কলকাতা, 29 ফেব্রুয়ারি: দীর্ঘ টালবাহানা শেষে রাজ্য পুলিশের হাতেই গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ৷ বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম পরিষ্কার জানিয়ে দেন, শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারিতে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই ৷ তার 24 ঘণ্টাও কাটল না ৷ উত্তর 24 পরগনারই মিনাখাঁ থেকে তৃণমূলের বেতাজ বাদশাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এদিন বসিরহাট মহকুমা আদালত তৃণমূল নেতাকে 10 দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে ৷ 5 জানুয়ারি থেকে বেপাত্তা ছিল শেখ শাহাজাহান ৷ কখনও শোনা যায় তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছেন ৷ আবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বারবারই দাবি করেছেন, শাহজাহান সন্দেশখালিতেই রয়েছেন ৷ 55 দিন ধরে লাগাতার চাপের মুখে শেষে গ্রেফতার হলেন সন্দেশখালির শেখ ৷ রইল সেই টাইমলাইন ৷
5 জানুয়ারি: রেশন দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে পৌঁছন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা ৷ সেখানে স্থানীয়দের হাতে আক্রান্ত হন তাঁরা ৷ এমনকী মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে ৷ বেপাত্তা হয়ে যান শেখ শাহজাহান ৷ এই হামলার বিরুদ্ধে ডিজিপি রাজীব কুমার এবং বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার জেবি থমাসের কাছে অভিযোগ জানায় ইডি ৷
6 জানুয়ারি: শেখ শাহজাহানের বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডির বিরুদ্ধেই মামলা রুজু করে উত্তর 24 পরগনার ন্যাজাট থানার পুলিশ । এফআইআরে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার না জানিয়ে এবং ওয়ারেন্ট ছাড়াই ইডি আধিকারিকরা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকেছিলেন ।
10 জানুয়ারি: রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে এবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ৷ সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে যাওয়া ইডি প্রতিনিধি দলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয় ৷ আক্রান্ত হওয়া ইডি আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই কেন এফআইআর পুলিশের ? এই প্রশ্নে এবং আধিকারিকদের হেনস্থা করার আশঙ্কায় হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷
11 জানুয়ারি: নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "শাহজাহানের বিষয় নিয়ে যেহেতু তদন্ত চলছে, তাই আমি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না ৷"
11 জানুয়ারি: সন্দেশখালির ঘটনায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে সোমবার পর্যন্ত কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না, এদিন এই নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত ৷
17 জানুয়ারি: সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার তদন্ত করতে সিবিআই ও রাজ্যের আইপিএসদের নিয়ে সিট গঠন করে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত ৷ আদালতের নজরদারিতে এই তদন্ত চলবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ এই বিশেষ তদন্তকারী দলকে সব সাহায্য করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশ ৷ ন্যাজাট থানায় ইডি যে এফআইআর দায়ের করেছিল, তার সত্যতাও খতিয়ে দেখবে এই বিশেষ টিম ৷
17 জানুয়ারি: সন্দেশখালিতে তিন বিজেপি কর্মী খুনের মামলায় নিম্ন আদালতের বিচারপ্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ উচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, তিনটি খুনের ঘটনায় নিম্ন আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত থাকবে ৷ আপাতত পুলিশ তদন্ত করতে পারলেও এই মামলা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত বিচারকার্য স্থগিত থাকবে।
22 জানুয়ারি: সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার তদন্তে সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ আদালতের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ।
29 জানুয়ারি: ইডির বিশেষ আদালতে আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি করেছিল দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ৷ সেই মামলার শুনানি 3 ফেব্রুয়ারি ৷ এদিকে গত মঙ্গলবার উত্তর 24 পরগনার জেলা জাজ কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন শাহজাহানের আইনজীবী ৷ এনিয়ে তখনই মামলার নথি খতিয়ে দেখার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জেলার মুখ্য সরকারি আইনজীবী শান্তময় বোস ৷
3 ফেব্রুয়ারি: অন্তরালে থেকেই জেলা জজ কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন সন্দেশখালি কাণ্ডের 'মাস্টারমাইন্ড' তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ৷ এদিকে সেই শুনানির আগে ন্যাজাট থানার কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল বারাসত আদালত ৷
7 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকরা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় সিবিআই ও রাজ্য পুলিশকে যৌথ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত । সেই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ । আপাতত আগামী 6 মার্চ পর্যন্ত এই তদন্তের উপর স্থগিতাদেশ জারি করল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ।
7 ফেব্রুয়ারি: এক মাস আগে যে সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিক এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের তাড়া করে গ্রাম ছাড়া করেছিলেন শেখ শাহজাহানের অনুগত তৃণমূল সমর্থকরা। সেখানেই পালটা গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে নৌকা করে কোনওরকমে প্রাণ বাঁচালেন শাহজাহানের অনুগামীরা। প্রাণরক্ষা করতে কোনও কোনও তৃণমূলের সমর্থককে আবার রায়মঙ্গল নদীতে ঝাঁপও দিতে দেখা গেল ৷ সবমিলিয়ে অভিযোগ-পালটা অভিযোগে বুধবার সরগরম হয়ে ওঠে সন্দেশখালি 2 নম্বর ব্লকের ত্রিমোহনী এলাকা ৷
9 ফেব্রুয়ারি: উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালির পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে এগোচ্ছে । ত্রিমোহনী এলাকার পর এবার জেলিয়াখালি । শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরার তিনটি পোল্ট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দিলেন ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা । ঘটনার জেরে ফের অশান্ত হয়ে উঠেছে উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালি অঞ্চল ।
9 ফেব্রুয়ারি: 7,8,9- টানা তিনদিন ধরে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালিতে । হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগে কার্যত অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সন্দেশখালি 2 নম্বর ব্লকে । শাহজাহান ঘনিষ্ঠ শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের বিরুদ্ধে অন্যায় অত্যাচারের অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রামবাসীদের একটি বড় অংশ । যার জেরে শুক্রবারও চরম জনরোষ দেখা গিয়েছে জেলিয়াখালিতে । সন্দেশখালিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি করা হল 144 ধারা । সন্দেশখালি 2 ব্লকের মোট 16টি পঞ্চায়েত এলাকাজুড়ে এই 144 ধারা বলবৎ থাকবে বলে জানা গিয়েছে প্রশাসন সূত্রে । ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করা হচ্ছে সন্দেশখালিতে ।
10 ফেব্রুয়ারি: এদিনই দলের তরফে সাসপেন্ড করা হয় শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন তৃণমূল নেতা উত্তম সর্দারকে ৷ এরপরই শনিবার রাতে সন্দেশখালি থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে শাসক দলের এই প্রাক্তন নেতাকে ৷ উত্তমের পাশাপাশি এদিন বিজেপির বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের কনভেনর বিকাশ সিংহকেও গ্রেফতার করেছে সন্দেশখালি থানার পুলিশ ৷
11 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালিকাণ্ডে গ্রেফতার করা হয় সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সরদারকে । বেপাত্তা তৃণমূলের দাপুটে নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবুর অভিযোগের ভিত্তিতেই এই সিপিএম নেতাকে গ্রেফতার করা হয় ।
11 ফেব্রুয়ারি: বিজেপির পর সিপিএম । 144 ধারা জারির মধ্যেই সন্দেশখালি যেতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ল সিপিএমের প্রতিনিধিদল । সিপিএমের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়দের সঙ্গে চলল পুলিশের তীব্র বচসা এবং বাদানুবাদ । অভিযোগ, সন্দেশখালিতে যাতে সিপিএমের নেতা-নেত্রীরা প্রবেশ করতে না পারেন, তার জন্য ন্যাজাট ফেরিঘাটের ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয় পুলিশের তরফে । যার ফলে ন্যাজাট ফেরিঘাটেই আটকে থাকতে হয় সিপিএমের প্রতিনিধি দলকে ।
12 ফেব্রুয়ারি: প্রথম এবং দ্বিতীয় নোটিশে সাড়া না-মেলায় এবার তৃতীয় বারের জন্য নোটিশ দেওয়া হল সন্দেশখালির ফেরার তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে ৷ সিজিও কমপ্লেক্স সূত্রের খবর, তাঁকে ইমেল মারফৎ নোটিশ পাঠিয়ে বেলা 11টার মধ্যে একাধিক নথিপত্র নিয়ে ইডি দফতরে দেখা করতে বলা হয়েছে । ইতিমধ্যেই শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিশ জারি করেছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা ।
12 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খুললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমাদের রাজ্য মহিলা কমিশনকে আমি সকালে পাঠিয়েছিলাম । ওরা ঘুরে এসে রিপোর্ট দিয়েছে ৷ ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়ে গিয়েছে আপনারা দেখেছেন । সম্ভবত যাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে বা যারা ভায়োলেন্স করেছে, তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।"
13 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালির ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করল কলকাতা হাইকোর্ট । এদিন বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায় সন্দেশখালির পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক মনে করে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা নিজেই গ্রহণ করেছেন ৷ এই নিয়ে তিনি নির্দেশ দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন, সন্দেশখালির দু’টি বিষয় নিয়ে তিনি বিচলিত ।
14 ফেব্রুয়ারি: টাকিতে অসুস্থ হয়ে পড়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ তাঁকে সন্দেশখালি যেতে পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ ৷ সেই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসা বাধে বিজেপি নেতৃত্বের। পুলিশের গাড়ির বনেটের উপর উঠে পড়েন সুকান্ত। ধস্তাধস্তিতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানা যায় ৷ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর 17 ফেব্রুয়ারি তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় ৷
16 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালি যাওয়ার পথে রামপুরে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে এভাবেই মমতা বন্দোপাধ্যায়কে নিশানা করেন বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের সদস্যরা ৷ শুক্রবার বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের ছয় সদস্য সন্দেশখালি যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের ধামাখালির কাছে রামপুরে আটকে দেওয়া হয় ৷ এই কমিটি গঠন করেছিলেন বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা ৷
16 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালি ঢোকার প্রায় এক কিলোমিটার আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী-সহ বাকি নেতৃত্বকে আটকে দিল পুলিশ ৷ সরবেড়িয়াতেই পুলিশ কংগ্রেস প্রতিনিধি দলকে আটকে দিয়েছে ৷
17 ফেব্রুয়ারি: বিতর্কের মধ্যেই সরিয়ে দেওয়া হল বারাসত রেঞ্জের ডিআইজি সুমিত কুমারকে। তাঁকে ডিআইজি বারাসত রেঞ্জ থেকে বদলি করা হয়েছে ডিআইজি সিকিউরিটির দায়িত্বে ৷ অন্যদিকে, সুপ্রতিম সরকারকে এডিজি দক্ষিণবঙ্গে আনা হল ৷ তিনি এডিজি ট্রাফিক পদে ছিলেন ৷
17 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালিকাণ্ডে গণধর্ষণ এবং খুনের চেষ্টার ধারা যুক্ত হতেই গ্রেফতার করা হয় শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবুকে ৷ এদিনই সন্দেশখালিকাণ্ডে নির্যাতিতা এক মহিলার গোপন জবানবন্দির (164 ধারা) ভিত্তিতে পুলিশ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা শিবু হাজরা এবং দলের বহিষ্কৃত নেতা উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ এবং খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করে ৷
17 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালিকাণ্ডে গণধর্ষণ এবং খুনের চেষ্টার ধারা যুক্ত হতেই গ্রেফতার করা হয় শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবুকে ৷
18 ফেব্রুয়ারি: বীরভূমে দাঁড়িয়ে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ইডি, বিজেপি ও একাংশ মিডিয়া তিলকে তাল করছে ৷ আমাদের সরকার কোনও ঘটনা ঘটলেই ব্যবস্থা নেয় ৷ একটা ছোট্ট ঘটনা ঘটেছে, ঘটানো হয়েছে। প্রথমে ইডি ঢুকেছে, তারপর তার বন্ধু বিজেপি ঢুকেছে, আর কিছু মিডিয়া ঢুকে তিলকে তাল করছে। শান্তির পরিবেশকে আগুন লাগাচ্ছে। যার যা অভিযোগ আছে আমি অফিসার পাঠাব ওরা শুনবে ৷ যদি কেউ মনে করে কারও কাছ থেকে কেউ কিছু নিয়েছে, সবটাই ফেরত দেওয়া হবে। আজ পর্যন্ত কোনও মহিলা অভিযোগ করেনি । আমি পুলিশকে বলেছি সুয়োমোটো কেস করতে ৷ আমিও পারি গদ্দারদের অ্যারেস্ট করতে। একটু সময় দিচ্ছি, সুতো ছাড়ছি।"
19 ফেব্রুয়ারি: লোকসভার এথিক্স কমিটিকে নোটিশ পাঠাল সুপ্রিম কোর্ট ৷ 4 সপ্তাহের মধ্য়ে উত্তর দিতে হবে আদালতে ৷ আজ কমিটির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার ৷ দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা, বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ এই লোকসভার এথিক্স কমিটির তলবে স্থগিতাদেশ জারি করেছে ৷ আজ সকাল সাড়ে 10টায় এথিক্স কমিটির কাছে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল ডিজিপি রাজীব কুমার-সহ পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের ৷ আপাতত সেই হাজিরা দিতে হচ্ছে না তাঁদের ৷
19 ফেব্রুয়ারি: দু'দিনের রাজ্য সফরে এলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা ।এসেছেন তিনি । পরের দিন রেখা শর্মার দাবি করেন, সন্দেশখালি নিয়ে নির্যাতিতাদের অবস্থা থেকে শুরু করে গোটা এলাকায় আইনশৃংখলার অবনতির কথা তুলে ধরতেই রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার পুলিশের গাফিলতির কথা স্বীকার করে নেন । জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, যখন তিনি এই বিষয়ে শেখ শাহজাহানের নাম রাজীব কুমারের কাছে রাখেন, সেই সময় রাজীব কুমার রেখা শর্মাকে বলেন, এই ঘটনায় প্রথম এফআইআর করেছিল ইডি । ফলে শেখ শাহজাহানকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটই গ্রেফতার করবে ।
19 ফেব্রুয়ারি: সিপিএমের করা মামলার প্রেক্ষিতে সন্দেশখালিতে 144 ধারা জারির নির্দেশ আগেই খারিজ করেছিল হাইকোর্ট ৷ এরপর 19টি জায়গার মধ্যে কয়েকটি জায়গা থেকে 144 ধারা প্রত্যাহার করেও নেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে ৷ এবার আগামী 7 দিনের জন্য সন্দেশখালির সব জায়গায় 144 ধারা স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট ৷ সোমবার এমনটাই নির্দেশ দিলেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ।পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারীর দায়ের করা অন্য আরেকটি মামলায় এদিন বিরোধী দলনেতাকে শর্তসাপেক্ষে সন্দেশখালি যাওয়ার অনুমতি দিল হাইকোর্ট ৷
20 ফেব্রুয়ারি: হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ফের সন্দেশখালিতে আটকানো হল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ এদিনই পুলিশ আধিকারিক জসপ্রীত সিংয়ের সঙ্গে তাঁদের বচসা বাধে ৷ এই সময় পুলিশ আধিকারিক জসপ্রীত সিং অভিযোগ করেন, শুভেন্দু অধিকারী তাঁকে 'খালিস্তানি' বলেছেন ৷ এর প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ও সোশাল মিডিয়ায় বিজেপির তীব্র নিন্দা করে বলেন 'বিজেপির ঔদ্ধত্য' ৷
21 ফেব্রুয়ারি: বাস্তব পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে বুধবার সন্দেশখালি গেলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ৷ সন্দেশখালির পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হওয়ার 14 দিনের মাথায় রাজ্য পুলিশের এই শীর্ষ কর্তা সন্দেশখালির মাটিতে পা দিলেন ৷ দুপুর আড়াইটে নাগাদ ডিজি-র কনভয় এসে পৌঁছয় ধামাখালি বাজার চত্বরে ৷ সেখানে থেকে ফেরিঘাটে একটি লঞ্চে করে জলপথে সন্দেশখালি ঘাটে যান ৷ তাঁর সঙ্গে রয়েছেন এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার, বসিরহাট জেলার পুলিশ সুপার রহমান মেহেদি হোসেন-সহ পুলিশের শীর্ষ কর্তারা ৷
24 ফেব্রুয়ারি: উত্তপ্ত সন্দেশখালিত পৌঁছন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ও দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুরা ৷ এর আগেও তাঁরা সন্দেশখালি গিয়েছিলেন ৷ গত রবিবার 18 ফেব্রুয়ারি উত্তর 24 পরগনার ন্যাজাটে গিয়ে সেখানকার দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন সুজিত বোস, পার্থ ভৌমিক এবং বীরবাহা হাঁসদা।
25 ফেব্রুয়ারি: তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার মহেশতলায় দাবি করেন, হাইকোর্ট পুলিশের হাত বেঁধে রেখেছে। এর পরদিন অভিষেক বলেন, "রাজ্য পুলিশ এবং সিবিআইয়ের একজন করে আধিকারিককে নিয়ে শাজাহানকে গ্রেফতারের জন্য সিট গঠন করেছিল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ ৷ কিন্তু, ইডির আবেদনে প্রধান বিচারপতি তা স্থগিত করে দিয়েছেন ৷ আর সেই কারণে পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারছে না ৷ আদালত অনুমতি দিলে পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারবে ৷"
26 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালি মামলায় শাহজাহান শেখকে যুক্ত করে কলকাতা হাইকোর্ট ৷ প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, সন্দেশখালি মামলায় উত্তর 24 পরগনা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষকে এই মামলায় যুক্ত করা হল । উল্লেখ্য, শাহজাহান উত্তর 24 পরগনা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ৷ প্রধান বিচারপতি বলেন, "আমরা শাহজাহানকে গ্রেফতারের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রাখিনি । এসপি, ওসি, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ, আমরা মামলায় যুক্ত করছি ।"
28 ফেব্রুয়ারি: ফেরার তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা নিয়ে আরও স্পষ্ট নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানায়, ইডির উপর হামলার ঘটনায় সিবিআই ও পুলিশের যৌথ সিট গঠনে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল আদালত ৷ তবে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারিতে কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি ৷ এর আগে 26 ফেব্রুয়ারিও এই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম জানিয়েছিলেন, শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতারিতে কোনও স্থগিতাদেশ নেই ৷
29 ফেব্রুয়ারি: আদালতের স্পষ্ট নির্দেশের 24 ঘণ্টাও কাটল না ৷ বৃহস্পতিবারই নাটকীয়ভাবে গ্রেফতার সন্দেশখালি ঘটনার 'মাস্টারমাইন্ড' তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান ৷ 55 দিন পর উত্তর 24 পরগনারই মিনাখাঁ থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করল পুলিশ ৷ মিনাখাঁর এসডিপিও আমিনুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, উত্তর 24 পরগনার মিনাখাঁ থেকে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ ৷ তাঁকে ইতিমধ্যে বসিরহাট আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ আজ দুপুর 2টোয় বসিরহাট আদালতে পেশ করা হবে শাহজাহানকে ৷
আরও পড়ুন: