হিঙ্গলগঞ্জ, 17 সেপ্টেম্বর: উচ্চশিক্ষিত হয়েও মেলেনি চাকরি ! তাই, রাস্তার পাশে জুতো সেলাই করে সংসার চালাচ্ছেন এমএ, বিএড পাশ যুবক । নাম সুভাষচন্দ্র দাস । তাঁর এই জীবন সংগ্রামের লড়াই আজ সুন্দরবনবাসীর মুখে মুখে ঘুরছে । শিক্ষিত হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি সুভাষ এলাকায় একজন ভালো মানুষ হিসেবেও পরিচিত । সেই কারণে সুন্দরবনের মতো প্রান্তিক এলাকার মানুষজন চাইছেন, ওঁর মতো শিক্ষিত যুবকের একটা চাকরির ব্যবস্থা হোক । যাতে এই দুর্দশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন তিনি !
কিন্তু, উচ্চশিক্ষিত হয়েও কেন এখনও চাকরি পাননি সুভাষ ? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, 2016 সালে আপার প্রাইমারি স্কুলের পরীক্ষার উত্তীর্ণ হয়েছিলেন সুভাষ । ইন্টারভিউয়ে পাশ করার পর চাকরির প্যানেলেও নাম ওঠে তাঁর । কিন্তু, আদালতে আপার প্রাইমারি মামলা ঝুলে থাকায় এখনও এই যুবকের কপালে জোটেনি শিক্ষকের চাকরি । তাই, সংসার চালাতে রাস্তার পাশে ছোট্ট একটি জুতো সেলাই ও পালিশের দোকান খুলেছিলেন সুভাষ । সেখান থেকে সামান্য যেটুকু আয় হয়, তা দিয়েই পরিবারের মুখে দু'মুঠো অন্ন তুলে দেন শিক্ষিত এই যুবক । তবে, পুজোর আগে এই মামলার জট খোলার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে । ফলে, দীর্ঘ আট বছরের মাথায় স্কুল শিক্ষকের চাকরির শিঁকে ছিড়তে পারে সুভাষের কপালে ।
সুন্দরবন লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জের দক্ষিণ গোবিন্দকাটি গ্রামের বাসিন্দা সুভাষ । পরিবারের নিজস্ব কোনও জমি-জায়গা নেই । ভাড়া বাড়িতে একচিলতে ঘরে কোনোরকমে বাবা-মাকে নিয়ে থাকেন তিনি । অভাব, অনটন নিত্যসঙ্গী। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে পড়াশোনা যেন বিলাসিতা । তবু, কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন সুভাষ । পড়াশোনার খরচ জোগাতে ট্রেনে জুতো পালিশ এবং সেলাইও করতে হয়েছে সুভাষকে । দিন পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই । কিন্তু, সুভাষের ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি । এখনও ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে রাস্তার পাশে বসে জুতো পালিশের কাজ নিরলসভাবে করে চলেছে সে । তাঁর আশা ভাগ্যের চাকা একদিন ঠিক ঘুরবেই ! শিক্ষকের চাকরি পেয়ে সমাজ পরিবর্তনের কারিগর হয়ে উঠবেন তিনি ।
জানা গিয়েছে, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ পাস করেছেন সুভাষ । এরপর তিনি একই সাবজেক্ট নিয়ে বিএড-ও করেন । পড়াশোনার সূত্রে একসময় বারাসতে ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয়েছিল তাঁকে । কিন্তু, পড়াশোনা এবং খাওয়া-দাওয়ার খরচ জোগাতে তিনি জুতো সেলাই, পালিশ করতেন বারাসতের নানা প্রান্তে । সেই কথা জানতে পেরে তাঁর ভাড়াটিয়া মালিক সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন । তারপর কিছুদিন প্ল্যাটফর্মেও দিন কেটেছে সুভাষের । উচ্চশিক্ষিত এই যুবকের এলাকায় চেনাজানা থাকায় কিছু ছাত্র-ছাত্রীও এখন তাঁর কাছে আসে প্রাইভেট টিউশনি নিতে । সেখান থেকেই অল্প কিছু আয় হয় তাঁর ।
এই বিষয়ে সুভাষচন্দ্র দাস বলেন, "আমি গরিব পরিবারের সন্তান । পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে সেভাবে আমাকে কোনও সহযোগিতা করতে পারেনি । তাই, পড়াশোনার খরচ নিজেই জোগাড় করার চেষ্টা করেছি । তারজন্য ট্রেনে ঘুরে ঘুরে কখনও জুতো পালিশ । আবার কখনও জুতো সেলাইয়ের কাজও করতে হয়েছে আমাকে । দীর্ঘ আট বছর ধরে আপার প্রাইমারি মামলা ঝুলে ছিল আদালতে । এখন শুনতে পারছি, পুজোর আগে বেশ কয়েকজন চাকরির ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে । আমিও তাকিয়ে রয়েছি সেদিকে ।"
এদিকে, এমএ, বিএড পাস সুভাষের জুতো সেলাই করে সংসার চালানোর বিষয়টি অজানা নয় স্থানীয় বিধায়ক দেবেশ মণ্ডলেরও । তাঁর কথায়, "ওর শিক্ষকের চাকরিটা হয়ে যাক, সেটাই আমরা চাই । কারণ, ওর মতো গরিব পরিবারের শিক্ষকের চাকরির প্রয়োজন রয়েছে । আমরা ওর পরিবারের পাশে সবসময় দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি । চাকরি হয়ে গেলে আগামী দিনে ও (সুভাষ)-ই সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে । তখন আর আমাদের ওর পাশে সেভাবে দাঁড়াতে হবে না ।"