কলকাতা, 12 অগস্ট: আরজি কর কাণ্ডে এবার ঘটনাস্থল এবং মৃত ডাক্তারি পড়ুয়ার শরীর থেকে যে সিমেনের নমুনা পাওয়া গিয়েছিল, সেটা ধৃত সঞ্জয় রায়ের কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য সঞ্জয়ের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করল পুলিশ । এই ঘটনায় উঠে আসা বেশকিছু প্রশ্নের উত্তর পেতে, দুই নমুনা মিলিয়ে দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা ৷
নৃশংস এই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত একজনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে । তবে অপরাধী কি শুধু সঞ্জয়, নাকি আরও কেউ ছিল, তা জানতে বীর্যের নমুনা খতিয়ে দেখছে লালবাজার ৷ ঘটনাস্থল থেকে ও মৃতার শরীর থেকে যে সিমেন নমুনা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা খুঁজে পেয়েছেন, সেগুলি শুধুমাত্র সঞ্জয়েরই কি না তা জানতে চাইছে পুলিশ ।
আজ সকাল থেকেই ধৃত সঞ্জয় রায়কে দফায় দফায় জেরা করেন কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা । সঞ্জয়ের কাছ থেকে একাধিক পুলিশকর্মীর নাম এবং তাঁদের ফোন নম্বর ইতিমধ্যেই পেয়েছেন তদন্তকারীরা । লালবাজারের অনুমান, পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে একটি গোপন আঁতাত তৈরি হয়েছিল এই সিভিক ভলেন্টিয়ারের । নইলে একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার কীভাবে কলকাতা পুলিশের ওয়েলফেয়ার কমিটিতে জায়গা পায় ?
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের একজন অতিরিক্ত নগরপাল পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক বলেন, "গোটা বিষয়টি অত্যন্ত সেনসিটিভ । তদন্তের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি যাতে না-হয় সেই দিকটিও আমাদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হচ্ছে । এছাড়া যত শীঘ্র সম্ভব চিকিৎসকদের বুঝিয়ে সেখানে রোগী দেখাশোনার কাজ শুরু করার চেষ্টা করছি আমরা । এর মধ্যে ধৃত সঞ্জয়কে জেরা পর্ব চলছে এবং তার বয়ান একাধিকবার রেকর্ড করছেন তদন্তকারীরা । ফলে সব দিক খতিয়ে দেখা প্রয়োজন ।"
লালবাজার সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার আরজি কর হাসপাতালের ওই তরুণী ডাক্তারি পড়ুয়ার সঙ্গে যে জঘন্য অপরাধের ঘটনা ঘটে, ঠিক তার আগের মুহূর্তে ওই তরুণী চিকিৎসকের সঙ্গে নৈশভোজ সেরেছিলেন চারজন ডাক্তারি পড়ুয়া । তাঁদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা । এছাড়াও হাসপাতালের তরফ থেকে বরখাস্ত করা দুই রক্ষী ও এক খাবার ডেলিভারি বয়েরও বয়ান রেকর্ড করেছেন তদন্তকারীরা ।
আজ সকালে কলকাতা পুলিশের ডিসি (নর্থ) অভিষেক গুপ্তার নেতৃত্বে একদল পুলিশকর্মী আরজি কর হাসপাতালে সেমিনার হলে গিয়ে ঘণ্টাখানেক ধরে গোটা ঘটনাস্থলের ভিডিয়োগ্রাফি করেন । মূলত জানা যাচ্ছে, ধৃত সঞ্জয়কে জেরা করে যে সব তথ্য পাওয়া গিয়েছে, সেই তথ্যের সঙ্গে ঘটনাস্থলে থাকা জিনিসপত্র মিলিয়ে দেখছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার এই ঘটনা ঘটে । শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ স্থানীয় টালা থানায় হাসপাতালের তরফ থেকে ফোন করে জানানো হয়, এক তরুণী পড়ুয়া চিকিৎসক হাসপাতালের চারতলার সেমিনার হলে বিবস্ত্র অবস্থায় অচৈতন্য ভাবে পড়ে রয়েছেন । সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে আসেন কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েল এবং বিশাল পুলিশ বাহিনী । পরে জানা যায়, চিকিৎসককে খুন করা হয়েছে । এর পরেই ক্রমে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা আরজি কর চত্বর । আর তিন দিনে এই ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশজুড়ে ৷