কলকাতা/আসানসোল, 21 ফেব্রুয়ারি: শিখ পুলিশ আধিকারিককে 'খালিস্তানি' বলার অভিযোগ উঠেছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ৷ এবার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করলেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান ৷ তিনি এই মন্তব্যের জন্য বিজেপির ক্ষমা চাওয়ারও দাবি তুলেছেন ৷ এদিন সোশাল মিডিয়ায় পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, "বাংলার একজন শিখ আইপিএস অফিসারকে একজন বিজেপি নেতা দেশবিরোধী বলেছেন ৷ এটা খুবই নিন্দনীয় ৷ হয়তো ওই বিজেপি নেতা জানেন না যে, দেশকে স্বাধীন করতে এবং দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় আজ পর্যন্ত পঞ্জাবিরা সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে ৷ পঞ্জাবিদের কাছে বিজেপির ক্ষমা চাওয়া উচিত ৷"
'খালিস্তানি' মন্তব্য ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে ৷ তাই এই মন্তব্য ঘিরে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে ৷ তার আঁচ এসে পড়েছে আসানসোলেও । বুধবার দুপুরে হীরাপুর থানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন শিখ সমাজের মানুষজন। বিভিন্ন গুরুদুয়ারা থেকে এদিন শিখ সমাজের মহিলা-পুরুষরা এসে দীর্ঘক্ষন ধরে হীরাপুর থানার বাইরে এসে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা স্মারকলিপিও জমা দেন হীরাপুর থানায় ।
শিখ সমাজের নেতৃত্বের দাবি, সন্দেশখালিতে আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পলই ওই পুলিশ আধিকারিককে অপমান করেছেন এবং ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছেন । আর তাই তাঁর বিধানসভার অন্তর্গত হীরাপুর থানায় এসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। শিখ সমাজের নেতৃত্ব আরও দাবি করেছেন, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করলে আইনগতভাবে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেই ব্যবস্থা অবিলম্বে নিতে হবে । নইলে আগামিদিনে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে তাঁরা ।
অন্যদিকে রাজ্যের শিখ সম্প্রদায়ের কাছে কোনও ভিডিয়ো বা অডিয়ো প্রমাণ নেই। তবু তাঁদের সম্প্রদায়ের একজনকেই 'খালিস্তানি' বলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ তখন সম্প্রদায়ের বাকিরা মানবিকতার ভিত্তিতেই ধরনা প্রদর্শন করছে । বুধবার এমনটাই জানালেন রাজ্যের গুরুদুয়ারার একাংশের শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ। সন্দেশখালিতে শিখ পুলিশ অধিকারিককে 'খালিস্তানি 'বলার অভিযোগে মঙ্গলবার মধ্য কলকাতায় বিজেপির প্রধান কার্যালয়ের সামনে ধরনা শুরু হয় । সেই ধরনা আজও চলেছে ।
মঙ্গলবার সন্দেশখালিতে যাওয়ার সময় বাধাপ্রাপ্ত হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে বিজেপি । সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক শিখ পুলিশ আধিকারিককে 'খালিস্তানি' বলার অভিযোগ ওঠে বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে । ওই পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন । যদিও গতকালই এই অভিযোগ অস্বীকার করেন শুভেন্দু অধিকারী । আর এই বিষয়টি সামনে আসার পরেই রোষ ছড়ায় রাজ্যের শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে । বুধবার গুরুদুয়ারা মুন্নি লাল সিং সঙ্গতের সদস্যরা বিজেপি প্রধান কার্যালয়ে ডেপুটেশন জমা দিতে আসেন ৷ যদিও তাঁদের ডেপুটেশন নিতে অস্বীকার করে দলীয় কার্যালয়ের আধিকারিকরা ।
এরপর ডানলপ শিখ সংগঠনের পক্ষ থেকে সরদার হরদেব সিং জানান, যদিও তাঁদের হাতে এমন কোনো ভিডিয়ো বা অডিয়ো নেই যার থেকে প্রমাণ করা যায় যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বা বুধবার ধামাখালিতে উপস্থিত কোনো বিজেপি নেতা বা বিধায়ক কিংবা সংসদ তখন কর্মরত শিখ পুলিশ আধিকারিককে 'খালিস্তানি' বলেছেন । তবে যেহেতু পুলিশ আধিকারিক নিজেই অভিযোগ করেছেন যে তাঁকে 'খালিস্তানি' বলা হয়েছে তাই সেই বিষয় প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁদের এই ধরনা এবং ডেপুটেশন । যদিও তিনি এও স্পষ্ট করেই জানান, আজ যে ডেপুটেশন তাঁরা দিতে এসেছিলেন সেখানে কোথাও বিজেপির কোনো নেতার নাম উল্লেখ করা নেই । কারণ যেহেতু তাঁদের হাতে কোনো প্রমাণ নেই তাই তাঁরা কারো নাম চিঠিতে উল্লেখ করেননি ।
আজ বিজেপি আইটি সেল এর প্রধান অমিত মালব্য টুইট করে জানান, বিজেপি পার্টি অফিসের বাইরে যারা বিক্ষোভ করছে তারা তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত । এই বিষয়ে সরদার হরদেব সিং জানান, একটি 300 বছরের পুরনো গুরুদুয়ারা পুনরায় উদ্বোধন হয়েছিল তখন সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন । ওই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁরও ছবি রয়েছে । তাহলে কি এটা প্রমাণিত হয় যে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত? তাই এই ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে কে কোথায় কার সঙ্গে ছবি তুলে পোস্ট করছে সেটা বলা সম্ভব নয় । তবে একেবারেই আন্তরিকতা এবং মানবিকতার থেকেই সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষজন এক হয়ে এই কথার প্রতিবাদ জানাচ্ছে ।
আরও পড়ুন: