ETV Bharat / state

কেন্দ্র দেয়নি, নদী বাঁধ সংস্কারে রাজ‍্যের বরাদ্দ 200 কোটি ! যন্ত্রণার যাপন শেষের আশায় সুন্দরবন - BUDGET ALLOCATION FOR SUNDARBANS

কেন্দ্র দেয়নি ৷ তবে নদী বাঁধ সংস্কারে রাজ‍্য 200 কোটি টাকা বরাদ্দ করার পর যন্ত্রণা মুক্তির আশায় বুক বাঁধছেন সুন্দরবনের বাসিন্দারা ৷

ETV BHARAT
যন্ত্রণার যাপন শেষের আশায় সুন্দরবন (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 16, 2025, 1:12 PM IST

সন্দেশখালি, 16 ফেব্রুয়ারি: প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক কিংবা বর্ষাকাল, ফি বছর নদী বাঁধ ভেঙে সুন্দরবনের দুকূল প্লাবিত হয় ! বিপর্যয় নেমে আসে নদী সংলগ্ন সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় । এর প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জীবন জীবিকা । ঘরবাড়ি ছেড়ে স্থানীয় স্কুল অথবা সরকারি কোনও ফ্লাড শেল্টারই তখন হয়ে ওঠে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের আশ্রয়স্থল । দিনের পর দিন বেঁচে থাকার এই অসহনীয় যন্ত্রণা এখন যেন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে সুন্দরবনবাসীর ।

বিপর্যয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘদিন ধরেই সুন্দরবনে পাকাপাকি নদীবাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছেন নদী পাড়ের ভুক্তভোগী বাসিন্দারা । বারবার কেন্দ্রীয় এবং রাজ‍্য সরকারের কাছে দরবারও করেছেন তাঁরা । এই লড়াইয়ে সুন্দরবনবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে নদী বাঁধ জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটি ।কমিটির সদস্যরাও কংক্রিটের নদী বাঁধ তৈরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন । কিন্তু কোনও সরকারই কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ ।

সুদিনের আশায় সুন্দরবনবাসী (নিজস্ব ভিডিয়ো)

তবে এ বছর রাজ‍্য বাজেটে নদী বাঁধ সংস্কারে 200 কোটি টাকা বরাদ্দ হওয়ায় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন সুন্দরবনবাসী । এ নিয়ে সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেনি নদী বাঁধ জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটি ।

বসিরহাট মহকুমার প্রায় 10টি ব্লক নিয়ে গঠিত উত্তর 24 পরগনার সুন্দরবন অঞ্চল ৷ এই 10টি ব্লকই নদীবেষ্টিত । ইছামতি, রায়মঙ্গল, ডাসা, গৌরেশ্বর, বিদ‍্যাধরী-সহ একাধিক ছোট-বড় নদী বয়ে গিয়েছে । সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, হাড়োয়া, মিনাখাঁ-সহ 10টি ব্লকের প্রায় সমস্ত নদী বাঁধই নড়বড়ে । বাঁশ, মাটি ও বালির বস্তা দিয়ে কোনও রকমে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে বাঁধগুলি । কংক্রিটের পাকাপোক্ত বাঁধ আজও গড়ে ওঠেনি সুন্দরবনে । ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কার বাণীতে চিন্তায় ঘুম ওড়ে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের ।

আর বর্ষাকালের সময় তো কথাই নেই ! তখন নদীর জলস্তর ফুলেফেঁপে উঠে । ভেঙে যায় নড়বড়ে নদী বাঁধ । হুড়মুড়িয়ে জল ঢুকতে শুরু করে নদী সংলগ্ন একের পর এক গ্রামে । প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ অঞ্চল । বহু মানুষকে গৃহহীন হতে হয় । আশ্রয় নিতে হয় বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে । সুন্দরবন অঞ্চলে একের পর এক ঝড়-ঝাপ্টার সাক্ষী থেকেছেন বাসিন্দারা ! প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছড়ে পড়লে কী ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা ভালো করেই জানেন সুন্দরবনবাসী । তাই নতুন করে আবহাওয়া দফতর কোনও ঘূর্ণিঝড় কিংবা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা ।দু'চোখের পাতা এক করতে পারেন না তাঁরা । কখন কী হয় এই ভেবে !

প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা ভারী বৃষ্টিপাতে নদী বাঁধ ভাঙলেই মেরামত করা হয় ঠিকই । কিন্তু, তা অস্থায়ীভাবে । স্থানীয় সূত্রে খবর, গত কয়েক বছরে 100 দিনের কাজের টাকা দিয়ে বিভিন্ন নদী বাঁধ মেরামত করা হলেও স্থায়ী সমাধান আজও হয়নি । কংক্রিটের পোক্ত নদী বাঁধ তৈরির দাবি বহু বছর ধরেই করে আসছেন সুন্দরবনের বাসিন্দারা । তাঁরা আরও দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ‍্য সরকার এই বিষয়ে উদ্যোগ নিক । বিপজ্জনক নদী বাঁধগুলোকে কংক্রিটের করতে এগিয়ে আসুক উভয় সরকারই । একমাত্র কংক্রিটের নদী বাঁধ হলেই দুর্বিষহ এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে বলে মনে করছেন সুন্দরবনবাসী ।

ETV BHARAT
নদী বাঁধ সংস্কারে রাজ‍্যের বরাদ্দ 200 কোটি (নিজস্ব চিত্র)

এই নিয়ে সেখানে বহু আন্দোলন হয়েছে । যার নেতৃত্বও দিয়েছেন সুন্দরবন নদীবাঁধ ও জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটির সভাপতি অজয় বাইন । কেন্দ্রীয় ও রাজ‍্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে দরবার করা হয়েছে । কিন্তু, কাজের কাজ কিছুই হয়নি । মিলেছে শুধু গালভরা প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস । তারই মধ্যে এবারের রাজ্য বাজেটে সুন্দরবনের নদী বাঁধ সংস্কারে 200 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । যদিও, তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম বলেই দাবি করছেন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা । তবে, তাঁদের প্রত্যাশা, বরাদ্দ টাকা দিয়ে দীপাঞ্চলের কিছু এলাকার নদী বাঁধ এবার হয়তো স্থায়ীভাবে মেরামত করা হবে । যার, ফলে নদীবাঁধ ভেঙে নতুন করে আর গৃহহীন হতে হবে না সেখানকার বাসিন্দাদের ।

এই বিষয়ে বিকাশ মণ্ডল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "নদীকে রক্ষা করতে পারলেই একমাত্র আমরা বাঁচতে পারব । যেভাবে নদীর চরে ঘরবাড়ি, ইটভাটা গড়ে উঠছে, তাতে বিপদ আরও বাড়বে । নদী বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন । না হলে সমস্যা বাড়বে সুন্দরবনবাসীর । কেন্দ্রীয় ও রাজ‍্য সরকারের যৌথ উদ্যোগেই নদী বাঁধ পাকাপোক্তভাবে তৈরি হতে পারে । সেই কারণে দুই সরকারেরই দায়িত্ব রয়েছে । নদী বাঁধ সংস্কারে যত বেশি টাকা বরাদ্দ হবে, ততই উপকৃত হবে সুন্দরবন অঞ্চল । উত্তর 24 পরগনার সুন্দরবন এলাকায় প্রায় 800 কিলোমিটার নদী বাঁধ রয়েছে । যার মধ্যে মাত্র 95 কিলোমিটার কংক্রিটের নদী বাঁধ রয়েছে । বাকি এলাকায় এখনও নদী বাঁধ কাঁচা !লোক দেখাতেই 200 কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে । এই টাকা দিয়ে কী কাজ হবে ?"

এদিকে,তাঁদের লাগাতার আন্দোলনের চাপেই রাজ‍্য সরকার বাজেটে নদী বাঁধ সংস্কারে 200 কোটি টাকা বরাদ্দ করতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি করেছেন সুন্দরবন নদী বাঁধ ও জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটির সম্পাদক অজয় বাইন । এই বিষয়ে তিনি বলেন, "দীর্ঘদিন ধরেই আমরা সুন্দরবনে স্থায়ী এবং কংক্রিটের নদী বাঁধ নির্মাণের জন্য আন্দোলন করে আসছি । তার ফলেই রাজ‍্য সরকার বাজেটে 200 কোটি টাকা বরাদ্দ করতে বাধ্য হয়েছেন । প্রয়োজনের তুলনায় এই টাকা কম হলেও সরকার যে এ বিষয়ে নজর দিয়েছে এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য তাদের । তবে, এটাও আমরা মনে করি নদী বাঁধ সংস্কারের দায়িত্ব শুধু রাজ‍্য সরকারের একার নয় । কেন্দ্রীয় সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে । নদী রক্ষা কেন্দ্র ও রাজ‍্য সরকারের যৌথ তালিকাভুক্ত ।তাই, তাদেরও টাকা বরাদ্দ করা উচিত ।"

অজয় বাইন আরও বলেন, "নদী বাঁধ সংস্কার যেমন জরুরি, তেমনই মজে যাওয়া নদীগুলির নাব‍্যতা বৃদ্ধি করার দিকেও সচেষ্ট হতে হবে কেন্দ্রীয় ও রাজ‍্য সরকারকে । সঙ্গে যথেচ্ছ ম্যানগ্রোভও লাগাতে হবে । যেটা আমরা বলে আসছি ।"

অন্যদিকে, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যেভাবে সুন্দরবন অঞ্চলে একের পর এক মেছো ভেড়ি তৈরি হচ্ছে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নদী বাঁধ ও জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটির সম্পাদক অজয় বাইন ।

উত্তর 24 পরগনার জেলাশাসক শরৎকুমার দ্বিবেদী এবিষয়ে বলেন, "নদী বাঁধ সংস্কারে সবসময় উদ্যোগী প্রশাসন । সেই কারণেই রাজ‍্য সরকার বাজেটে 200 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে । সেই টাকা দিয়েই প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হবে । এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয় ।"

সন্দেশখালি, 16 ফেব্রুয়ারি: প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক কিংবা বর্ষাকাল, ফি বছর নদী বাঁধ ভেঙে সুন্দরবনের দুকূল প্লাবিত হয় ! বিপর্যয় নেমে আসে নদী সংলগ্ন সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় । এর প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জীবন জীবিকা । ঘরবাড়ি ছেড়ে স্থানীয় স্কুল অথবা সরকারি কোনও ফ্লাড শেল্টারই তখন হয়ে ওঠে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের আশ্রয়স্থল । দিনের পর দিন বেঁচে থাকার এই অসহনীয় যন্ত্রণা এখন যেন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে সুন্দরবনবাসীর ।

বিপর্যয় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘদিন ধরেই সুন্দরবনে পাকাপাকি নদীবাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছেন নদী পাড়ের ভুক্তভোগী বাসিন্দারা । বারবার কেন্দ্রীয় এবং রাজ‍্য সরকারের কাছে দরবারও করেছেন তাঁরা । এই লড়াইয়ে সুন্দরবনবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে নদী বাঁধ জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটি ।কমিটির সদস্যরাও কংক্রিটের নদী বাঁধ তৈরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন । কিন্তু কোনও সরকারই কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ ।

সুদিনের আশায় সুন্দরবনবাসী (নিজস্ব ভিডিয়ো)

তবে এ বছর রাজ‍্য বাজেটে নদী বাঁধ সংস্কারে 200 কোটি টাকা বরাদ্দ হওয়ায় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন সুন্দরবনবাসী । এ নিয়ে সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেনি নদী বাঁধ জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটি ।

বসিরহাট মহকুমার প্রায় 10টি ব্লক নিয়ে গঠিত উত্তর 24 পরগনার সুন্দরবন অঞ্চল ৷ এই 10টি ব্লকই নদীবেষ্টিত । ইছামতি, রায়মঙ্গল, ডাসা, গৌরেশ্বর, বিদ‍্যাধরী-সহ একাধিক ছোট-বড় নদী বয়ে গিয়েছে । সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, হাড়োয়া, মিনাখাঁ-সহ 10টি ব্লকের প্রায় সমস্ত নদী বাঁধই নড়বড়ে । বাঁশ, মাটি ও বালির বস্তা দিয়ে কোনও রকমে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে বাঁধগুলি । কংক্রিটের পাকাপোক্ত বাঁধ আজও গড়ে ওঠেনি সুন্দরবনে । ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কার বাণীতে চিন্তায় ঘুম ওড়ে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের ।

আর বর্ষাকালের সময় তো কথাই নেই ! তখন নদীর জলস্তর ফুলেফেঁপে উঠে । ভেঙে যায় নড়বড়ে নদী বাঁধ । হুড়মুড়িয়ে জল ঢুকতে শুরু করে নদী সংলগ্ন একের পর এক গ্রামে । প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ অঞ্চল । বহু মানুষকে গৃহহীন হতে হয় । আশ্রয় নিতে হয় বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে । সুন্দরবন অঞ্চলে একের পর এক ঝড়-ঝাপ্টার সাক্ষী থেকেছেন বাসিন্দারা ! প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছড়ে পড়লে কী ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা ভালো করেই জানেন সুন্দরবনবাসী । তাই নতুন করে আবহাওয়া দফতর কোনও ঘূর্ণিঝড় কিংবা ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা ।দু'চোখের পাতা এক করতে পারেন না তাঁরা । কখন কী হয় এই ভেবে !

প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা ভারী বৃষ্টিপাতে নদী বাঁধ ভাঙলেই মেরামত করা হয় ঠিকই । কিন্তু, তা অস্থায়ীভাবে । স্থানীয় সূত্রে খবর, গত কয়েক বছরে 100 দিনের কাজের টাকা দিয়ে বিভিন্ন নদী বাঁধ মেরামত করা হলেও স্থায়ী সমাধান আজও হয়নি । কংক্রিটের পোক্ত নদী বাঁধ তৈরির দাবি বহু বছর ধরেই করে আসছেন সুন্দরবনের বাসিন্দারা । তাঁরা আরও দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ‍্য সরকার এই বিষয়ে উদ্যোগ নিক । বিপজ্জনক নদী বাঁধগুলোকে কংক্রিটের করতে এগিয়ে আসুক উভয় সরকারই । একমাত্র কংক্রিটের নদী বাঁধ হলেই দুর্বিষহ এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে বলে মনে করছেন সুন্দরবনবাসী ।

ETV BHARAT
নদী বাঁধ সংস্কারে রাজ‍্যের বরাদ্দ 200 কোটি (নিজস্ব চিত্র)

এই নিয়ে সেখানে বহু আন্দোলন হয়েছে । যার নেতৃত্বও দিয়েছেন সুন্দরবন নদীবাঁধ ও জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটির সভাপতি অজয় বাইন । কেন্দ্রীয় ও রাজ‍্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে দরবার করা হয়েছে । কিন্তু, কাজের কাজ কিছুই হয়নি । মিলেছে শুধু গালভরা প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস । তারই মধ্যে এবারের রাজ্য বাজেটে সুন্দরবনের নদী বাঁধ সংস্কারে 200 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । যদিও, তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম বলেই দাবি করছেন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা । তবে, তাঁদের প্রত্যাশা, বরাদ্দ টাকা দিয়ে দীপাঞ্চলের কিছু এলাকার নদী বাঁধ এবার হয়তো স্থায়ীভাবে মেরামত করা হবে । যার, ফলে নদীবাঁধ ভেঙে নতুন করে আর গৃহহীন হতে হবে না সেখানকার বাসিন্দাদের ।

এই বিষয়ে বিকাশ মণ্ডল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "নদীকে রক্ষা করতে পারলেই একমাত্র আমরা বাঁচতে পারব । যেভাবে নদীর চরে ঘরবাড়ি, ইটভাটা গড়ে উঠছে, তাতে বিপদ আরও বাড়বে । নদী বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন । না হলে সমস্যা বাড়বে সুন্দরবনবাসীর । কেন্দ্রীয় ও রাজ‍্য সরকারের যৌথ উদ্যোগেই নদী বাঁধ পাকাপোক্তভাবে তৈরি হতে পারে । সেই কারণে দুই সরকারেরই দায়িত্ব রয়েছে । নদী বাঁধ সংস্কারে যত বেশি টাকা বরাদ্দ হবে, ততই উপকৃত হবে সুন্দরবন অঞ্চল । উত্তর 24 পরগনার সুন্দরবন এলাকায় প্রায় 800 কিলোমিটার নদী বাঁধ রয়েছে । যার মধ্যে মাত্র 95 কিলোমিটার কংক্রিটের নদী বাঁধ রয়েছে । বাকি এলাকায় এখনও নদী বাঁধ কাঁচা !লোক দেখাতেই 200 কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে । এই টাকা দিয়ে কী কাজ হবে ?"

এদিকে,তাঁদের লাগাতার আন্দোলনের চাপেই রাজ‍্য সরকার বাজেটে নদী বাঁধ সংস্কারে 200 কোটি টাকা বরাদ্দ করতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি করেছেন সুন্দরবন নদী বাঁধ ও জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটির সম্পাদক অজয় বাইন । এই বিষয়ে তিনি বলেন, "দীর্ঘদিন ধরেই আমরা সুন্দরবনে স্থায়ী এবং কংক্রিটের নদী বাঁধ নির্মাণের জন্য আন্দোলন করে আসছি । তার ফলেই রাজ‍্য সরকার বাজেটে 200 কোটি টাকা বরাদ্দ করতে বাধ্য হয়েছেন । প্রয়োজনের তুলনায় এই টাকা কম হলেও সরকার যে এ বিষয়ে নজর দিয়েছে এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য তাদের । তবে, এটাও আমরা মনে করি নদী বাঁধ সংস্কারের দায়িত্ব শুধু রাজ‍্য সরকারের একার নয় । কেন্দ্রীয় সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে । নদী রক্ষা কেন্দ্র ও রাজ‍্য সরকারের যৌথ তালিকাভুক্ত ।তাই, তাদেরও টাকা বরাদ্দ করা উচিত ।"

অজয় বাইন আরও বলেন, "নদী বাঁধ সংস্কার যেমন জরুরি, তেমনই মজে যাওয়া নদীগুলির নাব‍্যতা বৃদ্ধি করার দিকেও সচেষ্ট হতে হবে কেন্দ্রীয় ও রাজ‍্য সরকারকে । সঙ্গে যথেচ্ছ ম্যানগ্রোভও লাগাতে হবে । যেটা আমরা বলে আসছি ।"

অন্যদিকে, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যেভাবে সুন্দরবন অঞ্চলে একের পর এক মেছো ভেড়ি তৈরি হচ্ছে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নদী বাঁধ ও জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটির সম্পাদক অজয় বাইন ।

উত্তর 24 পরগনার জেলাশাসক শরৎকুমার দ্বিবেদী এবিষয়ে বলেন, "নদী বাঁধ সংস্কারে সবসময় উদ্যোগী প্রশাসন । সেই কারণেই রাজ‍্য সরকার বাজেটে 200 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে । সেই টাকা দিয়েই প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হবে । এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয় ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.