ETV Bharat / state

চলমান গুগুল ! যাত্রীরা সঠিক উত্তর দিলেই বিনামূল্যে সফরের সুযোগ টোটোতে - TOTO DRIVER LIKE WALKING GOOGLE

'কেবিসি'র মতো যাত্রীদের সঙ্গে প্রশ্ন উত্তর পর্বে মেতে ওঠেন টোটো চালক ৷ এখানে প্রশ্নের উত্তর দিলে টাকা না মিললেও ভাড়া দিতে হয় না ৷

Toto Driver like walking Google
যেন আস্ত চলমান গুগল টোটো চালক (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 16, 2025, 9:07 PM IST

লিলুয়া, 16 ফেব্রুয়ারি: যেন চলমান গুগল ! এই চালকের টোটোয় উঠে প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলেই মেলে বিনামূল্যে সফরের সুযোগ ৷ শুধু তাই নয়, টোটোতে চড়লে জানা যায় প্রতিটি দিনের মাহাত্ম্য। কারণ তিনি দিন অনুযায়ী টোটোতে বিভিন্ন মনীষী থেকে শুরু করে সমাজের নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখা বিশেষ ব্যক্তিদের ছবি রাখেন ৷ আর সেই সংক্রান্ত প্রশ্ন করেন যাত্রীদের ৷

ইনি টোটো চালক সুরঞ্জন কর্মকার ৷ আগে কাজ করতেন একটি ফটো ল্যাবে ৷ সেই কাজটা চলে যাওয়ার পর এখন রুজি রুটির জন্য টোটো চালান ৷ হাওড়ার লিলুয়ায় চকপাড়া টোটো স্ট্যান্ডে গেলেই দেখা মিলবে সুরঞ্জনের ৷ কিন্তু তিনি কোনও সাধারণ টোটো চালক নন। তাঁর কাজ তাঁকে অসাধারণ করে তুলেছে ৷

যাত্রীরা সঠিক উত্তর দিলেই বিনামূল্যে সফরের সুযোগ টোটোতে (ইটিভি ভারত)

কী অসাধারণ কাজ করেন সুরঞ্জন কর্মকার ?

টোটোতে যাত্রী উঠলেই তাঁদেরকে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন করেন ৷ আর উত্তর দিতে পারলেই কোল্লাফতে ৷ সেই যাত্রীর সেদিনের ভাড়া মকুব করে দেন। কথায় বলে, জানার কোনও শেষ নেই ৷ সেই বিশ্বাস থেকেই এই উদ্যোগ সুরঞ্জনের ৷ আজকের দিনে দাঁড়িয়েও তাঁর কাছে স্মার্ট ফোন নেই ৷ নিজে কাজের মাঝে সময় পেলেই বসে পড়েন বইপত্র নিয়ে ৷ নিজে যেমন আহরণ করেন জ্ঞান, সেই জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে চান অন্যদের মধ্যেও ৷ তাই টোটো চালাতে চালাতে তিনি যেন হয়ে ওঠেন 'অমিতাভ বচ্চন' ৷ কিছুটা 'কেবিসি'র মতো প্রশ্ন উত্তর পর্বে মেতে ওঠেন তিনি যাত্রীদের সঙ্গে ৷ এখানে প্রশ্নের উত্তর দিলে টাকা মেলে না ঠিকই ৷ তবে ভাড়া দিতে হয় না ৷

Toto Driver like walking Google
জ্ঞানের ভান্ডার সুরঞ্জন কর্মকার (নিজস্ব ছবি)

সুরঞ্জন কর্মকার মনে করেন, এতে পারস্পরিক জ্ঞানের বিনিময় ঘটে ৷ আর তাঁর এই কাজই পেশায় টোটোচালক হয়েও তাঁকে সবার থেকে অনন্য করে তুলেছে ৷ লিলুয়ার রাস্তায় সুরঞ্জন কর্মকারের মাধ্যমে প্রতিদিন সাধারণ মানুষ জানতে পারেন সেই দিনের মাহাত্ম্য ৷ তাঁর টোটোতে উঠলে আপনাকে বিস্মিত হতে হবে । তাঁর টোটোতে যেদিন উঠবেন, দেখবেন টোটো সেজে উঠেছে ওই দিনের বিশেষত্বে। যা দেখে রীতিমতো অবাক হন যাত্রীরাও ।

Toto Driver like walking Google
সংগ্রহে রয়েছে অজস্ব বিশেষ ব্যক্তিদের ছবি (নিজস্ব ছবি)

সাদামাটা জীবন কাটান টোটো চালক

লিলুয়া মীরপাড়ার এক চিলতে ঘরে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সুরঞ্জনের বাস ৷ নিতান্ত সাদামাটা জীবন। দিন আনি দিন খাইয়ের জীবনে অর্থের অভাবকে ভুলিয়ে রেখে মানুষকে নতুন কিছু জানানোর নেশায় বিভোর হয়ে আছেন এই টোটো চালক ৷ নেহাতই ছাপোষা মানুষটি আজ অসাধারণ হয়ে উঠেছেন তাঁর নিজস্ব প্রতিভায় । মীরপাড়া অঞ্চলে লোকে তাঁকে এক নামে চিনলেও অনেকে তাঁকে ডাকেন 'গুগল' বলে । তাঁর চিন্তাধারার বিশেষত্ব তাঁকে আলাদা করে দিয়েছে একই পেশায় থাকা অন্যান্য টোটোচালকদের থেকে ।

মীরপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং সুরঞ্জন কর্মকারের টোটোর নিত্যযাত্রী সোনালী চক্রবর্তী বলেন, "সুরঞ্জনবাবুকে জীবনে কখনও অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করতে দেখিনি। কিন্তু তিনি নিজেই একটা আস্ত গুগল । যে কোনও তথ্য কেউ খুঁজলে তাঁর কাছে পাবেন, তাও আবার লিখিত ।"

Toto Driver like walking Google
ছবিগুলো টোটোতে সাজিয়ে ঘোরেন তিনি (নিজস্ব ছবি)

সুরঞ্জনের কাজে গর্বিত সহকর্মীরা

চকপাড়ার টোটো স্ট্যান্ডে তাঁরই সহকর্মী রোহিত সিংয়ের কথায়, "সুরঞ্জনকে সবাই ভালোবাসেন । তাঁর জন্য অন্য টোটোচালকরাও অনেক কিছু জানতে পারেন ।" আর এক টোটোচালক রবি বলেন, "দীর্ঘ 8 বছর ধরে আমি সুরঞ্জনকে চিনি । এলাকায় তিনি খুবই পরিচিত । তাঁর এই প্রতিভার জন্য আমরাও গর্ব অনুভব করি ।"

মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে ৷ এই সময় পরীক্ষার্থীদের বিনামূল্যে স্কুলে পৌঁছে দেন সুরঞ্জন কর্মকার ৷ পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের জন্য টোটোতে রেখেছেন পেন্সিল থেকে লজেন্স । তাদেরকে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় শুভকামনা জানাতে ভোলেন না তিনি । একই কাজ করেন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ও ৷ এমনকি বিশেষ দিন যেমন-নারী দিবসে মহিলাদের ও প্রবীণ দিবসে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের থেকে কোনওরকম টাকা নেন না এই টোটো চালক ৷

Toto Driver like walking Google
তথ্য বিতরণের লক্ষ্যে এই কাজ করেন সুরঞ্জন কর্মকার (নিজস্ব ছবি)

বইমেলার সঙ্গে যুক্ত টোটো চালক

টোটো চালানোর বাইরে তিনি লিলুয়া অঞ্চলের বহু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত রয়েছেন । লিলুয়া বইমেলায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি ৷

স্থানীয় বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দাস রাতুলের কথায়, "সুরঞ্জনকাকুর কাজ আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় ৷ আমরা সবাই শিক্ষিত, কিন্তু আমাদের মধ্যে খুব কম জনই আছেন যারা শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে পারেন । শিক্ষা আমাদের জন্য সুখের মতো । প্রতিদিন কী হচ্ছে, কাল কী বিশেষ দিন আছে, এটা সুরঞ্জন কাকু প্রতিদিন সকালে বলে থাকেন যাত্রীদের । আমরা সবাই জানি প্রতিদিনের এই আপডেটটা খুব গুরুত্বপূর্ণ । এই এলাকায় বাসিন্দাদের কাছে সুরঞ্জনকাকু খুব জনপ্রিয় ৷ কারণ এর আগে এমন উচ্চস্তরের টোটো চালক কেউ দেখেনি । তিনি জ্ঞানের প্রচার করেন এবং ছড়িয়ে দেন । যখন শিক্ষার্থীরা টোটোতে ওঠে, তখন তিনি তাদের প্রশ্ন করেন । সাধারণ জ্ঞানের আলোচনাও টোটোর মধ্যেই হয় ।"

Toto Driver like walking Google
লোকেদের শিক্ষিত করে তোলেন তিনি (নিজস্ব ছবি)

তিনি বলেন, "সুরঞ্জন কাকু বইমেলার সঙ্গে যুক্ত থাকেন ৷ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ৷ আজকের পৃথিবীতে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না যদি এমন ভালো মানুষ থাকেন, তাহলে সমাজ আজ অনেক এগিয়ে যাবে ।"

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য টোটোয় বিশেষ ব্যবস্থা

টোটো চালক সুরঞ্জন কর্মকারের অবশ্য বক্তব্য, "আমার এই কাজটা করতে ভালো লাগে ৷ তাই আমি এটা করি । অনেকদিন হয়ে গিয়েছে আমি এই কাজটা করছি । আমি 9 বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছি । তার সঙ্গে মানুষকে জ্ঞান বিতরণ করি ৷ আমি চাই সবাই জানুক আমাদের দেশকে । তাই যে কোনও বিশেষ দিনে, যেমন ভগত সিংয়ের জন্মদিনে তাঁর বিষয়ে তথ্য জানি নিজে ৷ সেটা লোকেদেরও জানাই । "

তাঁর কথায়, "আমি কিছু বিশেষ দিনে, যেমন 8 মার্চ মহিলা যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিই না । 14 নভেম্বর আমি ছোটদের ভাড়া ছাড়া টোটোয় সফর করাই । আমি 60 বা 70 বছরের বেশিদের কাছ থেকে এমনিতেই ভাড়া নিই না । আমি পরীক্ষার্থীদের বিশেষ দিনে স্কুলে নিয়ে যাই, তাদেরকে বিনামূল্যে খাবার দিই এবং সুযোগ-সুবিধা দিই, এটাই আমার কাজ । আগে অনেকে এসব নিয়ে অনেক তামাশা করতো ৷ এখন একেবারেই কমে গিয়েছে সমালোচনা ।"

Toto Driver like walking Google
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেন না ভাড়া (নিজস্ব ছবি)

পড়ুয়াদের কথা বলতে বলতেই তিনি ফিরে যান নিজের স্কুল-জীবনের স্মৃতিতে ৷ সুরঞ্জন বলেন, "আমি যখন ছাত্র ছিলাম আমি প্রতিটি ব্যক্তির জন্ম ও মৃত্যুর সম্পর্কে পড়তাম । আমি এটা লিখে রাখতাম এবং কিছু শিখতাম । আমি স্কুলে যাওয়ার আগেই এটা শিখতাম। আজকের বাচ্চারা যাতে কিছু শিখতে পারে ৷ তাই টোটতে বিভিন্ন ছবি তাঁদের সম্পর্কে তথ্য নিয়ে ঘুরি ৷ যাতে এখনকার প্রজন্ম ওইসব ব্যক্তিদের ভুলে না যায় । আমরা অনেক কিছু ভুলে গিয়েছি। সেটা যেন না হয় সেই চেষ্টাই করি ৷ আমি বেশি পড়াশোনা করিনি । আমি যখন পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছিলাম, তখন আমি একটি কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলাম । যদিও সেটা নিয়ে বিশেষ কিছু আর করা হয়নি ।"

লিলুয়া, 16 ফেব্রুয়ারি: যেন চলমান গুগল ! এই চালকের টোটোয় উঠে প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলেই মেলে বিনামূল্যে সফরের সুযোগ ৷ শুধু তাই নয়, টোটোতে চড়লে জানা যায় প্রতিটি দিনের মাহাত্ম্য। কারণ তিনি দিন অনুযায়ী টোটোতে বিভিন্ন মনীষী থেকে শুরু করে সমাজের নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখা বিশেষ ব্যক্তিদের ছবি রাখেন ৷ আর সেই সংক্রান্ত প্রশ্ন করেন যাত্রীদের ৷

ইনি টোটো চালক সুরঞ্জন কর্মকার ৷ আগে কাজ করতেন একটি ফটো ল্যাবে ৷ সেই কাজটা চলে যাওয়ার পর এখন রুজি রুটির জন্য টোটো চালান ৷ হাওড়ার লিলুয়ায় চকপাড়া টোটো স্ট্যান্ডে গেলেই দেখা মিলবে সুরঞ্জনের ৷ কিন্তু তিনি কোনও সাধারণ টোটো চালক নন। তাঁর কাজ তাঁকে অসাধারণ করে তুলেছে ৷

যাত্রীরা সঠিক উত্তর দিলেই বিনামূল্যে সফরের সুযোগ টোটোতে (ইটিভি ভারত)

কী অসাধারণ কাজ করেন সুরঞ্জন কর্মকার ?

টোটোতে যাত্রী উঠলেই তাঁদেরকে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন করেন ৷ আর উত্তর দিতে পারলেই কোল্লাফতে ৷ সেই যাত্রীর সেদিনের ভাড়া মকুব করে দেন। কথায় বলে, জানার কোনও শেষ নেই ৷ সেই বিশ্বাস থেকেই এই উদ্যোগ সুরঞ্জনের ৷ আজকের দিনে দাঁড়িয়েও তাঁর কাছে স্মার্ট ফোন নেই ৷ নিজে কাজের মাঝে সময় পেলেই বসে পড়েন বইপত্র নিয়ে ৷ নিজে যেমন আহরণ করেন জ্ঞান, সেই জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে চান অন্যদের মধ্যেও ৷ তাই টোটো চালাতে চালাতে তিনি যেন হয়ে ওঠেন 'অমিতাভ বচ্চন' ৷ কিছুটা 'কেবিসি'র মতো প্রশ্ন উত্তর পর্বে মেতে ওঠেন তিনি যাত্রীদের সঙ্গে ৷ এখানে প্রশ্নের উত্তর দিলে টাকা মেলে না ঠিকই ৷ তবে ভাড়া দিতে হয় না ৷

Toto Driver like walking Google
জ্ঞানের ভান্ডার সুরঞ্জন কর্মকার (নিজস্ব ছবি)

সুরঞ্জন কর্মকার মনে করেন, এতে পারস্পরিক জ্ঞানের বিনিময় ঘটে ৷ আর তাঁর এই কাজই পেশায় টোটোচালক হয়েও তাঁকে সবার থেকে অনন্য করে তুলেছে ৷ লিলুয়ার রাস্তায় সুরঞ্জন কর্মকারের মাধ্যমে প্রতিদিন সাধারণ মানুষ জানতে পারেন সেই দিনের মাহাত্ম্য ৷ তাঁর টোটোতে উঠলে আপনাকে বিস্মিত হতে হবে । তাঁর টোটোতে যেদিন উঠবেন, দেখবেন টোটো সেজে উঠেছে ওই দিনের বিশেষত্বে। যা দেখে রীতিমতো অবাক হন যাত্রীরাও ।

Toto Driver like walking Google
সংগ্রহে রয়েছে অজস্ব বিশেষ ব্যক্তিদের ছবি (নিজস্ব ছবি)

সাদামাটা জীবন কাটান টোটো চালক

লিলুয়া মীরপাড়ার এক চিলতে ঘরে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সুরঞ্জনের বাস ৷ নিতান্ত সাদামাটা জীবন। দিন আনি দিন খাইয়ের জীবনে অর্থের অভাবকে ভুলিয়ে রেখে মানুষকে নতুন কিছু জানানোর নেশায় বিভোর হয়ে আছেন এই টোটো চালক ৷ নেহাতই ছাপোষা মানুষটি আজ অসাধারণ হয়ে উঠেছেন তাঁর নিজস্ব প্রতিভায় । মীরপাড়া অঞ্চলে লোকে তাঁকে এক নামে চিনলেও অনেকে তাঁকে ডাকেন 'গুগল' বলে । তাঁর চিন্তাধারার বিশেষত্ব তাঁকে আলাদা করে দিয়েছে একই পেশায় থাকা অন্যান্য টোটোচালকদের থেকে ।

মীরপাড়া এলাকার বাসিন্দা এবং সুরঞ্জন কর্মকারের টোটোর নিত্যযাত্রী সোনালী চক্রবর্তী বলেন, "সুরঞ্জনবাবুকে জীবনে কখনও অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করতে দেখিনি। কিন্তু তিনি নিজেই একটা আস্ত গুগল । যে কোনও তথ্য কেউ খুঁজলে তাঁর কাছে পাবেন, তাও আবার লিখিত ।"

Toto Driver like walking Google
ছবিগুলো টোটোতে সাজিয়ে ঘোরেন তিনি (নিজস্ব ছবি)

সুরঞ্জনের কাজে গর্বিত সহকর্মীরা

চকপাড়ার টোটো স্ট্যান্ডে তাঁরই সহকর্মী রোহিত সিংয়ের কথায়, "সুরঞ্জনকে সবাই ভালোবাসেন । তাঁর জন্য অন্য টোটোচালকরাও অনেক কিছু জানতে পারেন ।" আর এক টোটোচালক রবি বলেন, "দীর্ঘ 8 বছর ধরে আমি সুরঞ্জনকে চিনি । এলাকায় তিনি খুবই পরিচিত । তাঁর এই প্রতিভার জন্য আমরাও গর্ব অনুভব করি ।"

মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে ৷ এই সময় পরীক্ষার্থীদের বিনামূল্যে স্কুলে পৌঁছে দেন সুরঞ্জন কর্মকার ৷ পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের জন্য টোটোতে রেখেছেন পেন্সিল থেকে লজেন্স । তাদেরকে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় শুভকামনা জানাতে ভোলেন না তিনি । একই কাজ করেন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ও ৷ এমনকি বিশেষ দিন যেমন-নারী দিবসে মহিলাদের ও প্রবীণ দিবসে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের থেকে কোনওরকম টাকা নেন না এই টোটো চালক ৷

Toto Driver like walking Google
তথ্য বিতরণের লক্ষ্যে এই কাজ করেন সুরঞ্জন কর্মকার (নিজস্ব ছবি)

বইমেলার সঙ্গে যুক্ত টোটো চালক

টোটো চালানোর বাইরে তিনি লিলুয়া অঞ্চলের বহু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত রয়েছেন । লিলুয়া বইমেলায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি ৷

স্থানীয় বাসিন্দা প্রসেনজিৎ দাস রাতুলের কথায়, "সুরঞ্জনকাকুর কাজ আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় ৷ আমরা সবাই শিক্ষিত, কিন্তু আমাদের মধ্যে খুব কম জনই আছেন যারা শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে পারেন । শিক্ষা আমাদের জন্য সুখের মতো । প্রতিদিন কী হচ্ছে, কাল কী বিশেষ দিন আছে, এটা সুরঞ্জন কাকু প্রতিদিন সকালে বলে থাকেন যাত্রীদের । আমরা সবাই জানি প্রতিদিনের এই আপডেটটা খুব গুরুত্বপূর্ণ । এই এলাকায় বাসিন্দাদের কাছে সুরঞ্জনকাকু খুব জনপ্রিয় ৷ কারণ এর আগে এমন উচ্চস্তরের টোটো চালক কেউ দেখেনি । তিনি জ্ঞানের প্রচার করেন এবং ছড়িয়ে দেন । যখন শিক্ষার্থীরা টোটোতে ওঠে, তখন তিনি তাদের প্রশ্ন করেন । সাধারণ জ্ঞানের আলোচনাও টোটোর মধ্যেই হয় ।"

Toto Driver like walking Google
লোকেদের শিক্ষিত করে তোলেন তিনি (নিজস্ব ছবি)

তিনি বলেন, "সুরঞ্জন কাকু বইমেলার সঙ্গে যুক্ত থাকেন ৷ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ৷ আজকের পৃথিবীতে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না যদি এমন ভালো মানুষ থাকেন, তাহলে সমাজ আজ অনেক এগিয়ে যাবে ।"

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য টোটোয় বিশেষ ব্যবস্থা

টোটো চালক সুরঞ্জন কর্মকারের অবশ্য বক্তব্য, "আমার এই কাজটা করতে ভালো লাগে ৷ তাই আমি এটা করি । অনেকদিন হয়ে গিয়েছে আমি এই কাজটা করছি । আমি 9 বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছি । তার সঙ্গে মানুষকে জ্ঞান বিতরণ করি ৷ আমি চাই সবাই জানুক আমাদের দেশকে । তাই যে কোনও বিশেষ দিনে, যেমন ভগত সিংয়ের জন্মদিনে তাঁর বিষয়ে তথ্য জানি নিজে ৷ সেটা লোকেদেরও জানাই । "

তাঁর কথায়, "আমি কিছু বিশেষ দিনে, যেমন 8 মার্চ মহিলা যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিই না । 14 নভেম্বর আমি ছোটদের ভাড়া ছাড়া টোটোয় সফর করাই । আমি 60 বা 70 বছরের বেশিদের কাছ থেকে এমনিতেই ভাড়া নিই না । আমি পরীক্ষার্থীদের বিশেষ দিনে স্কুলে নিয়ে যাই, তাদেরকে বিনামূল্যে খাবার দিই এবং সুযোগ-সুবিধা দিই, এটাই আমার কাজ । আগে অনেকে এসব নিয়ে অনেক তামাশা করতো ৷ এখন একেবারেই কমে গিয়েছে সমালোচনা ।"

Toto Driver like walking Google
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেন না ভাড়া (নিজস্ব ছবি)

পড়ুয়াদের কথা বলতে বলতেই তিনি ফিরে যান নিজের স্কুল-জীবনের স্মৃতিতে ৷ সুরঞ্জন বলেন, "আমি যখন ছাত্র ছিলাম আমি প্রতিটি ব্যক্তির জন্ম ও মৃত্যুর সম্পর্কে পড়তাম । আমি এটা লিখে রাখতাম এবং কিছু শিখতাম । আমি স্কুলে যাওয়ার আগেই এটা শিখতাম। আজকের বাচ্চারা যাতে কিছু শিখতে পারে ৷ তাই টোটতে বিভিন্ন ছবি তাঁদের সম্পর্কে তথ্য নিয়ে ঘুরি ৷ যাতে এখনকার প্রজন্ম ওইসব ব্যক্তিদের ভুলে না যায় । আমরা অনেক কিছু ভুলে গিয়েছি। সেটা যেন না হয় সেই চেষ্টাই করি ৷ আমি বেশি পড়াশোনা করিনি । আমি যখন পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছিলাম, তখন আমি একটি কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলাম । যদিও সেটা নিয়ে বিশেষ কিছু আর করা হয়নি ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.