কলকাতা, 15 ফেব্রুয়ারি: মাওবাদী নেতা কিশোরদা ওরফে সব্যসাচী গোস্বামীর মূল লক্ষ্য ছিল নতুন মাওবাদী স্কোয়াড তৈরি করা । আর এই নতুন মাওবাদী স্কোয়াডে শামিল করানো রাজ্যের একাধিক যুবতীকে । যুবতীদের কেন বেশি করে মাওবাদীদের নতুন স্কোয়াডে শামিল করানো হচ্ছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে ধৃত মাওবাদী নেতার কাছ থেকে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের এক গোয়েন্দার দাবি যে, জেরায় ধৃত মাওবাদী নেতা সব্যসাচী গোস্বামী তদন্তকারীদের জানায় যে, এর গোটা পরিকল্পনাটি ছিল মাওবাদী শীর্ষ নেতৃত্বের ।
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ জঙ্গলমহলের একাধিক জায়গায় বাস মাওবাদীদের । মাওবাদী শীর্ষ নেতৃত্বের বেশ কয়েকজন ওই সমস্ত এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপন করে থেকে এসেছেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা । মাওবাদী নেতা সব্যসাচী গোস্বামীকে লাগাতার জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন যে, ওই এলাকায় মহিলাদের উপর কঠোর নিপীড়ন অত্যাচার চলত এবং তাঁদের একাধিক কর্মসূচি থেকে বঞ্চিত করে রাখা হত । আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ওই এলাকায় মহিলাদের উপর নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করে ধীরে ধীরে ওই মহিলাদের স্লিপারসেলে পরিণত করার চেষ্টা করে মাওবাদীদের শীর্ষ নেতৃত্ব ।
তবে আচমকাই কেন মাওবাদীদের দলে মহিলাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে ? জানা গিয়েছে, এই মহিলারা মূলত বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামে মাওবাদীদের স্লিপারসেল হিসেবে কাজ করবে । জেরায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গিয়েছে যে, এখনও পর্যন্ত মোট 31 জন মহিলাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে রিক্রুট করা হয়েছে । তবে এই 31 জন মহিলা কারা, তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্টভাবে জানা যায়নি ।
লালবাজারের এসটিএফের গোয়েন্দাদের দাবি, মূলত জঙ্গলমহলের এবং প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের রিক্রুট করার নেপথ্যে তাঁদের মূল ক্রাইটেরিয়া হল সামান্য শিক্ষিত ছাত্রী হতে হবে । মাওবাদী শীর্ষ নেতৃত্ব এই পরিকল্পনাতেই এগিয়েছিল যে, বছরখানেক ওই এলাকাতেই স্লিপারসেল হিসেবে কাজ করার পর যখন তাঁরা হাত পাকিয়ে নেবেন, তখন তাঁরা সরাসরি মাওবাদী সেলের হয়ে কাজ করতে সক্ষম হবেন ।
ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের তরফ থেকে বিহার এবং ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে । বাংলায় আত্মগোপন করে থাকা মাওবাদী শীর্ষ নেতার সম্পর্কে তথ্য নেওয়ার জন্যই যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে । রাজ্য পুলিশের একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিকদেরও এই বিষয়ে সজাগ করা হয়েছে ।
সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড এবং বাংলার সীমানা থেকে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দারা মাওবাদী নেতা কিশোরদা ওরফে সব্যসাচী গোস্বামীকে গ্রেফতার করে । তাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দারা আদালতে আবেদন জানান যে, এই মাওবাদী নেতাকে তাঁরা নিজেদের হেফাজতে নিতে চান । আদালত সেই আর্জি মানলে সব্যসাচীকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ ৷
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা নরেন্দ্রপুর এলাকা থেকে মাওবাদী সন্দেহে অপর এক যুবককে গ্রেফতার করতেও সক্ষম হয় কলকাতা পুলিশ । পাশাপাশি দক্ষিণ 24 পরগনার মুইপিট এলাকায় মাওবাদী নেতা সব্যসাচী গোস্বামীর গোপন ডেরায় তল্লাশি চালানো হয় । সেখান থেকে উদ্ধার হয় একটি কারবাইন এবং বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি-সহ একটি মাওবাদী পুস্তক এবং বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোনের সিম কার্ড ।
আরও পড়ুন: