শান্তিপুর, 3 মে: জটিল অস্ত্রোপচারে বাদ গিয়েছে ডান হাত ৷ তবে তাতে একটুও কমেনি মনোবল ৷ পরীক্ষার দেড়মাস আগে অস্ত্রোপচারের পর ভেবেছিল আর কিছুই হবে না ৷ তবে বাবা-মা পাশে থাকায় শুরু হয় নতুন লড়াই ৷ কঠিন অধ্যাবসার পর বাঁ হাত দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে মাধ্যমিকে সাফল্য পেল শান্তিপুরের শুভজিৎ।
শুভজিৎ জানায়, "আচমকাই ক্যানসার ধরা পড়ে ৷ চিকিৎসা করাতে রাজ্যের বাইরে যেতে হয় ৷ অস্ত্রোপচারে ডান হাত বাদ যায় ৷ তখন পরীক্ষার মাত্র দেড়মাস বাকি ছিল ৷ তা-ও হার মানিনি ৷ বাবা-মা ভরসা জুগিয়েছেন, মনের জোর বাড়িয়েছেন ৷ তারপর বাঁ হাত দিয়ে লেখা অভ্যাস করা শুরু করি ৷ পরীক্ষায় প্রশ্ন কঠিন লেগেছিল ৷ কারণ, যতটা প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার ছিল, ততটা নিতে পারেনি ৷ পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে এসে কেঁদে ফেলেছিলাম ফেল করব ভেবে ৷ কিন্তু রেজাল্ট বেরোলে জানতে পারলাম পাশ করেছি ৷ কম নম্বর পেয়েছি ৷ কিন্তু পাশ করতে পেরে খুশি ৷ উচ্চ মাধ্যমিকের ভালো ফলের জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করব ৷"
শুভজিতের বাবা ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস জানান, দীর্ঘ চার বছর ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে পারেননি ৷ হাতের অস্ত্রোপচারের কারণে ৷ তবে পরীক্ষার আগে যখন ডান হাতটা বাদ যায়, তখন অনেকটাই ভেঙে পড়েছিল গোটা পরিবার ৷ আটবার অস্ত্রোপচার হয়েছে তার ৷ তার পরেও শুভজিতের ইচ্ছা ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার ৷ তাই পরিবারের তরফে সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে রেজাল্ট যাই হোক না কেন, শুভজিৎ পাশ করেছে এত প্রতিকূলতার মধ্যেও এটাই বড় পাওনা ৷
জানা যায়, ছোটবেলায় হাতে সাইকেল পড়ে যাওয়ায় গুরুতর চোট লাগে শুভজিতের হাত। তারপর দিনের পর দিন অসুস্থ থাকার পর, হঠাৎই হাতে ক্যানসার ধরা পড়ে। পরবর্তীতে চিকিৎসকরা জানান, তার হাত কেটে বাদ দিতে হবে। তারপরেই বেঙ্গালুরু গিয়ে সমস্ত চিকিৎসা করেও, আর্থিকভাবে সচ্ছল না থাকার কারণে ফিরে আসতে হয় বাড়িতে। তারপর কৃষ্ণনগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপ্রচার করে বাদ দেওয়া হয় ডান হাত।
শুভজিতের বাবা কলকাতায় মজুরির কাজ করেন। মা লোকের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করেন। কোনও রকমে সংসার চালান ৷ তাই আর্থিক অবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে মাসির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে শুভজিৎ। তবে দীর্ঘ প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে 2024-এর মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে সে ৷ এই ফলাফলে খুশি শুভজিৎ-সহ তার পরিবারের সকলেই। এখন পরিবারের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে একটাই আবেদন, ছেলের ভবিষ্যৎ ও উচ্চশিক্ষার জন্য যদি প্রশাসনের তরফে একটু সাহায্য পাওয়া যায়, তাহলে ভালো হয় ৷ এখন দেখার বিষয় হল, রাজ্য সরকার কীভাবে এই পরিবার তথা শুভজিতের পাশে দাঁড়ায় ৷
আরও পড়ুন
1. কেন মেধা তালিকা থেকে পিছিয়ে পড়ছে কলকাতা ? উদ্যোগ নিতে হবে বললেন শিক্ষামন্ত্রী
2. রিভিউ-স্ক্রুটিনির জন্য কোথায় আবেদন করবেন? জানাল পর্ষদ
3. চাকরি বাতিল হওয়া কোনও শিক্ষক মাধ্যমিকের খাতা দেখেছেন কি ? নয়া বিতর্ক