জলপাইগুড়ি, 18 ফেব্রুয়ারি: নিলাম কেন্দ্রে যদি চা না আসে, তাহলে সেখানে চায়ের নিলাম হবে কীভাবে ? জলপাইগুড়ির চা নিলাম কেন্দ্র নিয়ে এমনই প্রশ্ন উঠেছে ৷ জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্তকুমার রায়ের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক হয় ৷ সেখানেই এই বিষয়টি উঠে আসে ৷
জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে আছে 2015 সাল থেকে ৷ নিলাম কেন্দ্র খোলার বিষয়ে অনেক তদ্বির করা হলেও ফলপ্রসূ হয়নি । জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায় উদ্যোগ নিয়েছেন এবার । কীভাবে চা নিলাম কেন্দ্রটি চালু করা যায়, তার উত্তর খুঁজতেই দিল্লির শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রকের দফতর থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠক হয় ।

শিলিগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের প্রাক্তন সহ-সভাপতি কমল তিওয়ারি বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্র চালু করার বিষয়ে আলোচনা হয় । আমি জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম । চা নিলাম কেন্দ্রটি চালু করার অনেক চেষ্টা করেছি । আমি একটা সময় নিলামে 2 শতাংশ ছাড়ও দিয়েছিলাম । কিন্তু চা না আসার জন্য আমরা নিলাম কেন্দ্র চালু রাখতে পারিনি ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘নিলাম কেন্দ্র এত তাড়াতাড়ি চালু করা সম্ভব নয় । চা নিলাম কেন্দ্রে চা না এলে কীভাবে চা নিলাম হবে । চা পর্ষদ আগে ঠিক করে দিক জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে চা দিতে হবে । জলপাইগুড়ির ব্যবসায়ীরাই কেউ চা দিতে চায় না । নিলাম কেন্দ্রে 10 শতাংশ চা দিতে হবে, এটা পর্ষদ নির্ধারিত করে দিক ৷ তাহলেই জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্র চালু হতে পারে ।’’
কমল তিওয়ারির দাবি, ‘‘সবাই চালুর বিষয়ে বড় বড় কথা বলেন ৷ কিন্তু চা কেউ দেন না । চা কে দেবে, সেটা আগে দেখতে হবে ৷ একমাত্র চা পর্ষদই পারে জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রে চা দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে ।’’

জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্তকুমার রায় বলেন, ‘‘চা শিল্পকে চাঙ্গা করার জন্য আমি একটা বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছিলাম । জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্র খোলা নিয়ে যারা বক্তা ছিল, তাদের প্রস্তাব ও সমস্যার কথাগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে । চা শিল্পকে কীভাবে ভালো করা যায়, তা নিয়েই এগোচ্ছি । চা নিলাম কেন্দ্র নিয়ে যাঁরা বক্তা ছিলেন, তাঁরা অনেকগুলো পয়েন্ট দিয়েছেন । সেই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে ।’’
বিজেপির এই সাংসদ আরও বলেন, ‘‘সরকারি নিয়মের বাইরে কিছুই করা যাবে না । চা নিলাম কেন্দ্র নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা আছে । তা ছাড়া উত্তরের চা বাগানের অনেকগুলো সমস্যা আছে । শ্রমিকদের মজুরি-সহ চা শ্রমিকরা কী কী সুযোগ সুবিধা পেতে পারেন, তা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে । প্রফিডেন্ড ফান্ডের বিষয়গুলো নিয়েও বলা হয়েছে ।’’
জয়ন্ত রায় আরও বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার চা বাগান নিয়ে কী কী করতে চায়, সেই বিষয়ে শ্রমিকদের জানানো হবে । কেন্দ্র কী কী করেছে, সেটাও জানানো হবে ৷ শ্রমিকরা যাতে তাদের প্রাপ্য পাওনাগন্ডা পেতে পারে, সেই বিষয়ে রাজ্য সরকারকে চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে সচেতেনতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে ।’’

জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রকের পক্ষ ভার্চুয়ালি বৈঠক ডাকা হয় । ভারতীয় চা পর্ষদ নিলাম কেন্দ্র খোলার বিষয়ে রাজি থাকলে কিছু সমস্যার কথা উঠে আসে । বৈঠকে বলা হয়েছে আগামী 15 মার্চে জলপাইগুড়ি নিলাম কেন্দ্র থেকে একটা মক অকশন হবে । 30 মার্চের মধ্যে চা পর্ষদ জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের পরিকাঠামো তৈরি করে দেবে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘চায়ের বিক্রি কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হল । আমরা বলেছি জলপাইগুড়ি সারা ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তর উৎপাদক জেলা । ফলে জলপাইগুড়ি থেকে চায়ের নিলাম হলে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হবে ।’’
জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের সহ-সভাপতি পুরজিৎ বকসি গুপ্ত বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রটি চালু বিষয়ে আজ সদর্থক আলোচনা হয়েছে । আশা করি খুব তাড়াতাড়ি একটা ভালো খবর আমরা পাব । চা পর্ষদ থেকে পরিকাঠামো ঠিক করে দেওয়া হবে । এর মাঝে আরও একটি বৈঠক হবে । ভার্চুয়ালি বৈঠকে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রকের আধিকারিক, ভারতীয় চা পর্ষদের আধিকারিক-সহ সমস্ত স্টেক হোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন ।’’