পুরুলিয়া, 17 সেপ্টেম্বর: নেই রাজতন্ত্র তবে রাজা রয়েছেন। ভাদু ও বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পুরুলিয়ায় হয় 'ছাতা পরব'। আর এই দিনেই একদিনের রাজাকে দেখতে ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। এখন রাজতন্ত্র না-থাকলেও পুরুলিয়ার চাকলতোড়ে রাজ পরিবারের সদস্যরাই ছাতা উত্তোলনের সংকেত দিয়ে থাকেন।
কয়েকশো বছর ধরে বংশ পরম্পরায় চলে আসছে ঐতিহ্যবাহী 'ছাতা পরব'। অন্যান্য বছরের মতো এবছরও ছাতা পরব পালিত হল পুরুলিয়া 1 নম্বর ব্লকের চাকলতোড় গ্রামে। মঙ্গলবার বিকেলে এই ছাতা উৎসবের সূচনা করেন পঞ্চকোট রাজ বংশের সদস্য তথা চাকলতোড় রাজ পরিবারের উত্তরসূরি অমিত লাল সিং দেও। রাজ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই উৎসব দীর্ঘদিন ধরে পালিত হয়ে আসছে। ছাতা পরব উপলক্ষে বিশাল মেলা বসে ওই গ্রামে।
দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন এই ছাতা পরব দেখতে। বাংলার বিভিন্ন জেলা ছাড়াও এই মেলায় ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্রিশগড় রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন সমবেত হন। আদিবাসী নর-নারীদের কাছে এই মেলার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আদিবাসীদের কাছে চাকলতোড়ের এই ছাতা মেলা যেন মিলন মেলা। এদিন হাতের সাদা রুমাল উড়িয়ে ছাতা উত্তোলনের সংকেত দেন রাজা অমিত লাল সিং দেও। এদিন এই মেলা দেখতে প্রচুর মানুষ ভিড় করেছিলেন। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মোতায়েন ছিল প্রচুর পুলিশ।
বংশপরম্পরায় এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে মানভূমে। কথিত আছে, পঞ্চকোট রাজবংশের এক রাজা যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন। সেই সময় তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ক্রমেই দুশ্চিন্তা বাড়ছিল পরিবারের মধ্যে। সেই সময় হঠাৎই একদিন খবর আসে রাজা যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন। সেই বিজয় সংবাদ প্রজাদের মধ্যে পৌঁছে দিতেই জয়ের প্রতীক হিসাবে ছাতা তুলে বিজয় বার্তা ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপর থেকেই এই রীতি প্রচলিত হয়ে আসছে।