মালদা, 18 জানুয়ারি: সীমান্ত টপকে বাংলাদেশিদের ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করল বিএসএফ জওয়ান এবং স্থানীয়রা ৷ শনিবার সকালে মালদার কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুকদেবপুরে এই ঘটনায় তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয় ৷ বাংলাদেশিরা ভারতীয় নাগরিক ও বিএসএফ জওয়ানদের উপর হামলা চালায় ৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে বাধ্য হয় বিএসএফ ৷
বিএসএফ জওয়ান ও স্থানীয়দের তাড়ায় বাংলাদেশিরা সীমান্ত থেকে পালিয়ে যায় ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশাল বিএসএফ বাহিনীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আধিকারিকরাও ৷ ঘটনার সূত্রপাত, সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় জমিতে ফসল নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আগে থাকতেই এলাকা উত্তপ্ত ছিল ৷ এদিন সকালে তাঁদের জমিতে ফসল নষ্ট করার বিষয়টি দেখাতে বিএসএফ জওয়ানদের কাঁটাতারের ওপারের জমিতে নিয়ে যান সুকদেবপুরের কৃষকরা ৷ সেই সময় তাঁদের উপর হামলা চালায় বাংলাদেশিরা ৷ ইট-পাথরের সঙ্গে বোমাও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ ৷
সীমান্তে তুমুল গণ্ডগোল শুরু হয়ে যায় ৷ সেই গোলমালের সুযোগে সীমান্ত টপকে এদেশে ঢুকে পড়ে কিছু বাংলাদেশি নাগরিক ৷ তখনই তাদের তাড়া করেন বিএসএফ জওয়ান ও এলাকার মানুষ ৷ সীমান্তের ওপারে জড়ো হয় কয়েকশো বাংলাদেশি ৷ তাদের হাতে অস্ত্র ছিল ৷ ভারতীয়রাও অস্ত্র হাতে সীমান্তে জড়ো হয়ে যান ৷ এই অবস্থায় বিএসএফ এবং স্থানীয়রা একসঙ্গে পরিস্থিতি সামলাতে মাঠে নামেন ৷
বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আবদুর রহিম বলেছেন, “গোটা বিষয়টি বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনকে জানানো হয়েছে ৷ পুলিশের তরফে গ্রামবাসীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে ৷ বিএসএফ 3 রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে ৷” জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, "আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছি ৷ সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ৷"
এলাকার বাসিন্দা আবু সুফিয়ান বলেন, "এখন গম আর ভুট্টার মরশুম ৷ এলাকার চাষিরা জমিতে গম আর ভুট্টা লাগিয়েছেন ৷ বাংলাদেশিরা সেসব কেটে দিয়েছে ৷ ভারতীয় চাষিরা বিএসএফ-কে সেসব দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন ৷ সেই সময় বাংলাদেশিরা তাঁদের উপর আক্রমণ করে ৷ ইট ও বোমা ছোড়ে ৷ আমরাও এর জবাব দিতে তৈরি ৷”
স্থানীয় অলোক প্রামাণিকের বক্তব্য, “আমরা বিএসএফ-এর পাশে আছি ৷ বিজিবি অনুপ্রবেশকারীদের সাহায্য করছে ৷ ওদের পাথরে এক বিএসএফ জওয়ান রক্তাক্ত হয়েছেন ৷ আমরা সাত জন আহত ৷ ওরা আজ আমাদের লক্ষ্য করে বোমাও ছুড়েছে ৷ আমরা ওদের জবাব দিতে তৈরি আছি ৷”
দীপঙ্কর মণ্ডল নামে স্থানীয় আরেক যুবক বলেন, “আমি সকাল থেকে এলাকায় ছিলাম না ৷ ঘণ্টাচারেক আগে সীমান্তে এসেছি ৷ এসে দেখি, ওপার থেকে প্রচুর মানুষ ভারতীয়দের আক্রমণ করেছে ৷ ওরা বিএসএফ-এর উপরেও হামলা চালায় ৷ কিন্তু অত মানুষের মধ্যে বিএসএফ কিছু করতে পারছিল না ৷ শেষ পর্যন্ত সুকদেবপুর ও শবদলপুরের মানুষ ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় ৷ বিজিবি বাংলাদেশিদের মদত দিচ্ছিল ৷ ওদের দিক থেকে ইট পাটকেল তো বটেই, বোমা পর্যন্ত ছোড়া হয়েছে ৷ ধারালো অস্ত্র নিয়ে তারা আমাদের উপর আক্রমণ চালায় ৷ আমরা ওদের জবাব দিতে তৈরি আছি ৷ শুধু বিএসএফ বাধা না-দিলেই হল ৷”
দিনের বেলায় এমন ঘটনার পর উৎকণ্ঠায় সীমান্তে বসবাসকারী ভারতীয়রা ৷ তাঁদের প্রশ্ন, যদি দিনের আলোতেই বাংলাদেশিরা এভাবে আমাদের উপর হামলা চালায়, তাহলে রাতে কী হবে ? এ নিয়ে বিএসএফ-এর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷
উন্মুক্ত সীমান্ত এলাকায় ত্রিস্তরীয় কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কাজ শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় পূর্ত সড়ক বিভাগ ৷ কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুকদেবপুরেও সেই কাজ শুরু করা হয় ৷ কিন্তু বর্ডার গার্ডস অফ বাংলাদেশের বাধায় বারবার সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায় ৷
বিজিবি-র দাবি, বিতর্কিত জমিতে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে ভারত ৷ এ নিয়ে ইংরেজবাজারের মহদিপুর সীমান্তে দু’দেশের ফ্ল্যাগ মিটিংও হয় ৷ সেখানে ভারতের তরফে সমস্ত নথিপত্র এবং জমির নকশা দেখানো হয় বাংলাদেশকে ৷ যেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হচ্ছে, সেটা যে ভারতীয় জমি তা বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় ৷ কিন্তু তারপরেও বারবার সেই কাজ বন্ধ করে দিচ্ছে বিজিবি ৷ শুধু কাজ বন্ধ করে দেওয়াই নয়, সীমান্ত দিয়ে তারা এদেশে অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করছে ৷ শনিবার তার প্রমাণ মিলল সুকদেবপুরে ৷