নৈহাটি, 11 ফেব্রুয়ারি: নৈহাটির তৃণমূল কর্মী খুনে আগেই মিলেছিল ভিন রাজ্যের যোগ ৷ সেই যোগ আরও জোরালো হল খুনের মাস্টারমাইন্ড রাজেশ সাউ উত্তরপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার হওয়ায় ৷ তাঁকে উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ ন'দিন পর মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের বিশেষ দল ৷
পুলিশ সূত্রের খবর, ফিল্মি কায়দায় উত্তরপ্রদেশের একটি খাটাল থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয় সন্তোষ যাদব খুনের মূল চক্রী রাজেশকে ৷ সেখান থেকে তাঁর আরও এক সঙ্গীকে পাকড়াও করেছে পুলিশ ৷ ধৃত রাজেশ-সহ দু'জনকে ট্রানজিট রিমান্ডে মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে এ রাজ্যে ৷ এ দিনই ধৃত দু'জনকে নিজেদের হেফাজতে নিতে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে পেশ করেছে পুলিশ ৷
![Naihati TMC Worker Murder Case](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/11-02-2025/wb-n24-03-naihatimurdercasearrestmainvictims-still-raju-10009_11022025164427_1102f_1739272467_1093.jpg)
এই বিষয়ে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেন, "উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলার ফেফনা থানা এলাকা থেকে রাজেশ সাউ-সহ তাঁর এক শাগরেদকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে ৷ সেখানকার একটি খাটালে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলেন ৷ তখনই ধরা পড়েন দু'জনে ৷ চার দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে ধৃতদের এ রাজ্যে নিয়ে আসা হয়েছে ৷ ধৃতদের জেরা করে বাকি দু'জনেরও খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা চলছে ৷"
প্রসঙ্গত, গত 31 জানুয়ারি নৈহাটির গৌরীপুর এলাকায় তৃণমূল কর্মী সন্তোষ যাদবকে টোটো থেকে নামিয়ে ইঁট দিয়ে থেঁতলে নৃশংসভাবে খুন করা হয় ৷ সেই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যে পুলিশের হাতে এসেছে ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, সেখানে দেখা গিয়েছে দু’টি বাইকে মোট ছয়জন একটি টোটোর পিছনে ধাওয়া করছেন ৷ এর ঠিক পরেই গোয়ালাপাড়া রোডে টোটোটি থামিয়ে সন্তোষকে টেনে হিঁচড়ে নামানোর পর, ইঁট দিয়ে অনবরত আঘাত করছেন দুষ্কৃতীরা ৷ এক মহিলা এগিয়ে গেলে, তাঁকেও দুষ্কৃতীদের একজন হুমকি দেন বলে অভিযোগ ৷
সেই সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরেই পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামে ৷ কিন্তু, সেই ঘটনার তদন্ত চলাকালীন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার বদল করে নবান্ন ৷ আর কমিশনার বদলির 24 ঘণ্টার মধ্যেই ব্যারাকপুর কমিশনারেটের বিশেষ দল মূল অভিযুক্ত রাজেশ সাউয়ের শ্যালক অক্ষয় গন্ডকে গ্রেফতার করে ৷
তারপর থেকে আর কোনও দুষ্কৃতীর হদিশ মিলছিল না ৷ দুষ্কৃতীদের হদিশ পেতে ব্যারাকপুর কমিশনারেট বিশেষ দল গঠন করে ৷ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা গা-ঢাকা দিয়েছিলেন ভিন রাজ্যে ৷ সেই মতো উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে তদন্তকারীদের চারটি দল পাঠানো হয় ৷ তাঁরা এই দুই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় হন্যে হয়ে খোঁজ শুরু করে মূল অভিযুক্ত-সহ বাকি দুষ্কৃতীদের ৷
তৃণমূল কর্মীকে খুনের ঘটনার ছ'দিনের মাথায় উত্তরপ্রদেশ থেকে দ্বিতীয় অভিযুক্ত রঞ্জিত সাউকে গ্রেফতার পুলিশ ৷ এর ঠিক দু'দিনের মাথায় উত্তরপ্রদেশ থেকেই গ্রেফতার হন উপেন তাঁতি এবং আকাশ সাউ ৷ মূল অভিযুক্ত রাজেশ সাউয়ের ছেলে ধৃত আকাশ ৷ তবে, বাকিরা গ্রেফতার হলেও, রাজেশের হদিশ মিলছিল না ৷ শেষমেশ পুলিশি অভিযানে উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলা থেকে ধরা পড়লেন তিনি ৷ এ নিয়ে তৃণমূল কর্মী খুনে মোট ছ'জনকে গ্রেফতার করা হল ৷ এফআইআরে নাম থাকা আরও দু'জন এখনও অধরা ৷
এদিকে, দলীয় কর্মী খুনের ঘটনার ঠিক পরেই নৈহাটির বিধায়ক সনৎ দে অভিযোগ করেছিলেন, "সন্তোষ যাদব খুনে বিহার অথবা উত্তরপ্রদেশের যোগ থাকতে পারে ৷ কারণ, প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিং মানেই বিহার কিংবা উত্তরপ্রদেশ ৷" বিধায়ক অভিযোগ করেছিলেন, খুনের ঘটনায় চার দুষ্কৃতীর বহিরাগত যোগ ছিল ৷
যদিও, অভিযোগ উড়িয়ে পালটা শাসকদলের ঘাড়েই খুনের দায় চাপিয়েছিলেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিং ৷ রাজনৈতিক এই তরজার মাঝেই তৃণমূল কর্মী খুনে মাস্টারমাইন্ড রাজেশ সাউ এবং এক সঙ্গী গ্রেফতার হলেন উত্তরপ্রদেশ থেকে ৷