কলকাতা, 24 ডিসেম্বর: আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সামনে এল চাঞ্চলকর তথ্য ৷ কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক রিপোর্ট অনুযায়ী, সেমিনার হলে নির্যাতিতার প্রতিরোধের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি ৷ বায়োলজিকাল স্টেন শুধুমাত্র পাওয়া গিয়েছে সেমিনার ঘরের ভিতরে কাঠের তৈরি পাটাতনের উপরের কার্পেট থেকে ।
এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই ঘটনাস্থল নিয়ে ফের একবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ গত 9 অগস্টের রাতে আরজি কর হাসপাতালে ঠিক কী ঘটেছিল ? তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল কোথায় ? সেই নিয়েই বাড়ছে প্রশ্ন ।
ঘটনার দিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার ঘর থেকে চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ । তদন্ত শুরুর পর ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা । ঘটনাস্থল থেকে নির্যাতিতার আইডেন্টিটি কার্ড, বেশ কিছু কাগজপত্র-সহ অন্তত 40টি জিনিস পাওয়া গিয়েছিল । এরপর ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য সেই সমস্ত নমুনা পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবোরেটরিতে (সিএফএসএল) ।
এরই মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআই-কে । সিএফএসএল রিপোর্ট অনুযায়ী, তদন্ত শুরুর পর গত 13 অগস্ট সিএফএসএল-এর সাহায্য চায় সিবিআই । গত 14 অগস্ট ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সিএফএসএলের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা । সেই অনুযায়ী এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে ।
রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্যাতিতার দেহ উদ্ধারের সময় তাঁর মাথা এবং পেটের কাপড়ের খানিক অংশ ছেঁড়া ছিল । ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকরা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের জানিয়েছিলেন, রক্তের দাগ থাকায় কাপড় কাটা হয়েছিল । সেই নমুনা সিএফএসএল-এ পাঠানোও হয়েছে । কিন্তু, ধস্তাধস্তি বা নির্যাতিতার প্রতিরোধের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, সকলের আড়ালে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি সেমিনার হলে কীভাবে প্রবেশ করলেন, তা নিয়েও রিপোর্টে প্রশ্ন তোলা হয়েছে ৷
ফরেন্সিক রিপোর্টে অনুযায়ী, চারতলায় উঠে সেমিনার হলে পৌঁছনোর আগে একটি নার্সিং স্টেশন রয়েছে । সেখানে 24 ঘণ্টা নার্সের থাকার কথা । নার্সিং স্টেশনের পাশে রয়েছে সংকীর্ণ একটি করিডোর । সেখানেই পালমোনারি বিভাগের রেসপিরেটরি কেয়ার ইউনিট । তারপর রয়েছে সেমিনার হল । অন্যদিকে, সেমিনার হলে ঢোকার দরজা 5টি । প্রতিটি দরজা করিডোরের দিকে । হাসপাতালের কর্মীরা জানান, সেমিনার হলে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র প্রথম দরজাটি ব্যবহার করা যায় ৷ বাকিগুলি বন্ধ থাকে । রিপোর্টে বিশেষজ্ঞদের দাবি, সুতরাং সকলের নজর এড়িয়ে সেমিনার হলে পৌঁছনোর সম্ভাবনা খুব কম ।
কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক দল জানান, ঘটনাস্থলে নীল রঙের প্লাস্টিকে ঢাকা একটি কাঠের টেবিল ছিল ৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেই টেবিলে কয়েকটি লম্বা চুল পাওয়া গিয়েছে ৷ কাঠের পাটাতনে থাকা বিছানা থেকেও চুল পাওয়া গিয়েছে ৷ পাটাতনের পাশে একটি মোবাইল ব্যাক কভার ও কিছু ছেঁড়া কাগজ পাওয়া গিয়েছে ৷ এখন প্রশ্ন, তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের 5 দিন পর ঘটনাস্থলে কীভাবে মোবাইলের ব্যাক কভার বা কাগজ পাওয়া গেল ? তদন্তকারী আধিকারিকরা কীভাবে তা দেখতে পেলেন না ? উঠছে প্রশ্ন ৷