কলকাতা, 10 অগস্ট: আরজি করের ঘটনার আঁচ ছড়িয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৷ বিক্ষোভ-অবস্থানে কার্যত অনড় রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র এবং পড়ুয়া চিকিৎসকরা ৷ বিক্ষোভে সামিল হয়েছে কলকাতারও অন্য়ান্য মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়ারা ৷ আরজি করের ঘটনার উত্তাপ এবার ছড়িয়ে পড়ল জেলায় জেলায় ৷ বিক্ষোভ অবস্থানে বসলেন বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়ারা ৷
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ও সিনিয়র ডাক্তার-সহ পড়ুয়ারা বিক্ষোভে সামিল হন ৷ তাঁদের দাবি, আরজি করের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে ৷ এরই সঙ্গে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তার দিকটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা ৷
শুক্রবার কলকাতার আরজি করের জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনার হল থেকে এক তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার করা হয় ৷ সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই বিভিন্ন মেডিক্যালের পড়ুয়া ডাক্তাররা ক্ষোভে ফেটে পড়েন ৷ এদিন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ডাক্তাররা অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছে ৷ প্ল্যাকার্ড ব্যানারে নিজেদের দাবি-দাওয়ার কথা বলে অবস্থান করছেন ৷ মহিলা ডাক্তারদের নিরাপত্তা অবিলম্বে সুনিশ্চিত করার জোরদার দাবি তুলেছেন তিনি ৷
এই বিষয়ে এক ডাক্তারি পড়ুয়া বলেন, "আমরা মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্যই দিনরাত এক করে কাজ করে চলেছি, কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা কোথায় ? যেখানে আরজি করের মতন হাসপাতালে খুন-ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে যায় অথচ নির্বিকার পুলিশ প্রশাসন, সেখানে আমাদের নিরাপত্তার প্রয়োজন। সিসিটিভি ও যাবতীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে ৷ তবে আমরা আন্দোলনের জন্য ইমার্জেন্সি বিভাগ বন্ধ রাখছি না ৷ সমস্ত কাজই চলছে ৷ শুধু আউটডোরে আমরা কাজ বন্ধ রাখছি ৷"
রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের রহস্যমৃত্যুর জেরে বন্ধ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের আউটডোর পরিষেবা ৷ হাসপাতালের চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ফলে বিপাকে রামপুরহাট মেডিক্যালের রোগীরা। এদিন সকাল থেকেই হাসপাতালের আউটডোরের সামনে বন্ধের নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছে চিকিৎসকরা। তার ফলে স্বাভাবিকভাবে বিপাকে পড়েছে দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী ও রোগীর পরিবারের লোকজনেরা।
রামপুরহাটের বাসিন্দা শঙ্করী মণ্ডল বলেন, "আমি আজ হাসপাতালে একটি টেস্ট করতে এসেছিলাম। দেখলাম সব বন্ধ। হাসপাতালেই বসে অপেক্ষা করছি যদি খোলে। খুবই অসুবিধায় পড়েছি।" জরুরি এবং প্রসূতি বিভাগ ছাড়া কোথাও হচ্ছে না চিকিৎসা। তার ফলে ভোগান্তির শিকার রোগী ও রোগীর পরিবারের লোকজন। অন্যদিকে, রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা এদিন রামপুরহাটে একটি প্রতিবাদ মিছিলও করে।
সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজ
আরজি কর হাসপাতালের ট্রেনি চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এবার কর্মবিরতির পথে হাঁটলেন সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ডাক্তারি পড়ুয়ারা। সকাল থেকেই পরিষেবা বন্ধ রেখে আন্দোলন শুরু করেছেন তাঁরা। প্ল্যাকার্ড হাতে নৃশংস এই খুনের দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে সরব হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। জুনিয়র চিকিৎসক এবং ইন্টার্নদের এই কর্মবিরতি জেরে সমস্যায় পড়েছেন দূর দূরান্ত আসা রোগী ও তাঁর আত্মীয়রা। এদিকে, রোগীর পরিজনদের কাছে এই আন্দোলনের ব্যাখাও দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসক থেকে মেডিক্যাল পড়ুয়ারা।
আরজি কর হাসপাতাল
অন্যদিকে এদিনও সকাল থেকে আরজি করে চিকিৎসক পড়ুয়ারা অবস্থানে বসেছেন ৷ ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেসও। বিক্ষোভ দেখানোর সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এক কংগ্রেস সদস্য। জরুরী পরিষেবার মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ইমারজেন্সি বিভাগে ৷ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসক অমৃতা বলেন, "আমরা চাই না কর্মবিরতি করতে। চিকিৎসা করতে ভালবাসি আমরা। কিন্তু অবস্থা প্রেক্ষিতে আমাদের আজ অবস্থানে বসতে হয়েছে। যে মৃত্যু হয়েছে তার যথাযথ বিচার চাই। একজনকে গ্রেফতার করে পুরো বিষয়টা ঢাকা দেওয়া হচ্ছে। এর সম্পূর্ণ তদন্ত হওয়া দরকার।" এর পাশাপাশি সকল ছাত্র-ছাত্রীর দাবি নিরাপত্তাকে ঘিরে। কোথায় নিরাপত্তা সেই প্রশ্নই তুললেন অবস্থানরত জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
ইএসআই হাসপাতাল
আরজি কর হাসপাতালে কর্মরত একজন মহিলা ডাক্তারকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠেছে ৷ এর প্রতিবাদে শনিবার ইএসআই হাসপাতালে চিকিৎসকেরা মিছিল করলেন ৷ হাসপাতালের ছাত্র আবাস থেকে প্রায় 70-75 জন ডাক্তারি পড়ুয়া আরজি কর হাসপাতালে কালো ব্যাজ পরে আরজি কর হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখান ৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জরুরি বিভাগের পরিষেবা অব্যাহত রেখেই তাঁরা এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছে ৷ তাঁরা দোষীর উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান ৷ পোস্টার হাতে ডাক্তাররা বিক্ষোভে সামিল হন ৷
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার কর্মবিরতি শুরু করলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক এবং জুনিয়র ডাক্তাররা । তবে আউটডোর বন্ধ রাখলেও জরুরি পরিষেবা চালু ছিল ৷ তাঁদের দাবি, চিকিৎসকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জুনিয়র চিকিৎসক বলেন, "আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা অত্যন্ত নারকীয় । আমরা চাই যারা এই ঘটনায় যুক্ত তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক । আর মহিলা চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক । যতক্ষণ না পর্যন্ত অপরাধী ধরা পড়ে শাস্তি পায় ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে । চিকিৎসক থেকে ইন্টার্ন হাউস স্টাফ সকলেই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন ।"
আরেকজন জুনিয়র চিকিৎসকের কথায়, "আমরা যে ছেলেমেয়েরা নির্বিশেষে দিনে বা রাতে রোগীদের স্বার্থে পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছি সেখানে আমাদের নিরাপত্তা কোথায় ? আমাদের উপযুক্ত নিরাপত্তা দেওয়া হোক । আমরা কলেজের প্রিন্সিপাল এবং হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলতে চাই । আমরা কর্মবিরতি পালন করলেও ইমার্জেন্সি পরিষেবা চালু রেখেছি । শুধু আউটডোর বন্ধ রেখেছি । অবিলম্বে দোষীকে গ্রেফতার করে কঠিন সাজা দিতে হবে ।"
জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
আরজি কর হাসপাতালে জুনিয়র মহিলা পড়ুয়া চিকিৎসক খুনের ঘটনায় অভিযুক্তর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠল জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে প্রতিবাদে সরব হলেন নার্সিং পড়ুয়া এবং চিকিৎসকরাও। মোমবাতি হাতে প্রতিবাদ মিছিলের পাশাপাশি হাসপাতালের সার্বিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করারও দাবি জানান তারা। এদিন জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করে গোটা শহরে পরিক্রমা করে।
রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা নিয়ে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের সামনে বিক্ষোভ ও মোমবাতি মিছিল করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। রায়গঞ্জ মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তার-সহ পড়ুয়ারাও এই অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন। তাদের একটাই দাবি, আরজি করের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।