মালদা, 13 সেপ্টেম্বর: আরও একবার পুজোর বোনাস মালদার রেশমচাষি এবং এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের ৷ পুজোর আগেই চালু হতে চলেছে মালদা সিল্ক পার্ক ৷ জানিয়েছেন জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া ৷ রেশম শিল্পের উন্নতিতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি ৷ এনিয়ে জেলা প্রশাসনিক ভবনে একটি বিশেষ বৈঠক আয়োজিত হয় ৷ সেখানে জেলার রেশম শিল্পের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে ৷
মালদা জেলার রেশম শিল্প বহু প্রাচীন ৷ মুঘল আমলেও এখানে রেশম চাষ প্রচলিত ছিল ৷ যদিও সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে ৷ আবহাওয়া যেমন প্রতিকূল হতে থাকে, তেমনই কমতে থাকে সরকারি সুযোগ সুবিধা ৷ পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্যও জেলায় উৎপাদিত রেশম সুতোর বাজার পড়তে শুরু করে ৷ বহু চাষি পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হন ৷ যদিও সাম্প্রতিক সময়ে সরকার এদিকে বিশেষ নজর দেওয়ায় পরিস্থিতির বদল ঘটেছে ৷
এই মুহূর্তে জেলায় প্রায় 22 হাজার একর জমিতে তুঁত চাষ করা হচ্ছে ৷ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত পাঁচ লাখের বেশি মানুষ ৷ প্রায় 61 হাজার পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদন হয় এই শিল্পে ৷ জেলার প্রায় সব ব্লকে রেশমের চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি রেশম উৎপাদন হয় কালিয়াচকের তিনটি ব্লকে ৷ বছরে ছ’বার এই চাষ হয়ে থাকে ৷ বাংলা মাসের নাম অনুযায়ী প্রতিটি রেশম মরশুমের নামকরণ করা হয় ৷ জেলায় প্রতি বছর গড়ে 1500 মেট্রিক টন কোকুন উৎপন্ন হয় ৷
মালদার রেশম শিল্পের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে 2012-13 সালে তৎকালীন বাম সরকার জেলায় সিল্ক পার্ক তৈরির চিন্তাভাবনা শুরু করে ৷ মূল উদ্যোগ নেন রাজ্যের তৎকালীন ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী মানব বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তার জন্য ইংরেজবাজারের মধুঘাট এলাকার ব্যাসপুরে তৎকালীন 34 নম্বর জাতীয় সড়কের দু’ধারে মোট 13.07 একর জমি চিহ্নিত করা হয় ৷ কিন্তু লালফিতের ফাঁস কাটিয়ে সেই কাজ শুরু হয় 2016-17 সালে ৷ কেন্দ্র ও রাজ্যের 40 কোটিরও বেশি টাকায় পার্ক তৈরি হয়েছে ৷ 2021 সালের 8 ফেব্রুয়ারি নবান্ন থেকে এই পার্কের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
কিন্তু সেই পার্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও এখনও চালু হয়নি ৷ এর জন্য এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সবারই ক্ষোভ ছিল ৷ অবশেষে সেই পার্ক চালু হতে যাচ্ছে ৷ জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, “সিল্ক পার্ক দ্রুত চালু করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন ৷ তাই সেরিকালচার দফতর-সহ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে ৷ ওই পার্কে থাকা স্টলগুলি ইতিমধ্যে বণ্টন করা হয়েছে ৷ যাঁরা স্টল নিয়েছেন, তাঁরা টাকা দিলেই পার্ক চালু করা হবে ৷ আগামী 1 অক্টোবর থেকে এই পার্ক চালু হবে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘বৈঠকে রেশম গুটির উৎপাদন বৃদ্ধি, রেশম চাষের আয়তন আরও বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হয়েছে ৷ এসবের জন্য কিছু প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে ৷ সেরিকালচার দফতরে কর্মী নিয়োগ নিয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে ৷ আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরকে সেটা জানাব ৷ রেশম চাষে উৎসাহ দিতে কীভাবে মানুষকে বোঝানো হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে ৷”
বৈঠকে উপস্থিত জেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রফতানিকারক উজ্জ্বল সাহা বলেন, “রেশম মালদা জেলার ইতিহাসে বিশেষ জায়গা নিয়ে রেখেছে ৷ এই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে রাজ্য সরকারের তরফে জেলাশাসক বৈঠক ডেকেছিলেন ৷ বৈঠকে রেশম শিল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে ৷ এই শিল্পের পুনরুজ্জীবন হলে জেলার অর্থনীতিও পুনরুজ্জীবিত হবে ৷ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে যাঁরা ভিনরাজ্যে কাজ করছেন, তাঁরা ফের জেলায় ফিরে আসবেন ৷ এই জেলায় কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে ৷”