রিষড়া, 27 জুন: পুরসভার সঙ্গে মিলে হকার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ ৷ তার কবলে এবার 60 বছরের বৃদ্ধার শেষ সম্বল দোকানটুকু ৷ গত 40 বছর ধরে রিষড়া স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের গায়ে লাগানো ফুটপাতে চায়ের দোকান চালান নয়নতারা মণ্ডল ৷
তাঁর বাড়ি কানাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বারুজীবীতে । 18 বছর বয়সে বিধবা হয়েছেন তিনি ৷ টিবি রোগে মৃত্যু হয় তাঁর স্বামীর । এই ঘটনায় আচমকা নয়নতারা মণ্ডলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে ৷ এক ছেলে মেয়ে নিয়ে বিপদে পড়ে অগত্যা তিনি ব্যবসা করবেন ঠিক করেন ৷ এরপরেই রিষড়া স্টেশনে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান দেন তিনি । সেখান থেকেই বর্তমানে পরিবারে চারজন সদস্যের পেট চালান বৃদ্ধা ।
কাঁদতে কাঁদতে নয়নতারা মণ্ডল বলেন, "এই দোকান থেকেই আমার সংসার চলে । কিন্তু সরকারি তরফে দোকান ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছে । আগামিদিনে কীভাবে সংসার চালাব বুঝতে পারছি না । এই ব্যবসা করেই নাতিদের পড়াশোনা করাই আমি । এরপর না খেতে পেয়ে মরতে হবে ৷ আপনারা কিছু করুন আমার জন্য ৷ কোথায় যাব আমি ৷"
এই দোকানের আয় থেকেই ছেলে ও মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন নয়নতারা । তবে তাতেও তাঁর কাজ করা বন্ধ হয়নি ৷ একমাত্র রোজগেরে ছেলে সেও সংসার ছেড়ে চলে যায় । এরপর দুই নাতি বউমাকে আগলে ধরেন বৃদ্ধা । চায়ের দোকান চালিয়ে নাতিদের পড়াশোনা করাচ্ছেন তিনি ৷ উচ্ছেদ অভিযানে ভাঙা পড়তে চলেছে তাঁর সেই দোকানই ৷
বেআইনি দখলদারি মুক্ত করতে সোমবার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এরপরই ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ ৷ সরকারি জমিতে যে সমস্ত অবৈধ এবং অস্থায়ী দোকান ও ঘর রয়েছে তা উচ্ছেদ শুরু করেছে রিষড়া পুরসভা ।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে মাইকিং করা হয় । এরপর রিষড়া থানার পুলিশের সহায়তায় রিষড়া স্টেশন চত্ত্বরের ফুটপাতের অবৈধ দোকান খালি করে দেয় পুরসভা । স্থায়ী দোকান করে যাঁরা ব্যবসা করছিল তাঁদের সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে । দোকান সরিয়ে না নিলে পুরসভা জেসিবি দিয়ে ভেঙে সরিয়ে দেবে বলে নির্দেশ দিয়েছে ।
এ দিন রিষড়া পুরসভার রাস্তার উপর চলে আসা অস্থায়ী ছাউনি প্লাস্টিকের শেড খুলে ফেলছেন পুরকর্মীরা । রিষড়া মৈত্রী পথ, স্টেশন রোড, আর বি সি রোড, এন এস রোড এলাকায় চলে আজকের উচ্ছেদ অভিযান । রিষড়া পৌরসভার সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মানস চক্রবর্তী বলেন, "সকাল থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে । অস্থায়ী দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে । আগামী সাতদিন সময় দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের । দোকান না সরিয়ে নিয়ে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হবে । সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে ।"