কলকাতা, 1 অক্টোবর: মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত । মঙ্গলবার ভোর থেকে কলকাতার নেতাজি নগর-সহ রাজ্যের 12 জায়গায় অভিযান চালাল ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি । এদিন সোদপুর, ব্যারাকপুর, আসানসোল-সহ মোট 12 জায়গায় হানা দেন এনআইএ আধিকারিকরা । সোদপুরের বাসিন্দা, মানবাধিকার কর্মী শিপ্রা চক্রবর্তীর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয় । আসানসোলে অভিজ্ঞান সরকার এবং সুদীপ্তা পালের বাড়িতে চলছে এনএইএ অভিযান ।
জানা গিয়েছে, মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত সন্দেহে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে এনআইএ ৷ মঙ্গলবার ভোরে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল এবং উত্তর 24 পরগনার পানিহাটিতে পানিহাটি পৌরসভার 31 নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পল্লীশ্রী এলাকায় একই সঙ্গে এই এনআইএ অভিযান চলে ৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে একটি মাওবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে ৷
মাওবাদী নেতা প্রশান্ত বোস গ্রেফতার হওয়ার পরে জানা গিয়েছিল, পূর্ব ভারত ছাড়াও উত্তর ভারতের চারটি জায়গা যেমন উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, পঞ্জাব ও হরিয়ানায় নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন মাওবাদীরা । যদিও সম্পূর্ণ সাহায্য আসছে পূর্ব ভারত থেকে । ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকে যেমন অস্ত্র ও অর্থ আসছে, তেমনি এই রাজ্যের বেশ কয়েকজন আর্থিকভাবে সাহায্য করছে মাওবাদীদের ৷ এই তথ্য পাওয়ার পরেই অভিযানে নামেন এনআইএ আধিকারিকরা ।
'অধিকার' সংগঠনের দুই নেত্রী
এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধিকার সংগঠনের নেত্রী সুদীপ্তা পাল ৷ পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের কুলটি থানার ডিসেরগড় গ্রামে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন সুদীপ্তা পাল ৷ তাঁর বাড়িওয়ালা জানিয়েছেন, তিন বছর ধরেই তিনি এখানে থাকেন এবং অধিকার নামের একটি সংগঠনের নেত্রী ৷ এদিন ভোরে এনআইএ এবং এসটিএফ যৌথ অভিযান চালায় ৷ সঙ্গে ছিল কুলটি থানার বিরাট পুলিশ বাহিনী ৷ প্রায় চারঘণ্টা ধরে অভিযান চলে ৷ প্রায় চারঘণ্টা ধরে অভিযান চলে ৷ সুদীপ্তা পালের বাড়ি থেকে এনআইএ সংগঠনের নেত্রীর হার্ডডিস্ক, ফোন-সহ একাধিক জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছে ৷ প্রচুর নথিও নিয়ে গিয়েছে ৷
সুদীপ্তা পালের বন্ধু শিপ্রা চক্রবর্তী ৷ আসানসোলের পাশাপাশি পানিহাটি পুরসভার অন্তর্গত 31 নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পল্লীশ্রী এলাকায় তাঁর বাড়িতে হানা দেয় এনআইএ ৷ এদিন প্রথমে ডাকাডাকি করলেও বাড়ির গেট কেউ খোলেননি ৷ পরে গেট টপকেই বাড়ির ভিতর ঢোকেন এনআইএ-র আধিকারিকেরা ৷ সুদীপ্তা পাল ও শিপ্রা চক্রবর্তী দু'জনেই পূর্ব পরিচিত বলে জানা গিয়েছে ৷ অধিকার সংগঠনের দুই সদস্য ইসিএলের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের দাবিদাওয়া আদায়ে আন্দোলন করত ৷
এনআইএ অভিযান নিয়ে কী বললেন সুদীপ্তা ?
অভিযানের পর সুদীপ্তা পাল বলেন, "আমার হার্ডডিস্ক নিয়ে গিয়েছে, যেটা আমার অত্যন্ত কাজের জিনিস ৷ শ্রমিকদের মামলার শুনানি আছে ৷ তার সমস্ত তথ্য ছিল ৷ আমি আর কোনও কাজ করতে পারব না ৷" এনআইএ-র বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, "তারা (এনআইএ) আমায় কোনও বিকল্প হার্ডডিস্ক দিয়ে যায়নি ৷ আমার ফোনটাও নিয়ে গিয়েছে, যা আমি প্রতিদিন ব্যবহার করি ৷"
মাওবাদী মামলায় এই তল্লাশি অভিযান নিয়ে সুদীপ্তা বলেন, "রাঁচিতে 2022 সালে কোনও একটি মাওবাদী কার্যকলাপের তদন্ত চালাচ্ছে এনআইএ ৷ কয়েকজন মাওবাদীকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ সেই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক নাকি আমার ঘরে তল্লাশি চালানোর জন্য এনআইএ-কে ক্ষমতা দিয়েছে ৷ সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়েই তাঁরা এসেছেন ৷ মাওবাদী সংযোগের বিষয়টি পুরো সাজানো ৷ যাঁদের আমি জানি না, কোনও দিন দেখা হয়নি ৷ এমনকী এই মামলার বিষয়েও আমি কিছু জানি না ৷ এনআইএ-র সঙ্গে এসটিএফ এসেছে ৷ আমার পুরো কাজ বন্ধ হয়ে যাবে ৷"
তাঁর পরিচিত শিপ্রা চক্রবর্তীর বাড়িতে এনআইএ হানা প্রসঙ্গে কিছু জানেন না বলেই দাবি করেন সুদীপ্তা ৷ তিনি বলেন, "আমি ওই ব্যাপারে কিছু জানি না ৷ আমি ঘুমোচ্ছিলাম ৷ মহিলাদের ক্ষেত্রে অভিযান চালাতে গেলে 6টার পর ঢুকতে হয় ৷ তাঁরা 6টার আগে ঢুকেছেন ৷ 6টার 2 মিনিট আগে হলেও কেন ঢুকবে এনআইএ ? আমি বারবার বললাম, আমি একজন মহিলা ৷ জামাকাপড় পালটে নেব ৷ সেটুকু সময়ও দেয়নি এনআইএ ৷" রাঁচির মাওবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং সাজানো বলে দাবি করেন সুদীপ্তা ৷