গঙ্গাসাগর, 16 জানুয়ারি: গঙ্গাসাগর মেলায় পুণ্যার্থীদের ফেলে দেওয়া বর্জ্য পদার্থ দিয়েই তৈরি হবে রাস্তা ৷ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ৷ 120 জন কর্মী প্রতিনিয়ত এই বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার কাজ করে চলেছেন ৷ এক মাস ধরে চলবে এই কর্মযজ্ঞ ৷
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলতি বছরে ইতিমধ্যেই 45 লক্ষেরও বেশি তীর্থযাত্রী গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান সেরেছেন । মকর সংক্রান্তির স্নান উপলক্ষে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে আয়োজিত কুম্ভ মেলার পরে সবথেকে বড় মেলা হল এই গঙ্গাসাগর । আর এই উত্সব উপলক্ষে দেশের নানান প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষ জড়ো হন এই সাগরের সৈকতে । এত মানুষের সমাগম হওয়ার কারণে সাগর চত্বরে প্রচুর ময়লা আবর্জনাও জমা হয় এই সময় । সেই কথা মাথায় রেখে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার এই উদ্যোগ নেয় প্রত্যেক বছর ।
আর্বজনাকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার ও মেশিনের মাধ্য়মে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হচ্ছে ৷ এর থেকে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, তা নিয়ে হচ্ছে কর্মশালাও ৷ মেলা থেকে কাঁচের বোতল, পুরানো কাপড় এবং অন্যান্য জিনিস সৈকত থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে । ফেলে দেওয়া সেইসব জিনিস আবারও পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হচ্ছে । এমনকি গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের বর্জ্য পদার্থ পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে নির্মাণ করা হবে বিভিন্ন রাস্তা ৷
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী অনিতা মাইতি বালা বলেন, "এবারের গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে সারা জানুয়ারি মাস আমরা বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার কাজ করব । তীর্থযাত্রীদের ফেলে দেওয়া বর্জ্য এখানে এনে পুনর্ব্যবহার করে জৈব সার থেকে শুরু করে কাঁচের জিনিসপত্র তৈরি হচ্ছে ৷ জেলা প্রশাসনের সাহায্যে গঙ্গাসাগরে বিভিন্ন রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে এই বর্জ্য পদার্থ কাজে লাগছে । এই মহান কর্মযজ্ঞে আমাদের 120-রও বেশি কর্মী কর্মরত । নামখানা থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত 8টি ইউনিটে এই মহান কর্মযজ্ঞ চালানো হচ্ছে । কর্মীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে আমরা প্রতিনিয়ত এই জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখছি এবং প্রতিনিয়ত স্যানিটাইজ করছি ।"
এ বিষয়ে সাফাই কর্মী সন্দীপ হাতির বক্তব্য, "গঙ্গাসাগর মেলার সময় বিভিন্ন রাজ্য থেকে তীর্থযাত্রীরা আসেন এবং তাঁরা পুণ্যস্নান করেন । তীর্থযাত্রীদের ফেলে দেওয়া বর্জ্য আমরা সমুদ্র সৈকত থেকে পরিষ্কার করে নিয়ে এখানে আনি এবং সেটাকে রিসাইক্লিং করে আবার মানুষের ব্যবহারযোগ্য করে তুলি ।"
আর এক সাফাই কর্মী মঞ্জু মণ্ডলের কথায়, "তীর্থযাত্রীদের ফেলে যাওয়া কঠিন এবং জৈব বর্জ্য আমরা এখানে আলাদা করি ৷ সেটাকে পুনরায় পরিষ্কার করে কঠিন জৈবগুলো বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষের ব্যবহারযোগ্য গড়ে তুলি । জৈব বর্জ্যগুলি থেকে পরে জৈব সার তৈরি হয় ।"
প্রসঙ্গত, হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর । কারণ গঙ্গা নদী এখানে সাগরে এসে মিশেছে । তাই এই স্থানের নাম গঙ্গাসাগর । সাগরের কপিলমুনির আশ্রম প্রাঙ্গণে এবার 8 জানুয়ারি শুরু হয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা ৷ চলবে 17 জানুয়ারি পর্যন্ত ।