ভাটপাড়া, 24 নভেম্বর: ভাটপাড়ায় তৃণমূল নেতা অশোক সাউ খুনের ঘটনায় আরও এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল পুলিশ ৷ ধৃতের নাম অজয় পাসোয়ান ওরফে ভিকি ৷ রবিবার ভোররাতে বিহারের গোপালগঞ্জ এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে ৷ সেখান থেকে ট্রানজিট রিমান্ডে ধৃতকে ব্যারাকপুরে আনা হচ্ছে ৷ সবমিলিয়ে তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ৷
গত 13 নভেম্বর রাজ্যে ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন তৃণমূল নেতা অশোক সাউ ৷ তিনি ভাটপাড়া পুরসভার 12 নম্বর ওয়ার্ডের দলের প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন ৷ অশোকবাবু সেদিন বাড়ির অদূরে একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন ৷ দুষ্কৃতীরা সেখানে অতর্কিতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ ৷
অশোক সাউকে লক্ষ্য করে তারা পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় ৷ দুষ্কৃতীদের গুলি তাঁর পেটে লাগে ৷ রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি দোকানের মধ্যে লুটিয়ে পড়েন ৷ তারপর দুষ্কৃতীরা চার নম্বর বাসস্ট্যান্ড চত্বরে এলোপাথারি বোমাবাজি করতে করতে চম্পট দেয় ৷ স্থানীয়রা তড়িঘড়ি অশোক সাউকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ কিন্তু পথেই তাঁর মৃত্যু হয় ৷ খবর পেয়ে খোদ ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া ঘটনাস্থলে পৌঁছন ৷ ঘটনার তদন্তে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে সিট গঠন করা হয় ৷ তার মাথায় রয়েছেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি নর্থ গণেশ বিশ্বাস ৷
সিটের আধিকারিকরা ঘটনার তদন্ত নেমে জানতে পারেন, এর নেপথ্যে রয়েছে 'বদলার' আক্রোশ ৷ 2020 সালের নভেম্বর মাসে ভাটপাড়ার পালঘাট রোডে আকাশ প্রসাদ নামে এক সমাজবিরোধীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ৷ সে ছিল মাদক পাচারের মাস্টারমাইন্ড ৷ তার বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, রাহাজানি-সহ আরও বেশ কিছু অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল ৷ ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন তৃণমূল নেতা অশোক ৷
অভিযোগ, দাদার খুনের বদলা নিতে নিহত আকাশের ভাই সুজল প্রসাদ 2023 সালে অশোককে একবার খুনের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ৷ যদিও সেবার বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু সুজল অশোকের পিছু ছাড়েনি ৷ 13 নভেম্বর অশোক সাউ চায়ের দোকানে বসেছিলেন ৷ দুষ্কৃতীরা সেখানে গিয়ে তাঁকে গুলি করে খুন করে ৷ নিহত অশোকের পরিবারের পক্ষ থেকে জগদ্দল থানায় সুজল-সহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয় ৷ তদন্তে নেমে ঘটনার পরের দিন পুলিশ কাউসার আলি নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে ৷ কাউসারকে জেরা করে পুলিশ তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় সুজল পাসোয়ানের জড়িত থাকার কথা জানতে পারে ৷ 16 নভেম্বর ভোররাতে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে একটি গোপন ডেরা থেকে সুজলকে পাকড়াও করে পুলিশ ৷
ধৃত কাউসার ও সুজলকে জেরা করে পুলিশ তৃণমূল নেতা খুনের মূল অভিযুক্ত সুজল প্রসাদের অবস্থান জানতে পারে ৷ রাজ্য পুলিশের এডিজি সিআইডি বিশাল গর্গ ও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি নর্থ গণেশ বিশ্বাসের নেতৃত্বে মূল অভিযুক্ত সুজল প্রসাদকে ধরতে বিশেষ পরিকল্পনা করা হয় ৷ সেই মতো 18 নভেম্বর ভোররাতে বিহার থেকে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার আগে বর্ধমান রেল স্টেশন থেকে সুজলকে পুলিশ হাতেনাতে ধরে ৷ সঙ্গে সানি দাস এবং আরও এক দুষ্কৃতীকে পাকড়াও করে পুলিশ ৷ ধৃতরা এখন পুলিশি হেফাজতে রয়েছে ৷ তাদের জেরা করে তৃণমূল নেতা অশোক সাউ খুনের ঘটনায় অজয় পাসোয়ানের জড়িত থাকার কথা জানতে পারে ৷
সিটের তদন্তকারীরা বিহারে ওত পেতে ছিলেন ৷ অবশেষে গোপালগঞ্জের এক ডেরা থেকে শনিবার ভোররাতে পুলিশ অজয়কে পাকড়াও করে ৷ ট্রানজিট রিমান্ডে সেখান থেকে তাকে ব্যারাকপুরে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৷