কলকাতা, 8 অগস্ট: প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার সকাল 8টা 20 মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়। আগামিকাল শুক্রবার সিপিএম রাজ্য সদর দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে তাঁর দেহ শায়িত থাকবে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। আর বুদ্ধদেবের শেষকৃত্যে দিল্লির নেতারা আজ রাতেই কলকাতায় আসতে শুরু করবেন বলে জানা গিয়েছে।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রে খবর, সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কলকাতায় আসছেন না। তবে, প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট, এমএ বেবি, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকাররা উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু, চোখের অপারেশন হওয়ায় সীতারাম ইয়েচুরি আসতে পারছেন না। আসবেন না পিনরাই বিজয়নও। তবে, সিপিআইয়ের ডি রাজা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও ইন্ডিয়া শরিকের অনেকে নেতাও থাকতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিপিএম'র সদস্য পদ লাভ করেন 1966 সালে। পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হওয়ার আগে দমদম আদর্শ বিদ্যামন্দিরে বছর দুয়েক শিক্ষকতা করেছিলেন। সেই সময়ে বাংলায় খাদ্য আন্দোলন, ভিয়েতনামের প্রতি সংহতি আন্দোলন-সহ বহু গণআন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে ছিলেন। 1968 সালে তিনি গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের সম্পাদক নির্বাচিত হন।
Shattering news about Buddha da. The news reached me as I was having a cataract removed. His dedication to the party, West Bengal, our shared ideals and also his ability to look ahead will always function as a lodestar. pic.twitter.com/khSfw2aaMS
— Sitaram Yechury (@SitaramYechury) August 8, 2024
সিপিএম'র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন 1971 সালে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হয়েছেন 1981 সালে এবং 1985 সালে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। 2000 সালে তিনি পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্যও হন। স্বাস্থ্যের কারণে তিনি 2015 সালে সিপিএম'র পার্টি কংগ্রেসে পলিটব্যুরোর সদস্যপদ থেকে অব্যহতি নেন। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি সাম্মানিক সদস্য ছিলেন। 2018 সালে তিনি পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকেও অব্যাহতি নিয়ে রাজ্য কমিটিতে সাম্মানিক সদস্য হয়েছিলেন।
1977 সালে বিধানসভা নির্বাচনে কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সিপিএম'র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিধায়ক নির্বাচিত হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই বছরই মাত্র 33 বছর বয়সে তিনি রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী হন। তাঁর নেতৃত্বে রাজ্যে প্রগতিমুখী, জনগণ-সম্পৃক্ত সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের লক্ষণীয় বিকাশ সম্ভব হয়েছিল।
1987 সালে তৃতীয় বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় তিনি এর সঙ্গে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরেরও দায়িত্ব পান। 1991 ও 1996 সালে তিনি যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। 1996 সালে তিনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র (পুলিশ) দফতরের দায়িত্বও পেয়েছিলেন। স্বাস্থ্যের কারণে জ্যোতি বসু যখন মন্ত্রিসভায় নিজের ভার লাঘব করতে চাইছিলেন তখন 2000 সালের জুলাই মাসে উপমুখ্যমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
এরপর ওই বছরের শেষের দিকেই জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে সরকারের নেতৃত্ব তুলে দেন। 2000 সালের 6 নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন বুদ্ধদেব। এরপর 2001 সালের বিধানসভা নির্বাচনে যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বভার নেন।
2006 সালেও এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হন। 2011 সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের পরাজয় হওয়া পর্যন্ত তিনিই মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সাড়ে দশ বছর এই দায়িত্ব তিনি শুধু দক্ষতার সঙ্গেই পালন করেননি, পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থে ও রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বামফ্রন্টের নীতি ও কর্মসূচিগুলি আন্তরিকভাবে রূপায়ণের চেষ্টা চালিয়েছেন।