কলকাতা, 28 অগস্ট: রাজ্য বিধানসভায় আগামী সপ্তাহে ধর্ষণবিরোধী কঠোর আইন আনার কথা ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেখানে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করে ফাঁসির সংস্থান রাখার কথা বলা হয়েছে। জানা গিয়েছে, সোম ও মঙ্গলবার বসতে চলেছে রাজ্য বিধানসভার এই অধিবেশন। কিন্তু আরজি করকে সামনে রেখে রাজ্য সরকারের কঠোর ধর্ষণ বিরোধী আইন আনার ক্ষেত্রে বিরোধী-শাসক ঐক্যমত্যের ছবি উধাও। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকারের এই অধিবেশন ডাকার এক্তিয়ার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের আছে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ৷ উলটে তিনি ওই দিন ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে পালটা বিধানসভা অভিযানের ডাক দিয়েছেন।
বুধবার রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এই বিধানসভা অধিবেশন ডাকার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এদিন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের শেষে জানিয়েছেন, আগামী সোমবার থেকে দু'দিনের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হচ্ছে। সেই অধিবেশন থেকেই ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন পাশ করবে রাজ্য সরকার। এদিন রাজ্য মন্ত্রিসভা এই আইন আনার বিষয়ে অনুমোদনও দিয়েছে। প্রশ্ন হল, রাজ্য যখন বিধানসভায় ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন এনে এর বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে, ঠিক তখন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি কার্যত বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে।
প্রসঙ্গত, এদিন মেয়ো রোডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগামী সপ্তাহে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলে বিধানসভার অধিবেশন ডাকা হবে। এখানেই ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন এনে অপরাধীর ফাঁসির সংস্থান নিশ্চিত করবে রাজ্য সরকার। সেই মতোই এদিন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এই পদক্ষেপের অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই মতো রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী আগামী সোম এবং মঙ্গলবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন। যতদূর জানা যাচ্ছে, প্রথম দিন শোক প্রস্তাব হয়ে দ্বিতীয় দিন হবে এই ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া। যেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আচমকা এই বিশেষ অধিবেশন কেন ডাকা হচ্ছে তা নিয়েই এদিন প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
এদিন কলকাতায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "আরজি কর ইস্যুকে ছোটো করে দেখানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকার এবং তার পার্ষদরা যে ভূমিকা গ্রহণ করছেন তা আসলে বিষয়টিকে ধামা চাপা দেওয়ার একটি চেষ্টা। যেভাবে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে দিয়ে প্লেস অফ অকারেন্স অর্থাৎ ওই সেমিনার রুমের উলটো দিকের দেওয়ালটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং যেভাবে নির্যাতিতা মেয়েটির দেহ অতি দ্রুততার সঙ্গে সৎকার করা হয়েছে তার মাধ্যমে আসলে জনমতকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।"
শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, "অধ্যক্ষ এই অধিবেশন ডাকতে পারেন না, কারণ সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা অধিবেশনে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে এসেছিল রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপি। এক্ষেত্রে রাজ্যপালের অনুমতি ছাড়া এই অধিবেশন ডাকাই যায় না। কাজেই এই বিষয়টা নিয়ে তারা আলোচনা করছেন।"
তিনি আরও বলেন, "সরকার প্রস্তাব আনতে চাইলে আলাদা ব্যাপার কিন্তু বিধিপ্রণয়ন করতে চাইলে রাজ্যপালের অনুমোদন প্রয়োজন। এটা ছাড়া বিধি প্রণয়ন সম্ভব নয়। ওই একই দিনে বিধানসভা অভিযান হবে। ছাত্র সমাজ বা ছাত্ররা এই অভিযান করবেন। বিধানসভার অভ্যন্তরে তারা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করবেন।" ফলে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে রাজ্য বিধানসভায় যে অধিবেশন হতে চলেছে তা যে বিধানসভার শেষ অধিবেশনের মতো হবে না তা একরকম স্পষ্ট। বরং আগামীতে এই ইস্যুতেই বিজেপি যে সরব হতে চলেছে তাও শুভেন্দু অধিকারীর কথায় বোঝা যাচ্ছে।