নরেন্দ্রপুর, 2 মে: মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় আবারও জয়জয়কার নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের । তৃতীয় হয়েছে নৈরিতরঞ্জন পাল ৷ তাঁর প্রাপ্ত নম্বর 691 ৷ প্রথম দশে এবার জায়গা করে নিয়েছে নৈরিত ছাড়াও এই স্কুলের আরও পাঁচ পরীক্ষার্থী । মেধাতালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে অলিভ গায়েন ৷ তাঁর প্রাপ্ত নম্বর 688 ৷ সপ্তম আলেখ্য মাইতি (687) ৷ নবম স্থানে রয়েছে দু'জন ৷ তারা হল ঋতব্রত নাথ ও ঋত্বিক দত্ত ৷ দু'জনেরই প্রাপ্ত নম্বর (685) ৷ নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দশম হয়েছে শুভ্রকান্তি জানা (684) ৷
আবাসিক বিদ্যালয়ে নিয়মানুবর্তিতা পরীক্ষার্থীদের সাফল্যের অন্যতম কারণ বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক স্বামী ইষ্টেশানন্দ মহারাজ । পাশাপাশি তাঁর দাবি, স্কুলের ছাত্রদের মোবাইল ব্যবহার থেকে বিরত রাখা হয় । সেটাও সাফল্যের কারণ বলে মনে করেন তিনি ৷ একই কথা ছাত্রদের মুখেও ৷ মেধাতালিকায় থাকা সকল ছাত্ররাই তাদের এই ভালো ফলের কৃতিত্ব দিয়েছে মিশন কর্তৃপক্ষ ও সহপাঠীদের ৷
মাধ্যমিকে তৃতীয় নৈরিতরঞ্জন পাল বলে, "এতটা সাফল্য আশা করিনি ৷ তবে আমাদের পরীক্ষার ফলের জন্য খুব ভালো লাগছে ৷ আমাদের এই রেজাল্টের কৃতিত্ব মিশন পরিবারকে দিতে চাই ৷ শিক্ষক থেকে মিশনের সবাই খুব সাহায্য করেছে ৷ দিনে খুব বেশি হলে 6 ঘণ্টা পড়তাম ৷ আমাদের সেল্ফ স্ট্যাডির উপর জোর দেওয়া হয় ৷ তার জন্য আমাদের এই ভালো ফল হয়েছে ৷ পড়াশোনার বাইরেও গল্পের বই পড়তাম, গানবাজনা করতাম ৷ আর পড়াশোনার বাইরেও আমাদের মিশনে খেলাধূলোটা খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয় ৷ তাই রোজ বিকেলে খেলতেও যেতাম ৷"
ষষ্ঠ স্থানাধিকারী অলিভ গায়েনের কথায়, "খুব বেশি পড়তাম না ৷ কিন্তু যতটা পড়তাম খুব মনোযোগ দিয়ে ৷ স্মার্ট স্ট্যাডি করা জরুরি ৷ বাবা-মায়ের পাশাপাশি মিশনের মহারাজ, শিক্ষকদের এবং সর্বোপরি বন্ধুদের এই সাফল্যের কৃতিত্ব দিতে চাই ৷ তাদের কাছ থেকে পড়াশোনার সঙ্গে যে মেন্টাল সাপোর্ট পেয়েছি সেটা ভালো ফল করার জন্য খুবই জরুরি ছিল ৷ আমি আপাতত ডাক্তারি নিয়ে পড়ছি ৷ পরে নিট দিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভের লাইনের দিকে যাওয়ারও ইচ্ছে রয়েছে ৷"
সপ্তম স্থানে থাকা আলেখ্য মাইতি জানায়, "আমার ইচ্ছে আছে জেইই(জয়েন্ট) দেওয়ার ৷ গল্পের বই পড়তে ভালো লাগে ৷ পড়ার বইয়ের পাশাপাশি গল্পের বই পড়ে সময় কাটাতাম ৷ মহারাজ ও স্কুলের ভবন শিক্ষকরা খুব সাহায্য করে পড়াশোনায় ৷ বাড়িতে আমরা যেতেই পারি না ৷ ফলে সাফল্যের জন্য স্কুলই দায়ী ৷"
নবম স্থানাধিকারী ঋতব্রত নাথও ভালো ফলের পুরো কৃতিত্ব স্কুলকেই দিয়েছে ৷ সে বলে, "নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের জন্যই আমরা এই ফল করেছি ৷ তাদের সাহায্য ছাড়া এই সাফল্য সম্ভব ছিল না ৷ তাই মিশনের সকলকে ধন্যবাদ জানাবো ৷ ভবিষ্যতে ইন্ডিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চাই ৷ তবে পরে ব্যবসা করার ইচ্ছা আছে ৷"
প্রত্যেক বছরই মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় এক থেকে দশের মধ্যে থাকে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্ররা ৷ এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি ৷ তবে 6 জন একসঙ্গে মেধাতালিকায় জায়গা করে নেওয়ায় খুশি প্রধান শিক্ষক স্বামী ইষ্টেশানন্দ মহারাজ ৷ তিনি বলেন, "আমাদের পড়ুয়াদের সাফল্য খুবই আনন্দিত ৷ সম্পূর্ণ আবাসিক বিদ্যালয় হওয়ার কারণে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন অন্যদের থেকে আলাদা ৷ একসঙ্গে থাকায় ছাত্ররা পড়াশোনা করা থেকে একে ওপরের সাহায্যে বা কাজে আসতে পারে ৷ দরকারে শিক্ষকদের কাছ থেকেও প্রয়োজনীয় সহায়তা পায় ৷ সর্বপরি নরেন্দ্রপুরে তপোবনের মতো পরিবেশ রয়েছে ৷ যেটি ছাত্রদের পড়াশোনায় মনোসংযোগ করতে ও সাফল্যের দিকে এগিয়ে দিতে সাহায্য করে ৷"
মিশনের ছাত্রদের সাফল্যের রহস্য
স্বামী ইষ্টেশানন্দ মহারাজের কথায়, "এই যুগে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল ফোনের ব্যবহার ৷ তবে আমাদের এখানে ছাত্রদের কাছে মোবাইল থাকে না ৷ 16-18 বছরের পড়ুয়াদের হাতে মোবাইল ফোন থাকলে তা মনসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে ৷ আমাদের এখানে ছাত্রদের সেই সুযোগ নেই ৷ এর ফলে ছাত্রদের নিরবিচ্ছিন্ন পড়াশোনা করার, একসঙ্গে বেড়ে ওঠার এবং একে ওপরকে সাহায্য করে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে ৷ সেই কারণেই এই সাফল্য ৷ সকলের যৌথ প্রয়াসে এই সাফল্য এসেছে ৷"
পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলার গুরুত্ব
মহারাজ জানান, ছাত্ররা মাধ্যমিকে মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিয়ে এসে খেলার মাঠে গিয়েছে ৷ পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলোটাও জরুরি ৷ খেলাধূলো ছাত্রদের শারীরিক বিকাশে সাহায্য করে ৷ ছাত্ররা যৌথ পরিবারের মতো থাকে এখানে ৷
উল্লেখ্য, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ছাড়াও দক্ষিণ 24 পরগনা থেকে আরও দু'জন মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ৷ তারা সোনারপুর সারদা বিদ্যাপীঠের পড়ুয়া ৷ নবম হয়েছে সায়নদ্বীপ মান্না (686) ৷ দশম স্থানে রয়েছে ঈশান বিশ্বাস (685) ৷
আরও পড়ুন: