ETV Bharat / state

মহাকুম্ভের নামেই ফিরল স্মৃতি, 15 বছর পর রানিগঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরছেন অর্জুন - MAHAKUMBH BRINGS BACK MEMORY

বিহারের কোডারমার বাসিন্দা অর্জুন মাহাতো ৷ স্মৃতি হারিয়ে রানিগঞ্জে আসেন 15 বছর আগে ৷ শুক্রবার বাড়ি ফিরলেন তিনি ৷

MAHAKUMBH BRINGS BACK MEMORY
রানিগঞ্জে স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অর্জুন মাহাতো৷ (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 7, 2025, 3:46 PM IST

আসানসোল, 7 ফেব্রুয়ারি: কুম্ভমেলায় হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে আকছার নানা গল্প শোনা যায় । কিন্তু কুম্ভমেলার নাম শুনে কারও স্মৃতিশক্তি ফিরে আসার ঘটনা একেবারেই ব্যতিক্রম । আর সেই ব্যতিক্রমী ঘটনাই ঘটেছে পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জে ৷

প্রায় 15 বছর আগে স্মৃতিভ্রংশ হয়ে রাস্তা ভুল করে রানিগঞ্জের রানিসায়ের মোড়ে চলে এসেছিলেন বিহারের কোডারমার বাসিন্দা অর্জুন মাহাতো । নিজের নামটুকুও ভুলে গিয়েছিলেন তিনি । তারপর থেকে স্থানীয় একটি হোটেলে কাজ করতেন ওই ব্যক্তি । হোটেলের কর্মচারীদের সঙ্গে তিনি পরিবারের মতোই থাকতেন ।

মহাকুম্ভের নামেই ফিরল স্মৃতি, 15 বছর পর রানিগঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরছেন অর্জুন (ইটিভি ভারত)

যেহেতু তাঁর নাম জানা ছিল না, তাই স্থানীয় বাসিন্দারা ভালোবেসে তাঁর নাম দিয়েছিলেন পহেলওয়ান । কিন্তু বুধবার রাতে জানা গেল পহেলওয়ানের আসল নাম অর্জুন মাহাতো ৷ বাড়ি বিহারের কোডারমায় ৷ যে হোটেলে তিনি কাজ করেন, সেখানকার কর্মচারীরা নিজেদের মধ্যে কুম্ভমেলায় যাওয়ার আলোচনা করছিলেন । আর সেই সময় কোডারমা শব্দটি কানে আসতেই নিজের বাড়ির সমস্ত কিছু মনে পড়ে যায় পহেলওয়ানের ।

নিজেই বাড়ির ঠিকানা, পরিবারের লোকেদের নাম, এমনকী স্ত্রীর নামও গড়গড় করে বলতে শুরু করেন তিনি । হোটেলের কর্মচারী সুমিত গুপ্তা বলেন, "আমরা কুম্ভমেলা যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম । সেই সময় কোডারমা দিয়ে যাওয়ার কথা বলতেই পহেলওয়ানজি বলে ওঠেন, ‘কোডারমাতে আমার বাড়ি’ । আমরা তখন অবাক হয়ে যাই । তাঁকে বলতে শুরু করি কোডারমায় কোথায় বাড়ি ? তারপর তিনি একে একে সমস্ত তথ্য জানাতে শুরু করেন । তাঁর বাড়ির লোকেদের নাম, তাঁর স্ত্রীর নাম, সন্তানের নাম সবকিছু বলেন ধীরে ধীরে ।’’

Mahakumbh Brings Back Memory
রানিগঞ্জে স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অর্জুন মাহাতো৷ (নিজস্ব ছবি)

সুমিত আরও বলেন, ‘‘এরপর গুগল থেকে নম্বর নিয়ে আমি কোডারমা থানায় ফোন করি । তারপর সংশ্লিষ্ট থানার ফোন নম্বর দেওয়া হয় । সেখান থেকেই পুলিশের সঙ্গে কথা হয় । পুলিশ তাঁর পরিবারকে জানায় । পরিবারের লোক আমাদেরকে ফোন করেন এবং ওঁর সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলেন । সে এক আনন্দের অনুভূতি । বলে বোঝানো যাবে না ।’’

এর পর দুই রাজ্যের পুলিশের সমন্বয়ে অর্জুন মাহাতোকে বাড়ি ফেরানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় ৷ রানিগঞ্জ থানার পুলিশ জানিয়েছে, সমস্ত তথ্য এবং নথি দেখার পরই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে পহেলওয়ানই অর্জুন মাহাতো ৷ তারপরেই পরিবারের হাতে অর্জুন মাহাতোকে তুলে দেওয়া হয়েছে । এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘উনি বাড়ি ফিরছেন । ভালো থাকুন ।’’

আর যাঁকে নিয়ে এত ঘটনা, সেই অর্জুন মাহাতো তো লজ্জায় কথাই বলতে চাইছিলেন না প্রথমে । অনেক প্রশ্নের পর কোনোমতে বলেন, "কীভাবে যে কী হয়ে গিয়েছিল, কাজে যাওয়ার সময় ট্রেন থেকে নেমে গিয়েছিলাম, আর কিছুই মনে নেই। আজ বাড়ি ফিরছি । এত বছর পর খুব ভালো লাগছে ।"

Mahakumbh Brings Back Memory
রানিগঞ্জে স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অর্জুন মাহাতো৷ (নিজস্ব ছবি)

একই সঙ্গে তিনি জানালেন, কলকাতায় পার্ক সার্কাস এলাকায় ঝাড়ুদারের কাজ করতেন তিনি ৷ 15 বছর আগে বাড়ি থেকে কলকাতায় কাজের স্থলে যাওয়ার সময় মাঝরাস্তায় তাঁর স্মৃতিভ্রংশ হয়ে যায় । এরপর কোনোভাবে তিনি রানিগঞ্জে রানিসায়ের মোড়ে চলে আসেন । কিছুতেই আর কিছু মনে করতে পারেননি ।

15 বছর পর তাঁর স্মৃতি ফিরে আসায় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছেন পহেলওয়ানের স্ত্রী গীতা দেবী ৷ শুক্রবার তাঁকে বাড়ি ফেরানোর জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে রানিগঞ্জ এসেছিলেন গীতা দেবী ৷ তিনি বলেন, "ঈশ্বরের অমোঘ লীলা ছাড়া এটা কখনোই সম্ভব নয় । আমি কোনোদিন কুম্ভমেলা যাইনি ৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওকে নিয়ে এবার কুম্ভমেলায় যাব ।"

পহেলওয়ান পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ায় স্থানীয়রা সকলেই খুশি ৷ তবে এতদিন পর তিনি চলে যাচ্ছেন, তাই কিছুটা হলেও মন খারাপ রানিসায়র মোড় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের ৷ তাঁদেরই একজন সাধন কুমার ৷ তিনি বলেন, "পহেলওয়ানজি আমাদের পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিলেন । ওঁর মতো ভালো মানুষ হয় না । আজ উনি বাড়ি ফিরছেন । কিন্তু আমাদেরও মন খারাপ হচ্ছে, এতদিনের সম্পর্ক । যাইহোক মাঝে মাঝে উনি যেন আসেন, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, এটাই চাইবো ।"

আসানসোল, 7 ফেব্রুয়ারি: কুম্ভমেলায় হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে আকছার নানা গল্প শোনা যায় । কিন্তু কুম্ভমেলার নাম শুনে কারও স্মৃতিশক্তি ফিরে আসার ঘটনা একেবারেই ব্যতিক্রম । আর সেই ব্যতিক্রমী ঘটনাই ঘটেছে পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জে ৷

প্রায় 15 বছর আগে স্মৃতিভ্রংশ হয়ে রাস্তা ভুল করে রানিগঞ্জের রানিসায়ের মোড়ে চলে এসেছিলেন বিহারের কোডারমার বাসিন্দা অর্জুন মাহাতো । নিজের নামটুকুও ভুলে গিয়েছিলেন তিনি । তারপর থেকে স্থানীয় একটি হোটেলে কাজ করতেন ওই ব্যক্তি । হোটেলের কর্মচারীদের সঙ্গে তিনি পরিবারের মতোই থাকতেন ।

মহাকুম্ভের নামেই ফিরল স্মৃতি, 15 বছর পর রানিগঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরছেন অর্জুন (ইটিভি ভারত)

যেহেতু তাঁর নাম জানা ছিল না, তাই স্থানীয় বাসিন্দারা ভালোবেসে তাঁর নাম দিয়েছিলেন পহেলওয়ান । কিন্তু বুধবার রাতে জানা গেল পহেলওয়ানের আসল নাম অর্জুন মাহাতো ৷ বাড়ি বিহারের কোডারমায় ৷ যে হোটেলে তিনি কাজ করেন, সেখানকার কর্মচারীরা নিজেদের মধ্যে কুম্ভমেলায় যাওয়ার আলোচনা করছিলেন । আর সেই সময় কোডারমা শব্দটি কানে আসতেই নিজের বাড়ির সমস্ত কিছু মনে পড়ে যায় পহেলওয়ানের ।

নিজেই বাড়ির ঠিকানা, পরিবারের লোকেদের নাম, এমনকী স্ত্রীর নামও গড়গড় করে বলতে শুরু করেন তিনি । হোটেলের কর্মচারী সুমিত গুপ্তা বলেন, "আমরা কুম্ভমেলা যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম । সেই সময় কোডারমা দিয়ে যাওয়ার কথা বলতেই পহেলওয়ানজি বলে ওঠেন, ‘কোডারমাতে আমার বাড়ি’ । আমরা তখন অবাক হয়ে যাই । তাঁকে বলতে শুরু করি কোডারমায় কোথায় বাড়ি ? তারপর তিনি একে একে সমস্ত তথ্য জানাতে শুরু করেন । তাঁর বাড়ির লোকেদের নাম, তাঁর স্ত্রীর নাম, সন্তানের নাম সবকিছু বলেন ধীরে ধীরে ।’’

Mahakumbh Brings Back Memory
রানিগঞ্জে স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অর্জুন মাহাতো৷ (নিজস্ব ছবি)

সুমিত আরও বলেন, ‘‘এরপর গুগল থেকে নম্বর নিয়ে আমি কোডারমা থানায় ফোন করি । তারপর সংশ্লিষ্ট থানার ফোন নম্বর দেওয়া হয় । সেখান থেকেই পুলিশের সঙ্গে কথা হয় । পুলিশ তাঁর পরিবারকে জানায় । পরিবারের লোক আমাদেরকে ফোন করেন এবং ওঁর সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলেন । সে এক আনন্দের অনুভূতি । বলে বোঝানো যাবে না ।’’

এর পর দুই রাজ্যের পুলিশের সমন্বয়ে অর্জুন মাহাতোকে বাড়ি ফেরানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় ৷ রানিগঞ্জ থানার পুলিশ জানিয়েছে, সমস্ত তথ্য এবং নথি দেখার পরই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে পহেলওয়ানই অর্জুন মাহাতো ৷ তারপরেই পরিবারের হাতে অর্জুন মাহাতোকে তুলে দেওয়া হয়েছে । এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘উনি বাড়ি ফিরছেন । ভালো থাকুন ।’’

আর যাঁকে নিয়ে এত ঘটনা, সেই অর্জুন মাহাতো তো লজ্জায় কথাই বলতে চাইছিলেন না প্রথমে । অনেক প্রশ্নের পর কোনোমতে বলেন, "কীভাবে যে কী হয়ে গিয়েছিল, কাজে যাওয়ার সময় ট্রেন থেকে নেমে গিয়েছিলাম, আর কিছুই মনে নেই। আজ বাড়ি ফিরছি । এত বছর পর খুব ভালো লাগছে ।"

Mahakumbh Brings Back Memory
রানিগঞ্জে স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অর্জুন মাহাতো৷ (নিজস্ব ছবি)

একই সঙ্গে তিনি জানালেন, কলকাতায় পার্ক সার্কাস এলাকায় ঝাড়ুদারের কাজ করতেন তিনি ৷ 15 বছর আগে বাড়ি থেকে কলকাতায় কাজের স্থলে যাওয়ার সময় মাঝরাস্তায় তাঁর স্মৃতিভ্রংশ হয়ে যায় । এরপর কোনোভাবে তিনি রানিগঞ্জে রানিসায়ের মোড়ে চলে আসেন । কিছুতেই আর কিছু মনে করতে পারেননি ।

15 বছর পর তাঁর স্মৃতি ফিরে আসায় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছেন পহেলওয়ানের স্ত্রী গীতা দেবী ৷ শুক্রবার তাঁকে বাড়ি ফেরানোর জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে রানিগঞ্জ এসেছিলেন গীতা দেবী ৷ তিনি বলেন, "ঈশ্বরের অমোঘ লীলা ছাড়া এটা কখনোই সম্ভব নয় । আমি কোনোদিন কুম্ভমেলা যাইনি ৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওকে নিয়ে এবার কুম্ভমেলায় যাব ।"

পহেলওয়ান পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ায় স্থানীয়রা সকলেই খুশি ৷ তবে এতদিন পর তিনি চলে যাচ্ছেন, তাই কিছুটা হলেও মন খারাপ রানিসায়র মোড় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের ৷ তাঁদেরই একজন সাধন কুমার ৷ তিনি বলেন, "পহেলওয়ানজি আমাদের পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিলেন । ওঁর মতো ভালো মানুষ হয় না । আজ উনি বাড়ি ফিরছেন । কিন্তু আমাদেরও মন খারাপ হচ্ছে, এতদিনের সম্পর্ক । যাইহোক মাঝে মাঝে উনি যেন আসেন, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, এটাই চাইবো ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.