শিলিগুড়ি, 16 সেপ্টেম্বর: আরজি কর-কাণ্ডের পরই সামনে এসেছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের 'থ্রেট কালচার'৷ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নেতিবাচক দিকগুলির প্রতিবাদে চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি ৷ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে এই কর্মবিরতির জেরে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের আউটডোরে রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে । গত এক মাসে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে প্রায় 55 হাজার রোগী শুধুমাত্র আউটডোরে চিকিৎসা করিয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর । সংখ্যাটা স্বাভাবিকের থেকে প্রায় 15 হাজার বেশি ।
চিকিৎসকমহলের একাংশের মতে, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের আউটডোরে রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির অন্যতম কারণ আরজি কর-কাণ্ড ও 'থ্রেট কালচার'-এর প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের লাগাতার কর্মবিরতি ৷ জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আউটডোর এবং জরুরি বিভাগে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ।
যদিও জুনিয়র ডাক্তাররা হাসপাতাল চত্বরে 'অভয়া ক্লিনিক' চালাচ্ছেন । তবে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ভর্তি না-করিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ । তাই সাধারণ মানুষ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না । সে ক্ষেত্রে রোগীদের একটি বড় অংশ শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের উপরই ভরসা রাখছেন ।
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার চন্দন ঘোষ বলেন, "এক মাসে প্রায় 55 হাজারেরও বেশি রোগী আউটডোরে চিকিৎসা করাতে এসেছেন । রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে । তবে আমরাও পরিষেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি । কোনও রোগীকে যাতে ফিরে যেতে না-হয়, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।"
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়ে খুশি রোগীর পরিবার-পরিজনেরা ৷ জনৈক রোগীর আত্মীয় ধনপতি রায় বলেন, "মেডিক্যালে ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলছে । সেজন্য জেলা হাসপাতালে আসা । এখানে ভালো পরিষেবা পেয়েছি । সব ডাক্তাররা খুব যত্ন নিয়েছেন ৷"
তবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তনী শহরিয়ার আলমের দাবি, "চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত রয়েছে এটা ভুল । জুনিয়র ডাক্তাররা আউটডোরে বসছেন না ঠিকই, কিন্তু তাঁরা জরুরি বিভাগে পরিষেবা দিচ্ছেন । এছাড়াও হাসপাতালে অভয়া ক্লিনিক চালু করা হয়েছে । দু'দিনে প্রায় 600 রোগী অভয়া ক্লিনিকে চিকিৎসা পেয়েছেন ।"
জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আউটডোরে গড়ে অন্তত প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসা পরিষেবা পান । তবে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির কারণে বহু মানুষকে ফিরে যেতে হচ্ছে । যদিও সিনিয়র ডাক্তাররা পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । অন্যদিকে, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন এক হাজার থেকে 1200 রোগী আউটডোরে চিকিৎসা করান । প্রতি মাসে ওই হাসপাতালে গড়ে 35 থেকে 40 হাজার মতো রোগী পরিষেবা পেয়ে থাকেন ।
এদিকে, আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর থেকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাটো করা হয়েছে । আগে হাসপাতালে 6 জন পুলিশকর্মী থাকতেন । এখন সেই সংখ্যাটা বাড়িয়ে 15 জন করা হয়েছে । 6 জন মহিলা পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে । রাতে মহিলা চিকিৎসকদের সঙ্গে একজন করে পুলিশ কনস্টেবলও রাউন্ডে যাচ্ছেন । হাসপাতাল চত্বরে বর্তমানে 41টি সিসি ক্যামেরা আছে । আরও 71টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে । এছাড়াও 30 থেকে 40 জন বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী হাসপাতালে মোতায়েন রয়েছেন । সেই সংখ্যাটা বাড়িয়ে 100 জন করার জন্য আবেদন করা হয়েছে ।