বসিরহাট, 2 নভেম্বর: হাড়োয়া বিধানসভার উপনির্বাচনের আগে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার তৃণমূল ৷ দলের দুই বিধায়কের উপর হামলার ঘটনার রেশ কাটতে না-কাটতে এবার 'সন্ধান চাই' পোস্টার পড়ল বসিরহাট উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তাও আবার নিজের খাসতালুক হাসনাবাদের মুরারিশা এলাকাতেই।
বিধানসভা ভোটের পর থেকে এলাকায় বিধায়কের দেখা মেলে না বলে অভিযোগ জানানো হয়েছে পোস্টারে। পোস্টারের নীচে লেখা রয়েছে, 'তৃণমূল কংগ্রেস সম্মান রক্ষা কমিটি’। যদিও এই নামে তৃণমূলের কোনও শাখা সংগঠন নেই বলে দাবি জেলা নেতৃত্বের। পোস্টারের নীচে একটি ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে। যার কোনও অস্তিত্ব অবশ্য মেলেনি। স্বভাবতই এই পোস্টার ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। কে বা কারা পোস্টার সাঁটাল তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে দলের অন্দরেই।
হাসনাবাদের মুরারিশা এলাকায় বাড়ি বিধায়ক রফিকুল ইসলামের। যেটি বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। শনিবার সকালে সেই মুরারিশা এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় বিধায়কের ছবি-সহ এই ধরনের পোস্টার পড়েছে। 'বিতর্কিত' পোস্টার পড়েছে মুরারিশা চৌমাথায় বিধায়কের অফিস-সহ তাঁর বাড়ির আশপাশেও।
পোস্টারে লেখা, "এই ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। পেশায় বসিরহাট উত্তরের বিধায়ক। আগে বিধানসভায় যেতেন লাল পোশাকে, পরবর্তীতে সবুজ পোশাকে। বিধানসভা ভোটের পর থেকে এঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।" এমনকী বিধায়কের পরিবারের কাছ থেকেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে লেখা হয়েছে পোস্টারে। আর এই পোস্টার সামনে আসতেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে শাসকদলের অন্দরেই। এর নেপথ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে বিরোধী শিবির দাবি করলেও তা মানতে নারাজ শাসক শিবির। এর পিছনে সিপিএমের হাত থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, রফিকুল ইসলাম অতীতে সিপিএমের বিধায়ক ছিলেন। 2016 সালে বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সিপিএমের টিকিটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন। পরে তিনি দল পরিবর্তন করে তৃণমূলে যোগ দেন। 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রফিকুল। বিধায়কের দলবদলের বিষয়টির কথাও উল্লেখ করা রয়েছে 'বিতর্কিত' এই পোস্টারে।
এই নিয়ে বসিরহাট উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, "এটা একটা চক্রান্ত। সামনেই দলের সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে। ভালো পদ পাওয়ার হয়তো ইচ্ছে রয়েছে অনেকের। আমার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতেই এই ধরনের নোংরামি করা হয়েছে। দল এবং প্রশাসনের উপর ভরসা রয়েছে। এই অভিসন্ধির পিছনে কারা রয়েছে, তাঁরা নিশ্চয় খুঁজে বের করবে। এটুকু বলতে পারি।" তবে, এর পিছনে দলের কেউ আছে কি না, তা নিয়ে সরাসরি কোনও জবাব দেননি বিধায়ক।
এদিকে, পোস্টার বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছেন তৃণমূলের হাসনাবাদ 2 নম্বর ব্লকের সভাপতি এক্সেন্দার গাজি। তাঁর কথায়, "পোস্টারে লাল পার্টির কথা উল্লেখ রয়েছে। একসময় উনি (রফিকুল ইসলাম) লাল পার্টির বিধায়ক ছিলেন। ওঁদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কারণে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এর পিছনে তৃণমূলের কেউ নেই বলেই আমি মনে করি।"
গত 30 অক্টোবরও বিধায়কের নিজের বুথ মুরারিশাতে দলের বিজয়া সম্মিলনীতে গরহাজির ছিলেন তৃণমূলের এই বিধায়ক। যা নিয়েও মুখ খুলেছেন দলের ব্লক সভাপতি এক্সেন্দার গাজি। তিনি বলেন, "আমার দিক থেকে কোনও ত্রুটি ছিল না বিধায়ককে সম্মান জানাতে। ওঁকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়। আমি নিজে ফোন করে এই কর্মসূচিতে থাকার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। উনি থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারপরও কেন উনি আসলেন না সেটা বলতে পারব না।"
অন্যদিকে, পোস্টার বিতর্ক নিয়ে পাল্টা শাসকদলকেই কটাক্ষ করেছেন সিপিএমের জেলা নেতা আহমেদ আলি খান। তিনি বলেন, "তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে বিধায়ক-নেতা কেউই এর থেকে ছাড় পাচ্ছে না। খুন পর্যন্ত হতে হয়েছে দলের পঞ্চায়েত প্রধান থেকে নেতাকে। আমাদের দিকে আঙুল তুলে কোনও লাভ নেই। সবাই জানে, এর নেপথ্যে রয়েছে কাটমানি এবং দুর্নীতির টাকার ভাগবাটোয়ারা।"