দুর্গাপুর, 23ফেব্রুয়ারি: ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন ৷ আচমকা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ৷ 2 বছর আগে ঝাড়গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। কোনক্রমে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। আর বড় ছেলেকে হারাতে চান না বাবা-মা। তাই ছেলের পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়েছে ৷ কাঁকসার বিদবিহারের দন্ডেশ্বর গ্রাম এমনই এক হৃদয় বিদারক ঘটনার সাক্ষী ।
দন্ডেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা দয়াময় বাউরি ৷ স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার ৷ বড় ছেলে অভিজিৎ বাউরি ৷ বয়স 30 বছর ৷ কোনও রকমে দিন মজুরি করে সংসার চালান ৷ আর পাঁচটা মা-বাবার মত ছেলেকে লেখাপড়া শেখানের স্বপ্ন ছিল ৷ সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল । কিন্তু অভিজিতের বয়স 15 বছর পার হতেই তার আচার ব্যবহারে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়। এক সময়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন অভিজিৎ । চিকিৎসার পর সাময়িক সময়ের জন্য সুস্থও হয়ে ওঠেন। খরচের ধাক্কায় বেশি দিন চিকিৎসা চালাতে পারেননি দয়াময় বাউরি ৷ চিকিৎসা না পেয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন অভিজিৎ তাই আর সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতেও পারেননি । বাড়ির লোকজন একটু চোখের আড়াল হলেই মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবক চলে যান যেখানে - সেখানে ৷
ঘটনা প্রসঙ্গেই ওই যুবকের বাবা দয়াময় বাউরি বলেন, "ছোট থেকে অভিজিৎ খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে ছিল । স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা করত। হঠাৎ তার মানসিক অসুস্থাতর লক্ষণ প্রকাশ পায় ৷ 15 বছর বয়স থেকে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। অনেক কষ্ট করে এবং খরচ করে চিকিৎসা করানো হয়েছে। তখন সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। দিনমজুরের সামান্য কাজ করে চিকিৎসা ও ওষুধের খরচ যোগানো সম্ভব হচ্ছে না আমার পক্ষে।" তিনি আরও জানান, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় প্রচারে এসে ছেলের চিকিৎসার খরচ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু ভোট মিটতেই আজ আর তাদের খোঁজ পাওয়া যায় না। পঞ্চায়েতেও জানিয়েও লাভ হয়নি।
বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গোপাল সরকার বলেন, "এরকম কোনও বিষয়ে আমার জানা ছিল না। ছিল। আমি বিষয়টি শুনলাম। ওই পরিবারের পাশে থেকে আমি যেভাবে পারব সাহায্য করব।" দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইটিভি ভারত। তিনি জানান, ""আমি বিষয়টি দেখছি। তার চিকিৎসার এবং ওষুধের খরচ কিভাবে যোগানো যায় সে ব্যাপারে আমি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। মানসিক ভারসাম্যহীনদের নিয়ে কাজ করে এমন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেব।"
আরও পডু়ন: