মেদিনীপুর, 12 জানুয়ারি: আন্দোলনে আন্দোলনে ফের উত্তপ্ত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ৷ মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দিয়ে প্রসূতি মৃত্যুতে এবার আন্দোলনে যোগ দিলেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় । রবিবার তিনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে এসে সুপারের অফিসে তালা দিয়ে চাবিটি নিয়ে নেন । তাঁর হুঁশিয়ারি, "দম থাকলে তালা খুলে দেখাক ।"
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুকে ঘিরে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছে বাম ছাত্র ও যুব সংগঠন ৷ এবার সেই আন্দোলন আরও জোরালো হল ৷ শুক্রবার রাত থেকে অবস্থান বিক্ষোভ চলে ৷ তারপর শনিবারও টানা বিক্ষোভ ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে ৷ এরপর রবিবার ডিওয়াইএফআই নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় আসেন এই আন্দোলনে সামিল হতে ।
এ দিন প্রথমে শহর জুড়ে বৃহত্তর মিছিল হয় বাম ছাত্র ও যুব সংগঠনের । সেই মিছিলে নেতৃত্ব দেন মীনাক্ষী । এরপর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সুপারের অফিসের তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভে বসে পড়েন তিনি । এই বিক্ষোভ চলে ঘণ্টাখানেক । এরপর মেদিনীপুর হাসপাতালের সামনে রাস্তায় বসে অবরোধ শুরু করেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়রা । দাহ করা হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুতুল ।
এদিন মীনাক্ষী কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে । প্রথমেই তিনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সুপারের অফিসে তালা লাগিয়ে বলেন, "দম থাকলে খুলে দেখান । যে অফিসে সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসা পাওয়া যায় না, মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দিয়ে প্রসূতি মৃত্যু ঘটায়, সেই অফিস বন্ধ থাকাই ভালো ।" এরপর রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রকে এক হাত নিয়ে মীনাক্ষী বলেন, "নির্বাচনের সময় ইলেকশন বন্ডের মাধ্যমে টাকা নিয়ে এসব জাল ওষুধ এবং বাতিল হওয়া স্যালাইনের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া হয়েছে ।"
উল্লেখ্য, গত বুধবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগে পাঁচ প্রসূতির অস্ত্রোপচার করা হয় । তাতে সুস্থ সন্তানেরও জন্ম দেন তাঁরা । কিন্তু অস্ত্রোপচারের কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই ওই পাঁচ প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে । রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং নিম্নমানের স্যালাইন ও ওষুধপত্র ব্যবহার করা হয়েছে রোগীদের ক্ষেত্রে । সেইসঙ্গে স্যালাইন বোতলে ছত্রাকও মজুত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে ।
এই বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবারই তারা হাসপাতাল সুপারকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছিলেন । সেই আবেদনের ভিত্তিতে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটিও গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । কিন্তু গত শুক্রবার ভোরে ওই পাঁচ প্রসূতির মধ্যে একজনের মৃত্যু ঘটতেই পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয় । যাতে রোগীর পরিবার কোনওরকম বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে, সেই কারণে তড়িঘড়ি হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় ।