কলকাতা, 27 নভেম্বর: ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়েছিলেন কলকাতা পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়াররা ৷ কিন্তু, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শুনতে হল কাউন্সিলরের গালিগালাজ, সঙ্গে হুমকিও ! ঘটনাটি ঘটেছে মেটিয়াবুরুজ এলাকায় 137 নম্বর ওয়ার্ডে ৷ এই নিয়ে কলকাতা পুরনিগমের চেয়ারপার্সন এবং মেয়রের কাছে অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার সংগঠনের সদস্যরা ৷
এ নিয়ে ফিরহাদ হাকিমকে প্রশ্ন করা হলে ইঞ্জিনিয়ারদের পক্ষেই কথা বলতে শোনা গেল তাঁকে ৷ তিনি বলেন, "ইঞ্জিনিয়াররা উঁচুতলার নির্দেশ পালন করেন ৷ আমরা জনপ্রতিনিধিরা সুনাম অর্জন করি তাঁদের কাজে ৷ তাঁরা কেবল নির্দেশ পালন করতে গিয়েছিলেন ৷ এটা হয়ে থাকলে খুব খারাপ হয়েছে ৷ কোনও জনপ্রতিনিধিই সরকারি কর্মীর সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারেন না ৷ আর আমরা চাই না, মেটিয়াবুরুজে আরেকটা বহুতল ভেঙে পড়ুক ৷ তাই বেআইনি কাজ আটকানো আমাদের কাজ ৷ আর প্রশাসনের উচিত তাতে সাহায্য় করা ৷"
মঙ্গলবার মেটিয়াবুরুজের মসজিদ তালাব লেনের একটি বেআইনি বহুতল ভাঙতে যান কলকাতা পুরনিগমের চার ইঞ্জিনিয়ার ৷ সঙ্গে ছিল পুলিশ বাহিনীও ৷ অভিযোগ, শুরুতেই ওই বেআইনি বহুতলের বাসিন্দারা বাধা দেন ৷ তবে, পুলিশ দিয়ে তাঁদের আটকানো হয় ৷
কিন্তু, শ্রমিকরা ভাঙার কাজ শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হন 137 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ওয়াসিম আনসারি ৷ অভিযোগ, শাসকদলের কাউন্সিলর পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়ারদের কাজে বাধা দেন ৷ অশালীন ভাষায় তাঁদের গালিগালাজ করতে থাকেন তিনি ৷ এরপর তাঁর দলবল নিয়ে সরকারি আধিকারিকদের মারধরের হুমকি দেন তিনি ৷ এমনকি তাঁর ফোনে একটি ডকুমেন্ট দেখিয়ে, সেটিকে আদালতের স্থগিতাদেশ বলে দাবি করেন কাউন্সিলর ৷
একইভাবে কলকাতা পুরনিগমের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা মোহাম্মদ মোক্তারের বিরুদ্ধেও ৷ কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, 15 নম্বর বরোর 137 নম্বর ওয়ার্ডের R128 মসজিদ তলাব লেনে একটি বেআইনি বহুতল নির্মাণ হয় ৷ পুর আইনের 401 ধারায় কাজ বন্ধ করার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল আগেই ৷
অভিযোগ, সেই নোটিশের তোয়াক্কা না-করেই পাঁচতলা বহুতলটি গড়ে উঠেছে ৷ সেই কারণেই 400 (8) ধারা প্রয়োগ করে, স্থানীয় থানার পুলিশ বাহিনী নিয়ে মঙ্গলবার ওই বাড়িটি ভাঙার জন্য যান ইঞ্জিনিয়াররা ৷ সেখানেই কাউন্সিলরের বাধার মুখে পড়তে হয় তাঁদের ৷ তবে, পুরো ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত পুলিশ আধিকারিকদের নীরব দর্শকদের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ ৷
যদিও, কাউন্সিলর ওয়াসিম আনসারি দাবি, সেটি তাঁর পরিচিত ব্যক্তির বাড়ি ৷ তিনি গিয়েছিলেন বলতে যে, আদালত বাড়ি ভাঙার বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিয়েছে ৷ তারপরেও কেন ভাঙা হচ্ছিল! কিন্তু, তিনি কোনও প্রকার হুমকি বা গালিগালাজ করেননি বলে দাবি তৃণমূল কাউন্সিলরের ৷ এই কাউন্সিলর স্বয়ং মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে ৷
অন্যদিকে, অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতা মোহাম্মদ মোক্তার বলেন, "এর আগের কাউন্সিলর রহমত আনসারি সময় বেআইনি নির্মাণ হয়েছে ৷ তখন ভাঙেনি ৷ এখন বেআইনি বলে পুরনিগম ভাঙতে এসেছে ! যাঁরা থাকেন তাঁরা গরিব মানুষ ৷ কোথায় যাবেন ? ওরা কোনও কাগজ দেখাতে পারেনি ৷"
এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়ারদের সংগঠন কেএমসি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যালায়েড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মানস সিনহা বলেন, "ভিডিয়ো আমাদের কাছে এসেছে ৷ জনপ্রতিনিধিরা আইন প্রণয়ন করেন, তাঁদের মুখে এই ভাষা ৷ কলকাতার নাগরিকরা কাদের নির্বাচিত করে পাঠিয়েছেন ! প্রশাসনের সঙ্গে নাগরিকদের যাঁরা লিয়াজো করবেন, তাঁরা এই ব্যবহার করছেন ৷ আইনকে কার্যকর করতে গিয়ে পুর প্রতিনিধিদের দ্বারা নিগৃহীত হতে হচ্ছে কলকাতা পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীদের ৷"
এ নিয়ে তিনি আরও বলেন, "এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ৷ পুলিশ ছাড়া আমরা একটি বিল্ডিংও ভাঙতে যাই না ৷ বিল্ডিং আইন সকলেই জানেন ৷ সেই মতো কাজ করা হয় ৷ যে নির্দেশ উচ্চতর কর্তৃপক্ষ পাঠায়, সেটাই বাস্তবায়ন করেন ইঞ্জিনিয়ার ৷ এজেন্সি মারফত ভাঙার কাজ হয় ৷ সেটা সুপারভাইস করেন ইঞ্জিনিয়াররা ৷ আমরা পুর প্রতিনিধির এই আচরণ নিয়ে, মালা রায় কলকাতা পুরনিগমের চেয়ারপার্সন এবং মেয়র ফিরাদ হাকিমকে জানাব ৷"