় থানার পুলিশও ৷ সেখানে তাঁর বাড়ি থেকেই হাতেনাতে পাকড়াও করা হয় শাসকদলের এই কাউন্সিলরকে। গ্রেফতার করার পরেই বারাসত থানা থেকে তাঁকে সোজা ভবানী ভবনে নিয়ে চলে যান সিআইডি কর্তারা। ব্যবসায়ী অপহরণ-কাণ্ডে ধৃত তৃণমূল কাউন্সিলর মিলন সর্দারকে শুক্রবার দুপুরে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ন'দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
সিআইডি সূত্রে খবর, ত্রিপুরার ওই ব্যবসায়ীর অপহরণের ঘটনায় মূলচক্রী হিসেবে এফআইআর-এ নাম ছিল তৃণমূল কাউন্সিলর মিলন সর্দারের।ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন তিনি ৷ তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজলেও এতদিন কোনও নাগাল পাননি তদন্তকারীরা ৷ এদিন রাতে কাউন্সিলর মিলন সর্দারের এলাকায় ঢোকার খবর পেতেই সেখানে হানা দেন সিআইডি কর্তারা ৷ আর তাতেই ধরা পড়ে যান শাসকদলের এই ডাকাবুকো কাউন্সিলর। এই ঘটনায় অস্বস্তির মুখে পড়ে তড়িঘড়ি তৃণমূল কাউন্সিলরকে ছেঁটে ফেলা হয় দল থেকে ৷ দলবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ধৃত মিলন সর্দারকে বহিষ্কারও করা হয়েছে তৃণমূল পার্টি থেকে ৷ এমনটাই জানিয়েছেন দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তিনি স্পষ্টত জানান, "এই ধরণের ঘটনা কোনও মতেই বরদাস্ত করবে না দল।"
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, 2 সেপ্টেম্বর ত্রিপুরার ওই ব্যবসায়ী অপহৃত হয়েছিলেন সোদপুরে তাঁর এক পরিচিতের বাড়ি থেকে ৷ অভিযোগ, সেদিন তিনি যখন আবাসনের নীচে পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৷ তখন হঠাৎই কয়েকজন অস্ত্র দেখিয়ে তাঁকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় ৷ এরপর সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয় বারাসতের একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে ৷ বারাসতের ওই ফ্ল্যাটে আটকে রাখার আগে অপহৃত ব্যবসায়ীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দত্তপুকুরে একটি বাগান বাড়িতে ৷ কিন্তু, সেখানকার পরিস্থিতি অনুকূল না-হওয়ার আশঙ্কায় বারাসতের ওই ফ্ল্যাটে তাঁকে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা।
সূত্রের খবর, ওই ফ্ল্যাটে বসেই ব্যবসায়ীর জন্য মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ চাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু, সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় সিআইডি-র গোয়েন্দাদের তৎপরতায় ৷ অপহরণের ঠিক একদিনের মাথাতেই বারাসতের ওই ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় ত্রিপুরার ব্যবসায়ীকে।ঘটনাস্থল থেকেই সিআইডি-র হাতে গ্রেফতার হয় ছ’জন ৷ যারা সকলেই ওই অপহরণ চক্রের সঙ্গে যুক্ত। পরে গ্রেফতার করা হয় গাড়ির চালককেও।বর্তমানে এই সাত জনই সিআইডি হেফাজতে। এদের মধ্যে একজন আবার প্রাক্তন পুলিশকর্মীও।
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লু-প্রিন্ট থেকে অপহরণের দল তৈরির পরিকল্পনা অথবা অপহৃত ব্যবসায়ীকে ফ্ল্যাটে রাখার ছক, সবকিছুই এই তৃণমূল কাউন্সিলরের মস্তিষ্কপ্রসূত ৷ নিখুঁত এই পরিকল্পনা করেও শেষরক্ষা হল না। সিআইডির হাতে ধরা পড়ল পলাতক তৃণমূল কাউন্সিলর ৷ অপহরণ-কাণ্ডে যেহেতু খড়দা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ৷ সেহেতু শাসকদলের ধৃত কাউন্সিলরকে নিজেদের হেফাজতে নিতে শুক্রবার তাঁকে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে পেশ করবে সিআইডি।