কলকাতা, 17 অগস্ট: আরজি কর-কাণ্ডে শহরে চলছে একের পর এক প্রতিবাদ মিছিল । প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন টলি থেকে বলি তারকারা । আর এবার পথে নামলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও টোটা রায়চৌধুরীর মতো ব্যক্তিত্বরাও । শুক্রবার বিকেলে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রাক্তনীরা আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে মৌন মিছিল করেন । কলেজের সামনে থেকে শুরু হয় এই মিছিল । মিছিলে হেঁটেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, টোটা রায়চৌধুরী, অরিন্দম শীল, বিক্রম ঘোষ থেকে পরিচালক প্রতিম ডি গুপ্তের মতো প্রাক্তনীরা । মিছিলে হাঁটলেন কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও ।
14 অগস্ট রাত দখলের কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন মেয়েরা ৷ তাতে যাদবপুরের পথে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল অরিন্দম শীলকেও । আরজি কর-কাণ্ডে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সোশাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন আগেই । এবার সশরীরে প্রতিবাদ জানাতে পিছিয়ে রইলেন না তিনিও । মিছিলে হাঁটা টোটা রায়চৌধুরীর কথায়, "আমাদের এত প্রতিবাদ, এত আওয়াজ যেন কর্তৃপক্ষের কানে পৌঁছয়, এটাই কামনা । আমাদের তিলোত্তমাকে কত কষ্ট পেতে হল । তাঁর বাবা মাকে কত কষ্ট পেতে হল । এ কি আমার শহর? ছাত্রছাত্রীরাও ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে, সেটা আজ মিছিলে হেঁটে উপলব্ধি করলাম । আমরা প্রত্যেকেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর বিচার চাই ।"
টোটা রায়চৌধুরী সোশাল মিডিয়ায়ও এই নিয়ে বিস্তারিত লিখেছিলেন ৷ তিনি বলেন, "গত কয়েকদিন ধরেই মনটা বিষন্ন, অস্থির । কোনও কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারছি না । যে প্রাণের শহর নিয়ে আমার এত অহংকার, এত গর্ব সেই তিলোত্তমার তিলোত্তমাকে, যে পাশবিকতায়, যে নিষ্ঠুরতায় হত্যা করা হল সেটা ভেবে বুক কেঁপে উঠছে ৷ আর লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে । এটা আমার শহরে হল ? বহুবছর ধরেই আমি জনসমক্ষে কোনও কিছু বলিও না, লিখিও না । কারণ এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি যেখানে অধিক সংখ্যক মানুষ প্রত্যেকটি বাক্যে, প্রত্যেকটি শব্দে অ্যাজেন্ডা খোঁজে, অ্য়ালাইনমেন্ট খোঁজে ।"
তিনি আরও লেখেন, "রাজনীতি এখন শেখায়: ইফ ইউ আর নট উইথ মি, ইউ আর এগেনস্ট মি ৷ সে যে মেরুরই হোক না কেন । বিরোধী না হয়েও বিরোধ করা যে সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অন্তর্গত সেটা প্রায় কেউই আর মানতে চায় না । এমতাবস্থায় নীরবতাকেই বেছে নিয়েছিলাম । কিন্তু প্রত্যেক মানুষেরই একটি ব্রেকিং পয়েন্ট থাকে যখন তাকে বলতেই হয়: দাস ফার অ্যান্ড নো ফারদার ৷ তিলোত্তমা: তার সর্বপ্রথম পরিচয় সে এক জীবনদাত্রী । মুমূর্ষর সেবা করে তাকে সুস্থ করে তোলা তো একপ্রকার জীবনদান । অথচ সেই জীবনদাত্রীর জীবন ক'জন নরপিশাচ কি নৃশংস রূপে কেড়ে নিল । ইদানীংকালে এত বীভৎসতা বোধহয় কেউ কোথাও প্রত্যক্ষ করেননি । কোটি, কোটি মানুষের মতো আমিও আশা রাখি, প্রার্থনা করি যেন প্রকৃত অপরাধীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রেফতার করা হয় এবং প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় ।"
তাঁর কথায়, "যেটা আমায় স্তম্ভিত করে দিল সেটা হল, কয়েকজনের 'সৌজন্যে' তিলোত্তমার বাবাকে ও মাকে যে পর্যায়ের মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হল । সেই হৃদয়হীন, বিবেকহীন ক'জনের কাছে আমার প্রশ্ন; চূড়ান্ত আত্মম্ভরিতায় কি মানবিকতা ও সহমর্মিতা বিস্মৃত হয়েছেন ? ভুলে গিয়েছেন যে মানুষের পরিচয় তার মনুষ্যত্বে ? ভারতবর্ষের বেশ কিছু প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের খুব দৃঢরূপে মনে করিয়ে দিতে চাই যে আমরা সাধারণ মানুষ কিন্তু দেশের নাগরিক, আপনাদের প্রজা নই । দুটোর পার্থক্য বুঝতে শিখুন আর কথাটা সর্বদা মাথায় রাখুন ।"
উল্লেখ্য, এই বক্তব্যে কোনও রাজনৈতিক রঙ খুঁজতে বারণ করেছেন টোটা রায়চৌধুরী ।