কাকদ্বীপ, 12 ফেব্রুয়ারি: করমণ্ডল এক্সপ্রেস বিপর্যয়ের 10 মাস অতিক্রান্ত । জীবিত হোক বা মৃত, কোনও অবস্থাতেই এখনও ফেরেননি কাকদ্বীপের দুই পরিযায়ী শ্রমিক ৷ ফলে সরকারি সাহায্যও কপালে জোটেনি পরিবারের ৷ হতদরিদ্র অসহায় দুই পরিবার বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকে অবলম্বন করেছে ৷ আর পরিবারের একমাত্র রোজগেরের খবরের অপেক্ষায় চাতক পাখির মতো তাঁরা তাকিয়ে রয়েছে প্রশাসনের দিকে ৷
2023 সালের 2 জুন মাসে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে চেন্নাই পাড়ি দিয়েছিলেন কাকদ্বীপ বিধানসভার 3 নম্বর মধুসূদনপুরের বাসিন্দা সাজ্জাদ শেখ (33) ও জামালউদ্দিন শেখ (38)-সহ 10 জন । করমণ্ডল এক্সপ্রেসে ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাঁদের মধ্যে সাতজনের প্রাণ । একজন জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসেছেন । তবে এখনও নিখোঁজ দু'জন । অথচ দুর্ঘটনার পর কেটে গিয়েছে 10 মাস ৷
এই দুই পরিযায়ী শ্রমিককে হারিয়ে দিশাহারা তাঁদের পরিবার । পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটি আজও ফিরে আসেনি ৷ ফেরেনি তাঁদের মৃতদেহও ৷ ফলে মিলছে না কোনও সরকারি সাহায্য । অসহায় পরিবার দুটি এখন পথে এসে বসেছে । সাজ্জাদ শেখের পরিবারের অবস্থা আরও করুণ । ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নিতে হয়েছে তাঁদের ৷
সেই বিভীষিকার রাতের কথা মনে পড়লে এখনও চোখে ফেটে জল আসে সাজ্জাদ শেখের পরিবারের সদস্যদের ৷ সাজ্জাদ শেখের তিন ছেলে-মেয়ে ৷ এখন তারা ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাচ্ছে । কবে মিলবে সরকারি সাহায্য, কিছুই জানা নেই ৷
সাজ্জাদ শেখের স্ত্রী হাফিজা বিবি বলেন, "রাজ্যে কাজ ছিল না ৷ তাই কাজের সন্ধানে ও পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্যে চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজে গিয়েছিল আমার স্বামী । করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে আমার স্বামী । সরকারি কোনও সাহায্য মিলছে না । স্বামীর কোনও সন্ধান মিলছে না । সরকারের কাছে আমার একান্ত আবেদন, আমার স্বামী জীবিত কিংবা মৃত যাই থাকুন, তাঁকে সেই অবস্থাতেই অন্তত আমার কাছে ফিরিয়ে দিক প্রশাসন । তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে অভাব অনটনে দিন কাটছে আমাদের । পাড়ায় পাড়ায় ভিক্ষাবৃত্তি করে চলছে সংসার ।"
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও প্রকার সাহায্য মেলেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি । তাঁর কথায়, "কবে মিলবে সরকারি সাহায্য সেও বলতে পারছে না কেউই । আমরা পথে এসে বসেছি ।"
অন্যদিকে, জামাল উদ্দিন শেখের পরিবারের এক সদস্য বলেন, "রাজ্যে কাজ নেই ! সম্প্রতি রাজ্য সরকার বাজেটে যা ঘোষণা করল, তাতে রাজ্যে সেরকম কর্মসংস্থান নেই । রাজ্যের কর্মসংস্থান না থাকার কারণে ভিন্ন রাজ্যে পাড়ি দিতে হয় বহু মানুষকে ।"
আরও পড়ুন: