কলকাতা, 28 জানুয়ারি: ছেলে সোমনাথ দাস কানের দুল বিক্রি করে টাকা দিয়ে প্রকাশ করেছিলেন 'সময় তোমাকে' নামে একটি পত্রিকা। কঠিন অসুখে তার মৃত্যুর হয় মাত্র 36 বছর বয়সে। ছেলের প্রকাশিত সেই পত্রিকা আজও চালিয়ে যাচ্ছেন মা শংকরী দাস। লেখা থেকে শুরু করে প্রকাশ করা, এমনকী নিজে হাতে সেই পত্রিকা বিক্রিও করেন সন্তান স্নেহে। বইমেলায় লিটিল ম্যাগাজিন স্টলে দেড় যুগ পূর্ণ হলো তার এই অসম লড়াইয়ের। নতুন প্রজন্মর প্রতি তাঁর বার্তা, "ভালো মানুষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে একটু বইয়ের পাতায় চোখ দেওয়ার।"
মেধাবী ছেলে প্রকাশ করেছিলেন 'সময় তোমাকে' নামে পত্রিকা। তাঁর মৃত্যুর পর সেই পত্রিকাই যেন ছেলে হারানো মায়ের কাছে নতুন সন্তান হয়ে উঠেছে। শংকরী দাসের কথায়, "সেই থেকে আমি জড়িয়ে এই পত্রিকার সঙ্গে। ওটা আমার আরও একটা সোমনাথ। পত্রিকা গুলো যখন হাতে করে নিয়ে আসি তখন মনে হয় আমার সোমনাথকে নিয়ে চলছি। আমার আরও এক ছেলে এই পত্রিকা। মাতৃ র্ভে সন্তান থাকার যে কষ্ট একটা পত্রিকা প্রকাশও সেই কষ্ট। প্রকাশের পর মানুষ পড়ে যখন ভালো বলে তখন মা হিসেবে আনন্দিত হই।"
বাড়িতে আরও এক ছেলে বিশেষভাবে সক্ষম। স্বামী বয়সের ভারে কর্ম ক্ষমতা হারিয়েছেন। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার। এখনও কাজ করে দু'মুঠো ভাত জোগাড় করতে হয় তাঁকেই। এই পরিস্থিতিতে এই পথচলা কি এতটাই সহজ তাঁর কাছে ? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "আমি যেখানে কাজ করি সেখানে পুজো উপলক্ষ্যে যেটুকু টাকা পাই অতিরিক্ত সেই টাকা ছাপাখানায় দিয়ে আসি। তারপর বইমেলায় বিক্রির পর যেটুকু উপার্জন হয় সেটা ছাপাখানায় দিয়ে আসি। এরপরও বাকি কিছু থাকলে প্রতিমাসে 500, 200 টাকা করে দিয়ে পত্রিকা প্রকাশের টাকা মেটাই। মনের তৃপ্তির জন্যই এই লড়াই এই কর্মকাণ্ড।" মুখ ভরা হাসি বুক ভরা যন্ত্রনা নিয়েই তার নতুন প্রজন্মের কাছে আবেদন, "তোমরা মানুষ হও। তোমরা বই পড়লে অনেক আনন্দ পাবে।"
আরও পড়ুন
মানবিক বিএসএফ! কাঁটাতার পেরিয়ে ভারতীয় মা'কে দেখার সুযোগ পেল বাংলাদেশি মেয়ে
ভাঙা টালির পাঠশালায় সরকারি চাকরির হাতছানি, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আসানসোলের একদল পড়ুয়া